Main Menu

ক্রোয়েশিয়া সীমান্তে নিয়মিত ‘পুশব্যাকের’ শিকার হাজারো অভিবাসী: এইচআরডাব্লিউ

বিদেশবার্তা২৪ ডেস্ক:
ক্রোয়েশিয়া সীমান্তে পুশব্যাক নিয়ে বুধবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মানধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিউ)। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, অনেক অভিবাসীকে সীমান্ত থেকে টানা নির্যাতন করে ফিরিয়ে দিয়েছে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে সাম্প্রতিক পুশব্যাকের শিকার হওয়া ১০০ জনেরও বেশি ব্যক্তি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। এদের মধ্যে ২০ জনেরও বেশি অভিভাবকহীন অপ্রাপ্তবয়স্ক।

ক্রোয়েশিয়া পুলিশ প্রায়ই সহিংসভাবে উদ্বাস্তু, আশ্রয়প্রার্থী ও অভিবাসীদের জোরপূর্বক বসনিয়া-হ্যার্ৎসেগোভিনায় ফিরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ করে আসছে এনজিও ও অধিকার সংস্থাগুলো।

ড্যানিশ রিফিউজি কাউন্সিল (ডিআরসি) এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী সহিংস পুশব্যাকের শিকার হয়েছেন।

এইচআরডাব্লিউর মতে, ভুক্তভোগীদের দুর্বলতার মূল্যায়ন না করেই এবং আশ্রয় চাওয়ার ইচ্ছাকে বিবেচনায় না নিয়েই এসব পুশব্যাক সংঘটিত হয়।

সহিংসতা ও অপমানজনক আচরণ

ক্রোয়েশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ইউরোপের অবাধ চলাচলের অঞ্চল শেঙেন জোনে যোগ দেয়ার অনুমোদন পেয়েছে। বসনিয়া-হ্যার্ৎসেগোভিনা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমানায় অবস্থিত। ইউরোপের দিকে আসা আশ্রয় প্রার্থীদের জন্য ২০১৮ সাল থেকে দেশটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট দেশ হয়ে উঠেছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ দাবি করেছে, সীমান্তে বেআইনি পুশব্যাক বাস্তবায়নের সময় ক্রোয়েশিয়ার পুলিশ আগে থেকে বসনিয়ার সীমান্তরক্ষীদের সাথেও যোগাযোগ করে না। তারা আশ্রয়প্রার্থীদের জোরপূর্বক একটি পয়েন্টে ঠেলে দিয়ে সীমান্তের অন্য দিকে থাকা পুলিশকে অভিবাসীদের গ্রহণ করতে সংকেত দেয়।

প্রতিবেদনে সাক্ষাৎকার দেয়া ৩৫ বছর বয়সি ক্যামেরুনের নাগরিক বলেন, “আমাদেরকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নদী, পাথর ও ঘন জঙ্গলের মধ্য দিয়ে পথ তৈরি করতে হয়েছিল। এসব অভিযান প্রায়শই রাতে ঘটে। কিভাবে যেতে হবে সে সম্পর্কে কোনও ধারণা ছাড়াই আমাদেরকে বসনিয়ার নিকটতম শহরের সীমান্তে পৌঁছাতে হয়েছিল।”

তিনি আরও জানান, “ক্রোয়েশিয়ার পুলিশ আমাদের জামাকাপড় খুলতে বাধ্য করে তল্লাশি করেছে। আমরা বলেছিলাম আমরা ক্রোয়েশিয়াতে আশ্রয় নিতে চাই এবং আমাদের চিকিৎসার দরকার। তারা আমাদের কোন আবেদন ও পরিস্থিতি বিবেচনা না করেই সীমান্ত থেকে বহিষ্কার করেছে। আমাদের সাথে পঞ্চমবারের মতো এমন ঘটনা ঘটেছে।”

