Main Menu

এক শিক্ষক দিয়ে ‘চলছে’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

নিউজ ডেস্ক:
তাহিরপুর উপজেলার হাওরপাড়ের প্রত্যন্ত গ্রাম দুর্লভপুর। এ গ্রামে শিক্ষার আলো ছড়ানোর একটি মাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান । দীর্ঘদিন ধরে এই বিদ্যালয়ের সমস্ত কার্যক্রম এক হাতে সামলাতে হচ্ছে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সাথী রাণীকে।

বিদ্যালয়টিতে আর কোনো শিক্ষক না থাকায় পাঠদান থেকে শুরু করে দাপ্তরিক সকল কাজ একা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। একটি শ্রেণিতে পাঠদান করানোর সময় অন্য সব শ্রেণি কক্ষগুলো থাকে শিক্ষক শূন্য। সকাল থেকে শুরু করে বিকেল পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে একের পর এক ক্লাস নিতে নিতে একটা সময় ক্লান্ত হয়ে পড়েন তিনি। পাশাপাশি কোনো কারণে যদি বিদ্যালয়ে উপস্থিত হতে না পারেন, বাধ্য হয়ে এদিন বিদ্যালয় বন্ধ রাখতে হয়।

একই অবস্থা পার্শ্ববর্তী আরেক গ্রাম শরীফপুর রাধাচরণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। দীর্ঘ ১২ বছর ধরে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকা এই বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক উৎফল কুমার ছাড়া আর কোনো শিক্ষক না থাকায় দু-তিনটি শ্রেণির শিক্ষার্থীকে একসঙ্গে করে পাঠদান করেন তিনি। যার কারণে ইচ্ছা থাকলেও ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। শিক্ষক স্বল্পতায় কাঙ্ক্ষিত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বিদ্যালয় দুটির ২০৩ জন শিক্ষার্থী। অথচ সম্প্রতি সুনামগঞ্জে ৭০০ নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হলেও একজন শিক্ষকও দেওয়া হয়নি বিদ্যালয় দুটির ২০৩ ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের জন্য। ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করার পরও কোনো সমাধান পাননি শিক্ষকরা।

শিক্ষক সাথী রাণি বলেন, দপ্তরী, সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষক কেউ নাই আমার স্কুলে। সবকিছু আমার একা চালাতে হচ্ছে। একজন প্রধান শিক্ষকের দাপ্তরিক অনেক কাজ। সেই কাজ সামলাতে পারি না, ক্লাস নেব কীভাবে। তারপরও চেষ্টা করে যাচ্ছি। ক্লাস করতে করতে আমি ক্লান্ত হয়ে যাই। আমার মনে হচ্ছে আমি কিছুদিনের ভেতর অসুস্থ হয়ে যাব।

রাধাচরণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক উৎফল কুমার বলেন, ২০২০ সাল থেকে শিক্ষক হিসেবে আমি একাই স্কুলে আছি। সকল শ্রেণির শিক্ষার্থীকে একসঙ্গে করে ক্লাস করাতে হয়। না হলে আমি এক ক্লাসে গেলে অন্য ক্লাস ফাঁকা থাকে। যদি কোনো কারণে স্কুলে অনুপস্থিত থাকি সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকে। স্যারেরা এখন পর্যন্ত শুধু শিক্ষক দিচ্ছি দিচ্ছি বলে আসছেন।

দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকের অভাবে পাঠদান ব্যাহত হওয়ায় শিক্ষার মান দিন দিন নিম্নগামী হচ্ছে। তাই দ্রুত বিদ্যালয়ে শিক্ষক দেওয়ার দাবি অভিভাবকদের।

যার নামে বিদ্যালয় সেই রাধাচরণের ছেলে বিজয় তালুকদার বলেন গ্রামের বাচ্চাদের শিক্ষার জন্য বাবার নামে নিজেদের জায়গা দিয়ে দিয়েছি স্কুলকে। কিন্তু যে আশায় আমরা স্কুলের নামে জায়গা দিয়েছি সে আশা পূরণ হচ্ছে না। আমাদের স্কুলের শিক্ষক না থাকায়। একজন শিক্ষক কি করবে? শিক্ষক দিলে স্কুলের উন্নয়ন হবে গ্রামের উন্নয়ন হবে।

আলপনা রাণী তালুকদার বলেন, আমাদের স্কুলে ছাত্র অনেক। কিন্তু ক্লাসে শিক্ষক নাই। শিক্ষক না থাকার কারণে ছাত্রদের উন্নতি হয় না। শিক্ষক থাকার কথা ৬ জন। আছেন মাত্র ১ জন। সব শ্রেণির শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে পড়ানো হয়। একসঙ্গে পড়ালে কি আর পড়া হবে ছাত্রদের। আমরা স্কুলের শিক্ষক চাই।

কলপনা রাণী তালুকদার বলেন, ৫টা শ্রেণী একা ক্লাস করবেন কীভাবে। তারপরও করে যাচ্ছেন। ছাত্রদের কষ্ট, মাস্টারেরও কষ্ট হয়। প্রতিদিন ছাত্ররা ঠিকমতো পড়াশোনা করতে পারে না।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম আব্দুর রহমান বলেন, নতুন নিয়োগের পরেও উপজেলায় এখনো ৫৫টি শিক্ষকের পদ শূন্য আছে। তাই শিক্ষক স্বল্পতা কাটানো যাচ্ছে না। তবে একজন করে শিক্ষক দিয়ে একটি বিদ্যালয় চলতে পারে না। তাই এটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে ডেপুটেশনে দ্রুত অন্য বিদ্যালয় থেকে শিক্ষক দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *