যুক্তরাষ্ট্রে ফের কৃষ্ণাঙ্গ হত্যা, পুলিশের ‘বর্বরতার’ ভিডিও প্রকাশ

নিউজ ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রে ফের ঘটেছে জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা। মিসিসিপি রাজ্যের মেম্ফিসে টায়ার নিকোলস নামের এক কৃষ্ণাঙ্গ যুবকের ওপর হওয়া পুলিশি নির্যাতনের ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে।
গত ৭ জানুয়ারি ৫ পুলিশ অফিসারের নির্যাতনের শিকার হন নিকোলস। এর তিনদিন পর হাসপাতালে মারা যায় ওই যুবক। ভিডিওতে দেখা যায় নির্যাতনের সময় মা মা বলে আর্তনাত করছিলেন তিনি। চিৎকার-আর্তনাতের পরও তার ওপর দীর্ঘ সময় চলে নির্যাতন।
কৃষ্ণাঙ্গ তরুণের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের পাঁচজন প্রাক্তন কর্মীর বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
জানা যায়, ট্রাফিক আইন অমান্য করার অপরাধে ২৯ বছর বয়সী নিকোলসকে আটক করে পুলিশ। বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর অভিযোগে ৭ জানুয়ারি গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। কিছুক্ষণ কথা বলার পর ভয়ে তিনি দৌড় দিলে পুলিশ সদস্যরা তাকে পাকড়াও করে বর্বর নির্যাতন চালান। তার মুখে একাধিক লাথি, ঘুষি মারেন তারা।
মেম্ফিস পুলিশের পক্ষ থেকে সব মিলিয়ে চারটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। প্রথম ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ নিকোলসকে গাড়ি থেকে বের হয়ে মাটিতে শুয়ে পড়তে বলছে।
এ সময় নিকোলস বলেন, ‘আমি কিছু করিনি।’ এ্ সময় এক অফিসার গালাগাল দিয়ে বলেন, ‘মাটিতে শুয়ে পড়।’ আরেকজন নিকোলসকে টেজার দিয়ে ইলেকট্রিক শক দিতে বলেন।
আরেকজন অফিসারকে চিৎকার করে বলতে শোনা যায়, ‘আমি তোমার হাত ভেঙে দেওয়ার আগে হাত পেছনে রাখ।’
পুলিশের এমন আচরণে ভয় পেয়ে যান নিকোলস। তখন তিনি বলেন,‘আপনারা এখন অনেক বাড়াবাড়ি করছেন। আমি বাড়িতে যাওয়ার চেষ্টা করছি।’ ওই মুহুর্তে নিকোলসকে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হলে তিনি দৌড় দেন।
এরপর সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত একটি ভিডিওতে দেখা যায় নিকোলসকে মারধর করছেন তারা। তার মুখে মরিচের গুড়া ছিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মাথায় কিল ঘুষি মারা হচ্ছে।
যে ফুটেজ পাওয়া গেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে নিকোলাস মাটিতে পড়ে রয়েছেন। তাঁকে অন্তত তিনবার ”মা গো!” বলে চিৎকার দিয়েছেন তিনি। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁর মুখে লাথি ও ঘুষি পড়া বন্ধ হয়নি। গত ১০ জানুয়ারি হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে নিকোলাসের।
সবচেয়ে দীর্ঘ যে চারটি ভিডিও পাওয়া গিয়েছে, সেগুলিতে দেখা যাচ্ছে, কীরকম অমানুষিক অত্যাচার করা হয়েছে নিকোলাসের উপরে। ফ্লয়েডের মতোই তাঁরও ঘাড়ে হাঁটু দিয়ে চেপে ধরেছিলেন এক অফিসার। সেই অবস্থায় অন্য একজন লাগাতার লাথি মেরে যাচ্ছেন। মার খাওয়ার সময় নিকোলাসকে বলতে দেখা গিয়েছে, ”আমি কিছু করিনি। আপনারা এমন করতে পারেন না।” ভিডিও দেখে শিউরে উঠছেন সকলে। বইছে তীব্র নিন্দার ঝড়।
প্রবল মারধরে নিকোলাসকে মাথা গুঁজে পড়ে থাকতে দেখা যায়। এই পরিস্থিতিতে একজন এসে তাঁকে তুলে বসিয়ে দেন পুলিশের গাড়িতে হেলান দিয়ে। তাঁর মাথা ঝুঁকে পড়ছিল। অফিসারদের বুকে বসানো ক্যামেরা থেকেও অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে নির্যাতনের ছবি ফুটে উঠেছে।
এই তরুণের মৃত্যুর ঘটনায় স্বাভাবিক ভাবেই ফিরে এসেছে জর্জ ফ্লয়েডের হত্যাকাণ্ডের স্মৃতি। ফ্লয়েডকেও একই ভাবে নির্যাতন করে মেরে ফেলেছিল পুলিশ। নিকোলাসের মা পুলিশদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছেন। তাঁর দাবি, প্রাথমিক অবস্থায় পুলিশ চেয়েছিল ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে। তাঁকে বলা হয়েছিল, তাঁর ছেলে মদ্যপ অবস্থায় গ্রেপ্তার হন। কিন্তু তিনি হাতকড়া পড়তে চাইছিলেন না বলে তাঁকে মারধর করতে বাধ্য হয়েছে পুলিশ। ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পরে আমেরিকা জুড়ে বইছে নিন্দার ঝড়।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ ভিডিও দেখার পর বলেছেন, এই ‘ভয়ানক ভিডিও’ দেখে ‘অত্যন্ত ব্যথিত’ হয়েছেন তিনি। এদিকে এ ঘটনায় অভিযুক্ত পাঁচ পুলিশ সদস্যকে ইতোমধ্যে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
নির্যাতনের ভিডিও প্রকাশের পর নিকোলসের মা জানিয়েছেন, তার ছেলেকে বাড়ি থেকে মাত্র ২৩০ ফুট দূরে হত্যা করা হয়েছে।
নিকোলসের চার বছর বয়সী একটি সন্তান রয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো।
Related News

বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায় যুক্তরাষ্ট্র
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। একইসঙ্গে মার্কিন সরকারেরRead More

অস্ট্রেলিয়ায় সিডনিতে বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ড
নিউজ ডেস্ক: অস্ট্রেলিয়ার সেন্ট্রাল সিডনির একটি বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আগুনে ৭ তলা ভবনেরRead More