পুশব্যাকের শিকার নাগরিকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আফগানরা। তার পরেই আছেন পাকিস্তানিরা। সীমান্তে বেআইনি বহিষ্কার হওয়া চারজনের মধ্যে একজন আফগান এবং একজন পাকিস্তানের নাগরিক। এছাড়া আফ্রিকার দেশে বুরুন্ডি থেকে আসা অভিবাসীদের সংখ্যাও প্রচুর। দক্ষিণ এশীয়দের মধ্যে বিপুল সংখ্যাক বাংলাদেশিও নিয়মিত এ অঞ্চলে পুশব্যাকের শিকার হয়ে থাকেন।

এইচআরডাব্লিউকে সাক্ষাৎকার দেয়া বেশিরভাগ আশ্রয়প্রার্থী এর আগে তুরস্ক, গ্রিস ও ইরানে ছিলেন। এসব দেশগুলোতে থাকার চেষ্টা ব্যর্থ হলে তারপর তারা বুলগেরিয়া, উত্তর মেসিডোনিয়া, আলবেনিয়া, কসোভো, মন্টিনিগ্রো, সার্বিয়া হয়ে বলকান রুট ধরেন।

অভিবাসীদের ব্যক্তিগত জিনিস চুরি

২০২২ সালের আগস্ট মাসে ক্রোয়েশিয়া সীমান্তে সর্বোচ্চ পুশব্যাকের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় তিন হাজার ৫০০ আশ্রয়প্রার্থীকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছিল। তাদের মধ্যে প্রায় ৭০ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক এবং ৪১ জন অভিভাবকহীন শিশু।

এইচআরডব্লিউ জানায়, ক্রোয়েশিয়ার বর্ডার পুলিশ ফেরত পাঠানো ছাড়াও নিয়মিত অভিবাসীদের ফোন, টাকা, পরিচয়পত্র ও অন্যান্য ব্যক্তিগত সম্পত্তি চুরি করে এবং বাজেয়াপ্ত করে। তারা প্রায়শই অভিবাসীদের সাথে স্পষ্টভাবে বর্ণবাদী ও অবমাননাকর আচরণ করে।

চলতি বছরের মার্চ মাসে ড্যানিশ শরণার্থী কাউন্সিল জানায়, “সীমান্তে থেকে ফিরে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে দুইজনের একজন অবমাননাকর আচরণের শিকার হয়েছেন। ২৭ শতাংশ ব্যক্তি শারীরিক আঘাতের কথা বর্ণনা করেছেন। ২৯ শতাংশ চুরির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন।”

ইইউর তহবিল ব্যবহার

ক্রোয়েশিয়া সীমান্তের এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউএনএইচসিআর।

দেশটির সীমান্তে এই অনুশীলনগুলি দীর্ঘদিন ধরে গণমাধ্যমগুলো প্রকাশ করে আসছে। ২০২১ সালের শেষে, আন্তজার্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের কনসোর্টিয়াম লাইটহাউস রিপোর্ট বসনিয়া সীমান্তে ক্রোয়েশিয়া পুলিশের নেতৃত্বে একটি হিংসাত্মক পুশব্যাকের ঘটনা ভিডিও করতে সক্ষম হয়েছিল।

ভিডিওতে দেখা যায়, কালো মুখোশধারী ব্যক্তিরা লাঠি দিয়ে তরুণ অভিবাসীদের আঘাত করছে এবং বসনিয়ায় ফিরে যেতে বলছে। এই ব্যক্তিরা পুলিশের দাঙ্গাবিরোধী শাখার সদস্য ছিল।

এই ইউনিটকে আংশিকভাবে অর্থায়ন ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা তহবিলের মাধ্যমে করা হয়।

এইচআরডাব্লিউ তার প্রতিবেদনে দাবি করেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ক্রোয়েশিয়ার সীমান্ত এলাকার ব্যবস্থাপনার জন্য পর্যাপ্ত গ্যারান্টি ছাড়াই তহবিল সরবরাহ করেছে। সেখানে মানবাধিকারকে সম্মান করা হয় কিনা সেটি যথাযথভাবে তদন্ত করা হয় নি। সীমান্তে বারবার আশ্রয় ও শিশুর অধিকার সম্পর্কিত মানদণ্ড লঙ্ঘন করা হয়েছে।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *