Main Menu

আশ্রয়প্রার্থীদের গোপনীয়তা রক্ষা: রায় দেবে জার্মান আদালত

বিদেশবার্তা২৪ ডেস্ক:
একজন আশ্রয়প্রার্থীর কোন দেশ থেকে জার্মানিতে এসেছেন, তা নিশ্চিত হতে তার ফোনের গোপনীয়তা ভঙ্গের অভিযোগে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটির রায় চলতি সপ্তাহে ঘোষণা করতে পারে আদালত।

ডেটা সুরক্ষায় বিশ্ব অগ্রদূত হিসেবে পরিচিত জার্মানিতে আশ্রয়প্রার্থীদের ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তার অধিকার কী নেই?-এমন প্রশ্ন রাখা হয়েছে আদালতের কাছে।

দেশটির লাইপসিগ শহরে অবস্থিত সর্বোচ্চ প্রশাসনিক আইন আদালত বৃহস্পতিবার মামলাটির শুনানি শুনেছেন। যেখানে বলা হচ্ছে, ২০১৯ সালে পাসপোর্ট ছাড়া একজন নারী আশ্রয়প্রার্থী (আফগান) কোন দেশ থেকে এসেছেন তা নিশ্চিত হতে তার ফোন স্ক্যান করেছে কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে আইন ভঙ্গ হয়েছে কিনা সেটি বিচার করবে আদালত।

সোসাইটি ফর সিভিল রাইটস (জিএফএফ) নামের একটি অলাভজনক আইনি সহায়তা সংস্থার সদস্য ও নারী অ্যাটর্নি লিয়া বেকমান বলেন, “আদালত একটি স্বতন্ত্র মামলার রায় দিতে যাচ্ছে। কিন্তু আমার মক্কেলের সঙ্গে যা হয়েছে, সেটা কিন্তু জার্মানিতে একটি সাধারণ চর্চায় পরিণত করে ফেলা হয়েছে।”

প্রতিক্রিয়ার ভয়ে মামলার বাদীর অনুরোধে তার নামটি গোপন রেখেছেন আইনজীবী লিয়া বেকমান। জিএফএফ-এর সহায়তা নিয়ে ২০২০ সালে নিজের ফোন স্ক্যান করার অভিযোগে জার্মানির ফেডারেল অফিস ফর মাইগ্রেশন অ্যান্ড রিফিউজিসের (বিএএমএফ) বিরুদ্ধে মামলা করেন ওই নারী আশ্রয়প্রার্থী।

২০২১ সালের জুনে বার্লিনের একটি আঞ্চলিক আদালত বাদীর পক্ষে রায় দেয়। রায়ে বলা হয়, কর্তৃপক্ষ আইন লঙ্ঘন করেছিল। আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে বিএএমএফ। এ কারণেই এখন ফেডারেল প্রশাসনিক আদালতে দেশের শীর্ষ বিচারকরা মামলাটি বিচারকাজ করছেন।

আদালতের রায় যা-ই আসুক, তা বিশ্বজুড়ে অভিবাসন কর্তৃপক্ষ বেশ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে। কারণ আশ্রয় আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এঘটনা প্রায়ই ঘটে।

লিখিত প্রশ্নের জবাবে বিএএমএফ-এর একজন মুখপাত্র ডয়চে ভেলেকে বলেন, “নিজ পরিচয় দিতে যেসব আশ্রয়প্রার্থীর তথ্য প্রমাণের ঘাটতি থাকে তাদের জাতীয়তা স্পষ্ট করা জার্মানির নিরাপত্তা এবং আশ্রয়ের সিদ্ধান্ত নির্ভুলভাবে নেয়ার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে আমরা ফোন স্ক্যান করে থাকি।”

বাদীর আইনজীবী অ্যাটর্নি বেকমান বলেন, “এখানকার বিচারকরাও যদি তাদের যুক্তিতে বার্লিন আদালতের সঙ্গে একমত হন, তাহলে বিএএমএফ-কে আর কারও সেল ফোন বিশ্লেষণ করার অনুমতি দেওয়া হবে না।”

২০১৭ সালে জার্মানির আশ্রয় আইনে সেল ফোন বিশ্লেষণ করার এখতিয়ার দেয়া হয়েছে বিএএমএফকে। সেখানে বলা হয়েছে, আশ্রয়প্রার্থীদের সেল ফোন, ল্যাপটপ এবং ট্যাবগুলো বিশ্লেষণ করা যাবে, যদি তারা তাদের নিজ পরিচয় নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কোনও বৈধ পাসপোর্ট বা আইডি কার্ড বা তথ্যপ্রমাণ দেখাতে না পারেন।

২০১৮ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে, আশ্রয়প্রার্থীদের ৪৭ হাজারেরও বেশি ডিভাইস বিশ্লেষণ করার কথা জানিয়েছে বিএএমএফ। সংস্থাটির একজন মুখপাত্র বলেন, “একটি উচ্চ-মানের এবং নিরাপদ আশ্রয় প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার জন্য এটি প্রয়োজনীয় ছিল।”

এই চর্চাটি চালু কথা আসার পর থেকেই সমালোচনা করে আসছেন জার্মান নাগিরিক সমাজ। তারা বলছেন, একটি দেশে দুই ধরনের নিয়ম ও আইন চলতে পারে না।

আদালতের মুখপাত্র কারস্টেন টেগেটফ ডয়চে ভেলেকে বলেন, “জার্মানির আশ্রয় আইনের আলোকে কর্তৃপক্ষ যা করছে তার যথেষ্ট আইনি ভিত্তি আছে কিনা সেটি ফেডারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কোর্ট দেখবে।”

২০২১ সালের শুরুর দিকে বার্লিন-ভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান জিএফএফ জার্মানির ডেটা সুরক্ষা ওয়াচডগ হিসেবে খ্যাত ফেডারেল কমিশনার ফর ডেটা প্রোটেকশন অ্যান্ড ফ্রিডম অব ইনফরমেশনকে আশ্রয়প্রার্থীদের ফোন বিশ্লেষণের বিষয়টি খতিয়ে দেখার অনুরোধ জানায়।

কারণ, আদালত ছাড়া, একমাত্র এই প্রতিষ্ঠানটির ক্ষমতা আছে বিএএমএফকে থামানোর।

কিন্তু দুই বছর পার হয়ে গেলেও ফেডারেল কমিশনার এখনও নিশ্চুপ। এ নিরবতাকে “হতাশাজনক” বলছেন অ্যাটর্নি বেকমান।

তবে সংস্থাটির মুখপাত্র ক্রিস্টোফ স্টেইন ডয়চে ভেলেকে নিশ্চিত করেছেন, “এ বিষয়ে আদালতে মামলাটি এখনও বিচারাধীন। ফলে পরবর্তীতে মামলার রায়টিকে বিবেচনায় নেয়া যেতে পারে।”

ফলে লাইপসিগের বিচারকরা কী সিদ্ধান্ত দেবেন, সেদিকেই আটকে আছে সবার দৃষ্টি।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *