Main Menu

ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত সিলেট, বাড়ছে পানিবাহিত রোগ

নিউজ ডেস্ক:
ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত পুরো সিলেট বিভাগ। বিভাগের মধ্যে সিলেট নগর ও জেলার ৮০ শতাংশ এবং সুনামগঞ্জ জেলার ৯০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গত ৩/৪ দিন বন্যার পানি নামতে শুরু করায় অনেকটা স্বস্তি ফিরেছে জনমনে। তবে প্লাবিত এলাকাগুলোয় এখনো পানিবন্দী মানুষ।

আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নেওয়া বেশিরভাগে বাড়ি ফিরেছে। আর এলাকায়গুলোতে দেখা দিয়েছে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ। দুর্গত এলাকার মানুষর ভাগ্য নিয়ে যেনো খেলছে প্রকৃতি। এখন ঘুরে দাঁড়ানোর পাশাপাশি লড়তে হচ্ছে রোগজীবাণুর সঙ্গে। এ অবস্থায় মঙ্গলবার রাতে ও বুধবারের ভারী বর্ষণে ফের বন্যা অবনতির আশঙ্কার আতঙ্কে সিলেটবাসী।

বিভাগের বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। পানি নামতে শুরু করায় দেখা দিয়েছে ডায়রিয়া-চর্ম, চোখের প্রদাহ, দূষিত পানিতে গ্যাংগ্রিনসহ নানা রোগ।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী বেশি আসছেন। ডায়রিয়া আক্রান্তের মধ্যে শিশুরাই বেশি। এ পর্যন্ত বিভাগে উপদ্রুত এলাকাগুলোতে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ৪ হাজারের অধিক মানুষ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেটের বিভাগীয় পরিচালক হিমাংশু লাল রায় বলেন, বন্যার ভয়াবহতা অনুসারে রোগাক্রান্তের সংখ্যায় অনেকটা স্বস্তিদায়ক বলা চলে। যেভাবে মানুষ বন্যাক্রান্ত হয়েছে মানুষ, তাতে হাসপাতালগুলোতে রোগীদের চাপ সামাল দেওয়া মুশকিল হবে ধারণা ছিল। সেটা অবশ্য হয়নি। বন্যার পানি কমতে শুরু করায় পানিবাহিত রোগ দেখা দিয়েছে। তাই মানুষকে সুরক্ষা দিতে বন্যাকবলিত এলাকাগুলোয় ৪৩০টি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে। আক্রান্ত রোগীদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ওষুধও মজুত রয়েছে পর্যাপ্ত।

তিনি বলেন, এছাড়া বিভাগে বুধবার ৩০১ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। সাধারণত; অন্যান্য সময় এমনিতে শ’ দেড়শ’ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। জেলা ও উপজেলায় প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং স্বাস্থ্য উপকরণ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

তাঁর দেওয়া তথ্যমতে, ডায়রিয়া জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে এদিন সিলেটে ৪৪ জন, সুনামগঞ্জে ১৩৮ জন, হবিগঞ্জে ৭৬ জন এবং মৌলভীবাজারে ৫৩ জন ভর্তি হয়েছে। সেসঙ্গে বহিঃবিভাগে চর্ম রোগের চিকিৎসা নিয়েছে ১২০ জনে।

সিলেটের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. জন্মেজয় দত্ত বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে আরও ৪৪ জন, আগেরদিন ৪৬ জন ডায়রিয়াজনিত রোগে ভর্তি হয়েছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ভর্তি রোগী ২১৯ জন। আক্রান্তদের বেশিরভাগ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার। বন্যা পরবর্তী রোগজীবাণু থেকে মানুষকে সুরক্ষায় জেলায় ১৪০টি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে। বন্যার পরে করণীয় হিসেবে সুস্থ থাকতে অন্তত আধা ঘণ্টা পানি ফুটিয়ে পান করা, বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দিয়ে পানি বিশুদ্ধ করে নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

এ বিষয় নিয়ে মাঠপর্যায়ে মেডিক্যাল টিমগুলোও মানুষকে সচেতন করছে।

সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন আহমদ হোসেন জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জ জেলায় ১৮২ জন ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তার মধ্যে সব চেয়ে বেশি সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৮৯ জন। অন্যরা জেলার বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে।

মৌলভীবাজার সিভিল সার্জন সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্তরা হলেন- ডায়রিয়ায় ৫৩ জন, আরটিআই রোগে ১৩ জন, চর্ম রোগে ৭৭ জন, চোখের প্রদাহে ২১ জন, আমাশয় ৪০ জনসহ বিভিন্ন রোগে মোট আক্রান্ত ১ হাজার ৯০ জন। এর মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বন্যায় বিপর্যন্ত সিলেট জেলায় ২ হাজার ১৮৯ জন, সুনামগঞ্জে ৩৮১, হবিগঞ্জে ৮০৪ ও মৌলভীবাজার জেলায় ৫৬১ জন পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়েছে।

চিকিৎসকরা জানান, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ডায়রিয়া রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছেন। তাছাড়া পানিবাহিত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

এবারের বন্যায় সিলেট নগরের অর্ধেকাংশ, ৫টি পৌরসভা, জেলার ১৩ উপজেলার ১০৫টি ইউনিয়নের মধ্যে ৯৯টিই বন্যা কবলিত হয়। বিশেষ করে বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর, ফেঞ্চুগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ, জকিগঞ্জ, জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাটের অসংখ্য গ্রাম এখনো পানিতে তলিয়ে আছে। রাস্তাঘাট নিমজ্জিত হয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। অনেক এলাকার পানি অল্প কমলেও অন্তহীন দুর্ভোগে পড়েছে মানুষজন।

উল্লেখ্য, সিলেট বিভাগে প্রায় অর্ধকোটির বেশি মানুষ বন্যা কবলিত হয়েছে। এরমধ্যে সিলেট জেলায় বন্যায় চার লাখ ১৬ হাজার ৯৬৬টি পরিবারের ২১ লাখ ৯৬ হাজার ৯৬৫ জন মানুষ বন্যাক্রান্ত হয়েছে। এরমধ্যে ৩০ হাজার ৯৪০টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বিভাগজুড়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *