Main Menu

শাবিপ্রবি সংকট ও ছাত্র আন্দোলন, শিক্ষার্থী কি মরে গেলেই সমাধান?

gulzer ahmed sylhet-শাবিপ্রবি সংকট ও ছাত্র আন্দোলন, শিক্ষার্থী কি মরে গেলেই সমাধান?

শাবিপ্রবি সংকট ও ছাত্র আন্দোলন, শিক্ষার্থী কি মরে গেলেই সমাধান?শাবিপ্রবি সংকট ও ছাত্র আন্দোলন, শিক্ষার্থী কি মরে গেলেই সমাধান?কলাম:
বাংলাদেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে তুমুল ছাত্র আন্দোলন চলছে। উপাচার্যের পদত্যাগের দাবীতে বিগত এক সপ্তাহ থেকে শিক্ষার্থীরা এ আন্দোলন করছেন।

তবে প্রথম দিকে এ আন্দোলনটি উপাচার্য বিরোধী ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয় এর বেগম সিরাজুন্নেসা হলের অভ্যন্তরীণ সমস্যাকেন্দ্রিক ছিল। এটি একটি ছাত্রী হল। ছাত্রীরা তাদের খাবার সমস্যা, ইন্টারনেট প্রাপ্তি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে হল প্রভোস্টের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছিল। এ সমস্যার সমাধানে যথাযথ কর্তৃপক্ষের গাফিলতি এবং উপাচার্যের পক্ষ থেকে আশানুরূপ সাড়া না পাওয়ায় এ আন্দোলনটি পুরো ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ে এবং অন্যান্য হল ও বিভাগের শিক্ষার্থীরা এতে সম্পৃক্ত হয়।

শিক্ষার্থীদের দাবী দাওয়া থাকতেই পারে। আমাদের দেশের কালচার হলো দাবী করে, সংগ্রাম করে নিজের অধিকার আদায় করতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়েও বিভিন্ন সংকট থাকবে। এটাই স্বাভাবিক। তবে কর্তৃপক্ষ এবিষয়ে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত ও কর্তব্য পালনে তৎপর থাকা উচিত। এখানেই তালগোল পাকিয়েছেন হল প্রভোস্ট জাফরিন ও পরবর্তীতে ভিসি অধ্যাপক ফরিদ।

ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ ঘাস রক্তাক্ত হয়েছে। দেয়ালে দেয়ালে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ লেগেছে। ছাত্রীদের করুণ আর্তনাদ,বিলাপ আর ছাত্রদের গগণবিদারী শ্লোগান ও মিছিলে একদিকে দু:খ শোকে আক্রান্ত অন্যদিকে উত্তাল ক্যাম্পাস।

ক্যাম্পাসে পোশাকধারী পুলিশ অবস্থান করছে।সাউন্ড গ্রেনেড, গুলি, টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট এর আঘাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীর ক্ষত বিক্ষত হয়েছে। যৌক্তিক আন্দোলনের দাবীদার শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা ও ঠুকে দেয়া হয়েছে। সবমিলিয়ে পুরো সংকটে শাবিপ্রবি।

সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন। সুনির্দিষ্ট দাবী নিয়ে। ছাত্র ছাত্রীরা সহিংস আন্দোলনে এখনো যায়নি। যাবেও না ,তারা বলছে। তারা শান্তিপূর্ণ ভাবে তাদের যৌক্তিক আন্দোলন করে যাচ্ছে। অবরুদ্ধ ভিসিকে মুক্ত করতে পুলিশ যখন ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ ও রণভঙ্গ করেছিল।ঐদিন শিক্ষার্থীরা সম্ভবতঃ এরকম শ্লোগান দিয়েছিল, পুলিশ তুমি চলে যাও, ফুল নিয়ে বাড়ী যাও। পরেরদিন পুলিশ হেলমেট পরে লাটি নিয়ে ক্যম্পাসের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি হলে শিক্ষার্থীরা তাদেরকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়। ফুল দিয়ে স্বাগত জানায়। এটা একটি ভালো দিক। মন্দকে ভালো দিয়ে মোকাবেলা করার এ সংস্কৃতি সব জায়গায় সব খানে চালু হোক। কবি নজরুলের ভাষায়, “মোরা ফুল ছুঁড়ে মারিব……।”তুমি অধম তাই বলিয়া আমি উত্তম হইব না কেন?এ পলিসি এ প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের। অবশ্যই সাধুবাদ জানাতে হয়। পুষ্প উপহার শিক্ষার্থীরা হাঁটু গেড়ে দিল, না দাঁড়িয়ে দিল এটা বড় কথা নয়।বড় কথা হলো বুলেটের বিপরীতে ফুল দেয়া।মেশিন গানের পাশে গান গাচ্ছে ফুলের। এটা একটা উন্নত রুচি ও সুস্থ সংস্কৃতির বিজয়।

অতীতে অনেক আন্দোলনে এরকম কালচার দেখা যায়নি।গড়েও উঠেনি তখন নয়া সংস্কৃতির এ আন্দোলন। নামকরণ বিরোধী আন্দোলন সহ অনেক বড় বড় আন্দোলন হয়েছে। প্রতিটি আন্দোলনে ভিসিরা একঘোঁয়েমী করেছেন। যার খেসারত দিতে হয়েছে সিলেটের মানুষকে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, এধরনের ছাত্র আন্দোলন সমাধান করতে সময়ক্ষেপণ করলে মানুষ মারা যায়, আহত হয়,পঙ্গু হয়, মামলা হয়, গ্রেফতার হয়, জেলে যায়, ছাত্রত্ব বিনাশ হয়, বহিষ্কার হয়, বরখাস্ত হয়, দায়িত্বশীল ব্যক্তি তার পদকেও হারাতে হয়। জনগণ এগুলো চায় না। কারো মায়ের বুক খালি হোক, এটা আমরা কামনা করি না। তাই খুব দ্রুত সিলেটের রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দ, রাষ্ট্র ও সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে শাবিপ্রবি’র চলমান সংকট নিরসন করতে।প্রশাসন কিংবা পুলিশ দিয়ে এ ধরনের আন্দোলন কোনকালেই সমাধান করা যায় নি। এর সমাধান রাজনৈতিক ও সমঝোতার মাধ্যমে হতে হয়।

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এ অচলাবস্থা দূর করতে সিলেটের স্থানীয় সংসদ সদস্য মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও ক্যম্পাসের ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দকে এক টেবিলে বসা খুব জরুরী। অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয় ভিসিকে ভাবতে হবে গভীরভাবে। আপনি নিজেই এর উত্তম সমাধান দিতে পারেন। অনশনরত শিক্ষার্থীরা একের এক মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে। তাহলে কি শিক্ষার্থী মরে গেলেই সমাধান? যেমনটি বলেছিলেন, বিতর্কিত হল প্রভোস্ট জাফরিন,”তোমাদের কেউ কি মারা গেছে?যে আমি আসব। ”

সিলেটের মানুষ লাশ চায় না।শান্তি চায়। আমাদের গর্বিত প্রতিষ্ঠান শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ ফিরে আসুক। ছাত্র শিক্ষক সম্পর্ক মধুর হোক। প্রাণ ফিরুক শাবিপ্রবি’র।

বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতি হোক ছাত্র ও জনবান্ধব। গতকাল বৃহস্পতিবার শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য অপসারণের দাবিতে চলমান আমরণ অনশনে অসুস্থ শিক্ষার্থীকে দেখতে সিলেট আসেন প্রগতিশীল ছাত্রজোটের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।এটা একটা ভালো দিক। প্রগতিশীল ছাত্রজোটের কেন্দ্রীয় নেতা ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. ফয়েজ উল্লাহ, ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স ও ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাশেদ শাহরিয়ার, ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সরোজ কান্তি, ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক বিএম জুবায়ের প্রধান, ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় নেতা রেহনুমা রোবাইয়াত প্রমুখ সিলেট নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে অসুস্থ শিক্ষার্থীকে দেখেন ও খোঁজ খবর নেন।প্রতিটি ছাত্র সংগঠনকে সাধারণ ছাত্রদের পাশে দাঁড়ানো উচিত।

গোলজার আহমদ হেলাল
লেখক কলামিস্ট ও সাংবাদিক






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *