Main Menu

ফ্রান্সে অভিবাসীদের ‘পেনশন’ অধিকার

বিদেশবার্তা২৪ ডেস্ক:
পেনশন আইনের চলমান সংস্কারকে ঘিরে রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলন চলছে ফ্রান্সে। তবে যেসব অভিবাসীরা ফ্রান্সের নাগরিক নন কিন্তু বৈধ রেসিডেন্ট পারমিট নিয়ে দেশটিতে আছেন, তাদের ক্ষেত্রে পেনশন আইন কীভাবে কাজ করে তা জানার চেষ্টা করেছে ইনফোমাইগ্রেন্টস।

ফরাসি প্রধানমন্ত্রী এলিজাবেথ বর্নের পেনশন আইনের সংষ্কার নিয়ে গোটা ফ্রান্সজুড়ে চলছে সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা। রাষ্ট্রপতি এমানুয়েল ম্যাক্রঁ বেশ কয়েক বছর ধরে ফরাসি পেনশন ব্যবস্থা পরিবর্তনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

নতুন আইনের মাধ্যমে সার্বজনীন অবসর বয়সসীমা ৬২ থেকে ৬৪ বছরে পরিবর্তনের চেষ্টা করছে সরকার। বারবার -+আলোচনার পর রাজনৈতিক সমঝোতায় ব্যর্থ হয়ে সংবিধানের বিশেষ ধারা প্রয়োগ করে আইনিভাবে পেনশন আইন সংস্কারের চিন্তা করছে কর্তৃপক্ষ।

অপরদিকে, সব ফরাসি শ্রমিক সংগঠন ও ট্রেড ইউনিয়ন এটির প্রতিবাদে একের পর এক ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করে আসছে। পাশাপাশি ডানপন্থি রিপাবলিকান দল ছাড়া সব বাম রাজনৈতিক দল ও কট্টর ডান দল ‘ন্যাশনাল র‍্যালি’ এই আইনের বিরোধিতায় মাঠে সরব।

আইনের সংস্কারে ফরাসি নাগরিকদের একটি বড় অংশ প্রভাবিত হলেও ফ্রান্সে অবস্থানরত বিপুল সংখ্যক অভিবাসীদের জন্যেও এটি প্রযোজ্য হবে।

ফ্রান্সের জাতীয় পরিসংখ্যান দপ্তর ইনস-এর দেয়া তথ্য মতে, ২০১৯ সালে ১৭ লাখ অভিবাসী ফ্রান্সের কর্মক্ষেত্রে চাকরিরত আছেন। যেখানে ফরাসি নাগরিকের সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৪৮ লাখ।

একজন বিদেশি তার নিজের দেশ ও ফ্রান্সের সাথে সমন্বয় করে কীভাবে পেনশন সুবিধা থেকে উপকৃত হতে পারেন সেটি নিয়ে ইনফোমাইগ্রেন্টস কথা বলেছে ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল রিসার্চের সামাজিক সুরক্ষা বিষয়ক গবেষক এবং অভিবাসন সংস্থা জিসতির স্বেচ্ছাসেবক অন্তোয়ান মাথের সঙ্গে।

ইনফোমাইগ্রেন্টস: অবসর গ্রহণের ক্ষেত্রে, একজন বিদেশী কর্মী এবং একজন ফরাসি নাগরিক কী ফ্রান্সে একই সুবিধা গ্রহন করতে পারে?

অন্তোয়ান মাথ: অবসর ভাতা বা পেনশন আইন ফরাসি সামাজিক সুরক্ষার বিরল খাতগুলোর মধ্যে একটি যেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে, বিদেশি অভিবাসী ও ফরাসি নাগরিকদের জন্য প্রায় সমান সুবিধা রাখা হয়েছে।

এক্ষত্রে শুধু একটি বৈষম্য রয়ে গেছে। সেটি হলো, অবসর ভাতা বা পেনশন গ্রহণের সময় একজন বিদেশিকে বৈধ বসবাসের প্রমাণ দেখাতে হবে।

কোনো বিদেশি ৪০ বছর ধরে ফ্রান্সে কাজ করতে পারেন কিন্তু অবসরের মুহূর্তে বৈধতা না থাকলে সেক্ষেত্রে পেনশন ভাতার সুবিধাভোগী হতে পারবেন না।

যদিও আমি শুরুতে বলেছি অবসর গ্রহণের অধিকারে একটি সমতা আছে, তার মানে এই নয় যে এটির অনুশীলনে কোনো বৈষম্য নেই। বিদেশিরা অনেক কারণে ফরাসি নাগরিকদের তুলনায় অনেক কম পেনশন ভাতা পেয়ে থাকেন।

এই পার্থক্যের কারণ কী?

অন্তোয়ান মাথ যে পার্থ্যকের কথা বলেছেন সেটির পেছনের কারণ খোঁজার চেষ্টা করেছে ইনফোমাইগ্রেন্টস।

ফ্রান্সের পেনশন পদ্ধতি মূলত একজন ব্যক্তির সমগ্র কর্মজীবনের চূড়ান্ত কার্যক্রমের ওপর ভিত্তি করে গণনা করা হয়। এখানে একজন ব্যক্তির চাকরি, সন্তান, কর্মজীবনে অসুস্থতা, খণ্ডকালিন কাজ এবং বেকারত্বকেও বিবেচনায় নেয়া হয়।

তবে এটি একজন প্রাপ্তবয়স্ক ফরাসি নাগরিকের সমগ্র জীবনকে বিবেচনায় নিলেও বিদেশিদের জন্য এই আইনে বিশেষ কিছু দিক আছে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বিদেশি অদক্ষ শ্রমিকদের ক্ষেত্রে শ্রমখাতে সব সময় একটি কাজের অনিশ্চয়তা বিরাজ করে। অনেক বিদেশি আছেন যারা অসম্পূর্ণ ও কম বেতন নিয়ে ক্যারিয়ার শেষ করেন। যার ফলে তারা পেনশনের সব সুবিধা নিতে পারেন না এবং মাসিক ভাতার ক্ষেত্রেও অনেক কম অর্থ পেয়ে থাকেন।

ফ্রান্সের শ্রমবাজারে বিদেশিদের সংখ্যা অবনমনও আরেকটি কারণ। বিদেশিদের প্রারম্ভিক বেতন কম ও বরখাস্ত হওয়ার হার অন্যান্যদের চেয়ে বেশি হয়ে থাকে।

এছাড়া বিদেশিদের নিয়োগকারী কিছু খাতে কাজের পরিবশ প্রায়শই কঠিন হয়। যা অভিবাসী কর্মীদের অসুস্থতা বা এমনকি অক্ষমতার কারণ হতে পারে। যেমন, চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে এবং কর্মজীবনের বিভিন্ন ধাপেও বৈষম্য রয়েছে।

ফ্রান্সে বিপুল সংখ্যক বিদেশি নির্মাণ খাতসহ নির্দিষ্ট কিছু সেক্টরে কাজ করেন। এসব খাতে অনেক অসাধু নিয়োগকর্তা রয়েছে। যারা বিদেশিদের বিভিন্নভাবে শোষণ করেন। অনেক অভিবাসীরা প্রায়ই তাদের অধিকার সম্পর্কে জানেন না।

বিদেশিদের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে অনেক নিয়োগকর্তারা পেনশন ট্যাক্স পরিশোধ করেন না। যার ফলে অবসর গ্রহণের সময় অভিবাসীরা অসাধু মালিকের অন্যায় সিদ্ধান্তের ভুক্তভোগী হোন।

কারণ পুরো কর্মসময় গণনার জন্য শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির বেতনের রশিদ যথেষ্ট নয়। একজন মালিক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জন্য অবসর ট্যাক্স সরকারের কাছে জমা করেছেন কীনা সেটি খতিয়ে দেখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পরিস্থিতি উত্তরণে করণীয়

একজন বিদেশি যখন ফ্রান্সে কাজ শুরু করেন তখন তার নিয়োগকর্তা সংশ্লিষ্ট ফরাসি পেনশন ফান্ডে সঠিক অর্থ দিচ্ছেন কীনা সেটি যাচাই করতে হবে। এটি করার জন্য একজন ব্যক্তিকে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করতে হবে এমন কোনো শর্ত নেই।

পুরোদমে কাজ শুরুর কয়েক বছরের মধ্যেই ফরাসি জাতীয় বার্ধক্য বীমা তহবিল (সিএনএভি) এ একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করে ফ্রান্সের বর্তমান ও পূর্বের ক্যারিয়ারের বিস্তারিত জানার সুযোগ রয়েছে।

যদি একজন ব্যক্তির মোট কর্ম বছরের মধ্যে কোনো অসঙ্গতি থাকলে সেক্ষেত্রে সিএনএভি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।

অবসরে জটিলতা এড়াতে কয়েক বছর পর পর সরকারের এই দপ্তরে নিজের ক্যারিয়ার বর্ণনার খোঁজ রাখা উচিৎ। যদি নিয়োগকর্তা কারণে সমস্যা হয় সেক্ষেত্রে অবশ্যই একজন আইনজীবীর মাধ্যমে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

একজন বিদেশি যদি তার কর্মজীবনের মাঝখানে বা শেষের দিকে ফ্রান্সে এসে চাকরি শুরু করেন তাহলে তিনি ফ্রান্সে পূর্ণ অবসর ভাতা পাওয়ার প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করেন না।

আরও পড়ুন>>ফেরিতে অভিবাসী পাচারের দায়ে ফ্রান্সে চার ব্যক্তির সাজা

তবে যে সব দেশের সঙ্গে ফ্রান্সের অবসর বা পেনশন বিষয়ক চুক্তি আছে তারা তাদের আগের চাকরির সময়কে ফ্রান্সের জাতীয় হিসেবে নথিভুক্ত করে অতিরিক্ত পেনশন নেয়ার সুযোগ রয়েছে।

ফ্রান্সের সঙ্গে বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো ছাড়াও, আইসল্যান্ড, লিচটেনস্টাইন, নরওয়ে এবং সুইজারল্যান্ডের চুক্তি রয়েছে।

ইউরোপের বাইরের দেশগুলোর মধ্যে আছে: আলজেরিয়া, অ্যান্ডোরা, আর্জেন্টিনা, বেনিন, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, ব্রাজিল, ক্যামেরুন, কানাডা, কেপ ভার্দে, চিলি, কঙ্গো, দক্ষিণ কোরিয়া, আইভরি কোস্ট, যুক্তরাষ্ট্র, গ্যাবন, চ্যানেল দ্বীপপুঞ্জ, ভারত, ইসরায়েল, জাপান, কসোভো, মেসেডোনিয়া, মালি, মরক্কো, মৌরিতানিয়া, মোনাকো, মন্টিনিগ্রো, নাইজার, ফিলিপাইন, কানাডার কুইবেক প্রদেশ, সান মারিনো, সেনেগাল, সার্বিয়া, টোগো, টিউনিশিয়া, তুরস্ক ও উরুগুয়ে।

এই দেশগুলো থেকে ফ্রান্সে আসা ব্যক্তিরা তাদের নিজ দেশ কাজ করার সময়কাল নথিভুক্ত করে ফ্রান্সের পেনশনে আর্থিক ক্ষতি কমাতে পারবেন।

আসপা ভাতা

যেসব বিদেশিরা খুব অল্প সময় ফ্রান্সে কাজ করে অবসরে যান তারা পূর্ণ অবসর ভাতা না পেলেও পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে আসপা নামের একটি সংহতি ভাতা থেকে উপকৃত হওয়ার সুযোগ রয়েছে।

তবে এই ভাতা থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য, বিদেশিদের অবশ্যই একটি ১০ বছর মেয়াদি বৈধ পারমিটের প্রমাণ দিতে হবে।

ফ্রান্সে শরণার্থী মর্যাদা ও সহায়ক সুরক্ষা পাওয়া সব ব্যক্তি এবং ১০ বছরের বেশি সময় ধরে ফ্রান্সে বসবাসকারীরা কোনো শর্ত ছাড়াই ‘আসপা’ ভাতা পাওয়ার জন্য অন্তর্ভুক্ত হবেন। পাশাপাশি আলজেরিয়া, মরক্কো, মালি, টোগো, গ্যাবন এবং বেনিনের নাগরিকরাও বিশেষ চুক্তির কারণে এই সুবিধা থেকে উপকৃত হতে পারবেন।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *