Main Menu

পানি কমলেও ঝুপড়ি ঘরে আতঙ্কে রাত কাটছে বানভাসিদের

নিউজ ডেস্ক:
পানি কমলেও মৌলভীবাজারের বানভাসিদের দুর্ভোগ কমেনি। কোনও কোনও জায়গায় বাড়ি-ঘর থেকে পানি নামলেও উঠানে রয়ে গেছে পানি। আবার কোনও এলাকায় এখনও পানি নামেইনি। এসব এলাকার বানভাসি অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে জায়গা পাননি। বাধ্য হয়ে মৌলভীবাজার-শেরপুর সড়কের পাশে ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে থাকছেন তারা। তবে রাতে ঝুপড়ি ঘরে বানিভাসিদের সময় কাটে আতঙ্ক আর ভয়ে। দুর্ঘটনা ও চুরি-ডাকাতির ভয়ে রাত জেগে পাহারা দিতে হয় তাদের।

মৌলভীবাজার-শেরপুর বাজার রোডে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, প্রায় ২৫ কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন স্থানে ঝুপড়ি ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন বানভাসিরা। শেরপুর বাজারে যাওয়ার একটু আগে এক কিলোমিটার সড়কজুড়ে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে এসব অস্থায়ী ঘর। বিদ্যুৎহীন এসব ঘরে বানভাসিদের রাত কাটছে ভয়, আতঙ্ক আর নিরাপত্তাহীনতায়।

বন্যার্তরা জানান, গত ১৮ জুন থেকে মৌলভীবাজার জেলার সদর উপজেলা, রাজনগর, কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলার ৪১টি ইউনিয়নে বন্যার পানি ঢুকে মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। মৌলভীবাজার শেরপুরে কুশিয়ারা নদীর বাঁধ উপচে পানি ঘরের ভেতরে ঢুকে যায়। কূলকিনারা না পেয়ে মানুষ জীবন বাঁচাতে ছুটে যায় আশ্রয়কেন্দ্রে। তবে বেশিরভাগ মানুষই আশ্রয়কেন্দ্রে জায়গা পাননি। এ অবস্থায় বানভাসিরা ঠাঁই নেয় সড়কে।

সড়কের ওপরে বাঁশের সঙ্গে ত্রিপল বেঁধে ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে মানুষ ও গবাদিপশু অবস্থান করছে। অধিকাংশ ঘরে নেই রান্নার ব্যবস্থা। সড়ক পথে যাওয়ার সময় সরকারি-বেসরকারি ত্রাণের ট্রাক দেখলেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন তারা। রান্না ও শুকনো খাবার যা পাচ্ছেন সেগুলো দিয়েই চলছে তাদের জীবন।

বানভাসিরা জানান, দিনের সময়টা কোনোমমে কাটলেও অন্ধকার হলে দুর্বিষহ হয়ে ওঠে জীবন। বিদ্যুৎহীন ঘরে ভয় আর আতঙ্কে কাটে সারা রাত। সড়ক হওয়ায় ঝুপড়ির পাশ দিয়েই চলে বড় বড় বাস-ট্রাক। এতে যেকোনও সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। যেকোনও গাড়ি সড়কের একটু পাশ দিয়ে গেলেই প্রাণ হারাবেন অনেক মানুষ। এর ওপর রয়েছে চোর ডাকাতের ভয়। এ অবস্থায় বাসিন্দারা রাত জেগে পাহারা দিয়ে গবাদিপশুকে রক্ষা করছেন।

কুশিয়ারা নদীর পাড়ের বাসিন্দা নিপা বেগম। বন্যার পানিতে ডুবেছে তার বাড়ি-ঘর। তিনি বলেন, ‘উজানে বৃষ্টি হলে হু হু করে ঘরে পানি ঢুকে যায়। বাচ্চা নিয়া কই যাইতাম। এখন রাস্তায় আইছি। রাস্তা দিয়া বড় বড় বাস যায়, ডর লাগে।’

হামরকোনা গ্রামের রহিম মিয়া বলেন, খেয়ে না খেয়ে পড়ে আছি। মনের মাঝেও ভয়। সড়কের ঝুপড়ি ঘরে কোন সময় জানি গাড়ি ওঠে যায়।

সড়কের পাশে অবস্থান নেওয়া সবুজ মিয়া বলেন, চোর ডাকাতের কারণে রাত কাটছে ভয় আর আতঙ্কে। গরুবাছুর চুরি করে নিয়া যায় কিনা সে জন্য রাত জেগে পাহারা দেই। গরুকে খাওয়ানোর মতো কিছু নাই।

নতুনবস্তি গ্রামের বৃদ্ধা জাহানারা বেগম বলেন, ঘরে গলা পানি। কোনোমতে জানমাল নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে রাস্তায় এসে আশ্রয় নিয়েছি।

হামরকোনা গ্রামের দিলারা বেগম বলেন, ৮-১০ দিন ধরে ঘরের ভেতর পানি। এখন যাও সামান্য পানি কমেছে, ঘরে ঢুকতে পারছি না। বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে কোনোমতে বেঁচে আছি।

অপরদিকে হাকালুকি হাওর পাড়ের বেলাগাঁও, শাহপুর, জালালপুর, কাইয়ারচর, শশারকান্দি, দেখিয়ারপুর, কালেশার, বাদেভূকশিমইল, বেড়কুড়ি, মদনগৌরি, সাদিপুর, উত্তর সাদিপুর, গৌড়করণসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ চরমে। পানিবন্দি অবস্থায় খেয়ে না খেয়ে তারা কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন।

সড়কের পাশের ঝুপড়ি ঘরের নিরাপত্তায় টহল পুলিশ রয়েছে বলে জানিয়ে মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, জেলায় জানমালের নিরাপত্তায় পুলিশের প্রতিদিন টহল অব্যাহত আছে। এখনও চুরি-ডাকাতির কোনও ঘটনা ঘটেনি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত আছে।

এদিকে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.আক্তারুজ্জামান জানান, কুশিয়ারার পানি শেরপুর পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮.০৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, জেলায় ১২৯টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। এসব কেন্দ্রে ২০ হাজার ৭৭৭ জন মানুষ রয়েছেন। বানভাসিদের মধ্যে দুই হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার, ৩০ হাজার ৪১২ প্যাকেট দুধ বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ৪০ লাখ ৫৫ হাজার নগদ টাকা সহায়তা হিসেবে দেওয়া হয়েছে। পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ অব্যাহত আছে। পর্যায়ক্রমে সব ধরণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *