Main Menu

সিরীয় অভিবাসীকে গুলি: গ্রিসকে ৮০ হাজার ইউরো জরিমানা

সিরীয় অভিবাসীকে গুলি: গ্রিসকে ৮০ হাজার ইউরো জরিমানা।
এক দশক আগে মানব পাচারকারীদের নৌকা তাড়া করতে গিয়ে গ্রিক উপকূলরক্ষীদের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন সিরিয়া থেকে আসা এক অভিবাসনপ্রত্যাশী৷ ওই ঘটনায় গ্রিসের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে ইউরোপের মানবাধিকার বিষয়ক আদালত৷

গুলিবিদ্ধ ওই যুবক ঘটনার এক বছরেরও বেশি সময় পর অর্থাৎ ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে মারা যান৷ বেলাল টেলো নামের ওই অভিবাসী মৃত্যুকালে স্ত্রী ও দুই সন্তান রেখে গেছেন৷

ফ্রান্সের স্ট্রাসবুর্গের আদালত মঙ্গলবার রায় দেয়ার সময় গ্রিস সরকারকে ৮০ হাজার ইউরো জরিমানা করেছে৷ বেলালের দুই সন্তান ও তার স্ত্রীর হাতে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ওই অর্থ পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছে ইউরোপের মানবাধিকার বিষয়ক আদালত৷

আদালত তার পর্যবেক্ষণে জানিয়েছে, গ্রিক উপকূলরক্ষীরা অভিযানের সময় প্রাণঘাতি আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে আদালতের কাছে পর্যাপ্ত আইনি ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হয়েছে এবং মানবাধিকার বিষয়ক ইউরোপীয় কনভেনশন লঙ্ঘন করেছে৷

সেদিন যা ঘটেছিল

২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বরের সকালে এজিয়ান সাগরের গ্রিক দ্বীপ সিরিমোসের দিকে আসছিল একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা৷ সেখানে ১৪ জন আরোহী ছিলেন৷ তাদেরই একজন বেলাল টেলো৷ নৌকাটিকে দেখতে পেয়ে থামার নির্দেশ দেয় গ্রিক উপকূলরক্ষীরা৷ কিন্তু নৌকাটির চালক সেই নির্দেশনা অমান্য করে৷

ঘটনার দিনের বর্ণনা ও আদালতের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, উপকূলরক্ষীরা নৌকাটিকে থামানোর চেষ্টায় সাতটি সতর্কীকরণ শট এবং ১৩টি গুলি ছুঁড়েছে৷ এতে অভিবাসীবাহী নৌকায় থাকা দুই সিরিয়ান নাগরিক আহত হয়েছিলেন৷ তাদের মধ্যে একজন বেলাল, তার মাথায় গুলি লেগেছিল৷ নৌকার আরেক যাত্রী কাঁধে গুলিবিদ্ধ হন৷ ওই নৌকার দায়িত্বে থাকা দুই তুর্কি নাগরিককে অভিবাসী চোরাচালানের অভিযোগে বিচারের পর দোষী সাব্যস্ত করেছে গ্রিসের একটি আদালত৷

বেলাল টেলো ২০১৫ সালের মার্চ পর্যন্ত গ্রিসের রোডস দ্বীপের একটি হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যায় ছিলেন৷ ওই বছরের আগস্টে উন্নত চিকিৎসার জন্য সুইডেনে নিয়ে যাওয়া হয় বেলালকে৷ সেই দেশটিতে থাকতেন তার স্ত্রী এবং সন্তানেরা৷ কিন্তু ডিসেম্বরে মারা যান তিনি৷

আদালতের পর্যবেক্ষণ

আদালত জানিয়েছে, নৌকাটি থামাতে এবং এর ক্যাপ্টেনকে আটক করতে উপকূলরক্ষীরা মাত্রাতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করে৷

আদালত আরো জানিয়েছে, উপকূলরক্ষী কর্মকর্তারা গুলি চালানোর সময় ‘নৌকায় অন্য কোনো যাত্রী ছিলেন কিনা তা যাচাইয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি৷’

ওই ঘটনার তদন্তে গ্রিক কর্তৃপক্ষের দুর্বলতাগুলো ইউরোপীয় আদালতের রায়ে উঠে এসেছে বলে জানিয়েছে গ্রিসে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের আইনি সহায়তা দেয়া সংস্থা রিফিউজি সাপোর্ট এজিয়ান৷ সংস্থাটি বেলালের মামলাটিও দেখভাল করেছে৷ তারা বলেছে, ‘‘উপকূলরক্ষীদের অভিযান পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে এবং সমুদ্রে মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্তে পদ্ধতিগত ঘাটতির বিষয়টি এই ঘটনার মধ্য দিয়ে ভালভাবে নথিভুক্ত হয়েছে৷’’

সংঘাত, দারিদ্য আর ক্ষুধা থেকে পালিয়ে উন্নত জীবনের আশায় ইউরোপে আসতে চান মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশের নাগরিকেরা৷ তাদের কাছে তুর্কি উপকূল হয়ে গ্রিক দ্বীপগুলো অন্যতম গন্তব্যে পরিণত হয়েছে৷

কিন্তু গ্রিক উপকূলরক্ষীরা এজিয়ান সাগর হয়ে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের অধিকার খর্ব করে তাদের পুশব্যাক বা জোর করে ফিরে যেতে বাধ্য করে বলে অভিযোগ রয়েছে৷ এই অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করে আসছে গ্রিস সরকার৷






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *