Main Menu

ধার্মিকতা প্রাধান্য : উত্তম গুণে গুণান্বিত নারীই উত্তম স্ত্রী

উম্মে আহমাদ ফারজানা:
সুখময় দাম্পত্য জীবন ও পরিবারের শান্তি-শৃঙ্খলার জন্য উত্তম স্ত্রী গ্রহণ জরুরি। উত্তম গুণে গুণান্বিত নারীই উত্তম স্ত্রী। ঈমানদার সতী-সাধ্বী নারী স্বামীর সংসার ও সন্তান-সন্ততির প্রতি দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকে। সঙ্গে সঙ্গে ধর্মীয় কাজে সহায়তা করে। এ জন্য মহান আল্লাহ ঈমানদার নারীকে বিবাহ করার নির্দেশ দিয়েছেন, যদিও সে সুশ্রী না হয়। আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা মুশরিক নারীদের বিয়ে কোরো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে। (মনে রেখো) মুমিন ক্রীতদাসী মুশরিক স্বাধীন নারীর চেয়ে উত্তম। যদিও সে তোমাদের বিমোহিত করে। আর তোমরা মুশরিক পুরুষদের বিয়ে কোরো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে। (মনে রেখো) মুমিন ক্রীতদাস মুশরিক স্বাধীন পুরুষের চেয়ে উত্তম, যদিও সে তোমাদের বিমোহিত করে। ওরা জাহান্নামের দিকে আহ্বান করে। আর আল্লাহ স্বীয় আদেশক্রমে জান্নাত ও ক্ষমার দিকে আহ্বান করেন। তিনি মানবজাতির জন্য তাঁর আয়াতগুলো ব্যাখ্যা করেন, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২২১)

নারীদের সাধারণ বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেন, ‘নারীকে বিবাহ করা হয় চারটি কারণে : (১) সম্পদ, (২) বংশমর্যাদা, (৩) সৌন্দর্য (৪) ও দ্বিনদারির (ধার্মিকতা) কারণে। এর মধ্যে তুমি দ্বিনদারিকে অগ্রাধিকার দাও। নইলে তুমি কল্যাণ বঞ্চিত হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৫০৯০)

অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যার চরিত্র ও ধার্মিকতা সম্পর্কে তোমরা সন্তুষ্ট, এমন কোনো ব্যক্তি বিবাহের প্রস্তাব নিয়ে এলে, তার সঙ্গে (তোমাদের মেয়েদের) বিবাহ দাও। তোমরা যদি তা না করো, তাহলে পৃথিবীতে বিপর্যয় ও ব্যাপক বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়বে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১০৮৪; ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৯৬৭)

বিয়ে করতে হবে উত্তম নারীকে। উত্তম নারী সম্পর্কে কোরআনে এসেছে, ‘অতএব সতী-সাধ্বী স্ত্রীরা হয় অনুগত এবং আল্লাহ যা হেফাজত করেছেন, আড়ালেও (সেই গুপ্তাঙ্গের) হেফাজত করে।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৩৪)

মুমিন নারী-পুরুষ পরস্পরের সহযোগী হবে। ভালো কাজে উৎসাহিত করবে এবং পাপের কাজে বাধা দেবে—এটাই হবে স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের প্রতি অন্যতম কর্তব্য। আল্লাহ বলেন, ‘আর মুমিন পুরুষ ও নারী পরস্পরের বন্ধু। তারা সৎকাজের আদেশ করে ও অসৎকাজে নিষেধ করে। তারা সালাত কায়েম করে ও জাকাত আদায় করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করে। এসব লোকের প্রতি আল্লাহ অবশ্যই অনুগ্রহ বর্ষণ করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাবান।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৭১)

প্রেমময় ও বেশি সন্তান গ্রহণে সক্ষম নারীকে বিয়ে করবে। নারীর বংশ, মা-বোনদের জীবন-চরিত থেকে সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। স্বামী-স্ত্রীর সুসম্পর্ক বজায় থাকা পরিবারে শান্তি বজায় থাকার অন্যতম শর্ত। এ সম্পর্ক অটুট রাখার জন্য স্ত্রীকে স্বামীর প্রতি প্রেমময়ী হওয়া জরুরি। এতে অন্য নারীর প্রতি স্বামীর মনে আকর্ষণ সৃষ্টি হয় না এবং তার বিপথগামী হওয়ারও আশঙ্কা থাকে না। আর এ ধরনের নারীর জন্যই জান্নাত আছে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের জান্নাতি রমণীরা হচ্ছে যারা স্বামীর প্রতি প্রেমময়ী ও বেশি সন্তান প্রসবকারিণী। স্বামী ক্রুদ্ধ হলে সে এসে স্বামীর হাতে হাত রেখে বলে, আপনি আমার প্রতি সন্তুষ্ট না হওয়া পর্যন্ত আমি ঘুমাব না।’ (সহিহুল জামে, হাদিস : ২৬০৪)

ঘরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব নারীর ওপর ন্যস্ত। তাই ঘরের কাজে মনোযোগী নারীকে বিয়ে করা উচিত। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা স্বগৃহে অবস্থান করো, প্রাচীন জাহেলি যুগের নারীদের মতো নিজেদের প্রদর্শন কোরো না।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৩৩)

সন্তানের প্রতি যত্নশীল ও স্নেহময়ী নারীকে মহানবী (সা.) উত্তম নারী হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘কুরাইশ বংশীয়া নারীরা উটে আরোহণকারী সব নারীর তুলনায় উত্তম। এরা শিশুসন্তানের ওপর বেশি স্নেহশীলা হয়ে থাকে আর স্বামীর সম্পদের প্রতি খুব যত্নবান হয়ে থাকে।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৪৩৪, ৫০৮২)

আল্লাহপ্রদত্ত নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা উত্তম নারীর বৈশিষ্ট্য। অনুরূপ স্বামীর মাধ্যমে মহান আল্লাহ তাকে যে নিয়ামত দান করেছেন তারও শুকরিয়া আদায় করে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমাকে জাহান্নাম দেখানো হয়। (আমি দেখলাম), তার অধিবাসীদের বেশির ভাগই নারী। (কারণ) তারা কুফরি (অকৃজ্ঞতা) করে। জিজ্ঞেস করা হলো, তারা কি আল্লাহর সঙ্গে কুফরি করে? তিনি বলেন, তারা স্বামীর অবাধ্য ও অকৃতজ্ঞ হয় এবং তার অনুগ্রহকে অস্বীকার করে। তুমি যদি দীর্ঘদিন তাদের কারো প্রতি অনুগ্রহ করো, অতঃপর সে তোমার সামান্য অবহেলা দেখতে পেলেই বলে ফেলে, আমি কখনো তোমার কাছ থেকে ভালো ব্যবহার পাইনি।’ (বুখারি, হাদিস : ২৯; মুসলিম, হাদিস : ৯০)

আর ঈমানদার উত্তম স্ত্রী পাওয়ার জন্য আগ্রহী হতে হবে। অনুসন্ধান করতে হবে এবং আল্লাহর সাহায্য কামনা করতে হবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তুমি তোমার জন্য উপকারী জিনিসের আকাঙ্ক্ষা করো এবং আল্লাহর সাহায্য চাও।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৬৬৪; ইবন মাজাহ, হাদিস : ৭৯)

মহান আল্লাহ আমাদের সুখময় দাম্পত্য জীবন দান করুন।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *