লিভার সুস্থ রাখার গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ
লে. কর্নেল ডা. নাসির উদ্দিন আহমদ:
লিভার মানবদেহের অভ্যন্তরে সবচেয়ে বড় অঙ্গ। মানব শরীরের জন্য পাঁচ শতাধিক কাজ সম্পাদিত হয় এখানে। শরীরের জন্য সমুদয় বিপাকক্রিয়া সম্পাদিত হয় এ অঙ্গে। শর্করা, ভিটামিন, খনিজ লবণ জমা থাকে এখানে। শরীরের প্রয়োজনীয় নানা ধরনের আমিষ সংশ্লেষিত হয় যকৃত থেকে। রক্ত জমাট বাঁধার উপাদান, ইউরিয়া, বিলিরুবিন, পিত্তরস, প্রাণরসের বাহক আমিষ, শারীরবৃত্তীয় কাজে প্রয়োজনীয় অসংখ্য রাসায়নিক উপাদান সংশ্লেষিত হয় যকৃত থেকেই। তাই এ অঙ্গটি সুস্থ রাখা জরুরি। লিভার সুস্থ রাখতে হলে করণীয়-
চিনি থেকে দূরে থাকুন : চিনি শুধু দাঁতের ক্ষতি করে না, লিভারের জন্যও ক্ষতিকর। অতিরিক্ত চিনি, ফ্রুকটোস জাতীয় কর্ন সিরাপ লিভারের সমূহ বিপদ ডেকে আনতে পারে। চিনি অ্যালকোহলের মতোই লিভারের জন্য ক্ষতিকর। তাই খাদ্যে চিনির পরিমাণ কমাতে হবে। সোডা, পেস্ট্রি, ক্যান্ডি ইত্যাদি থেকে রসনা সংযত রাখতে হবে।
সব প্রাকৃতিক ওষুধ নিরাপদ নয় : আয়ুর্বেদিক ওষুধের নামে অনেক কিছুই বাজারে পাওয়া যায়। সব ক্ষেত্রে নিরাপদ নয়। গবেষণায় দেখা গেছে, এসব যকৃতে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, কার্যক্ষমতা সম্পন্ন নষ্ট করে দিতে পারে। অনেক সময় জন্ডিসের চিকিৎসায় আমাদের দেশে কবিরাজি ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এগুলো নিরাপদ নয়।
স্থূলতা লিভারের শত্রু : স্থূলকায় ব্যক্তিদের জন্য হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি আছে। অতিরিক্ত চর্বি এসে নোঙর ফেলে যকৃতে। যকৃতের কোষগুলো ফুলে ওঠে। শুরু হয় রোগ। এতে হতে পারে ফ্যাটি লিভার ডিজিজ। ফ্যাটি লিভার থেকে হতে পারে লিভার সিরোসিস। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। শরীর থেকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করুন অতিরিক্ত চর্বি। গবেষণা বলছে, অতিরিক্ত কোমল পানীয় পান করলে ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি বাড়ে। সম্পৃক্ত চর্বি লিভারের জন্য ক্ষতিকর। যেসব খাবারের সম্পৃক্ত চর্বি রয়েছে, সেসব খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে।
ভিটামিন গ্রহণমুক্ত থাকুন : ভিটামিন গ্রহণ করার একটা বাতিক রয়েছে আমাদের। বিশেষ করে ভিটামিন-এ যদি বেশি পরিমাণ গ্রহণ করা হয়, তা হলে এটিও লিভারের ক্ষতি করতে পারে। তাই অতিরিক্ত ভিটামিন-এ গ্রহণ করবেন না। অনেক ওষুধই লিভারের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে ব্যথা বেদনার ওষুধ, প্যারাসিটামল, ঘুমের ওষুধ। এগুলো লিভারের জন্য ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। তাই ওষুধ গ্রহণের ক্ষেত্রে সাবধান হোন। অতিরিক্ত ওষুধ গ্রহণের বাতিক থেকে মুক্ত থাকুন।
হেপাটাইটিস-বি, সি মুক্ত থাকুন : লিভারের জন্য অন্যতম ভয়ানক শত্রু হেপাটাইটিস-বি এবং সি। সিরোসিস ও ক্যানসার সৃষ্টিতে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। হেপাটাইটিস-বি এবং সি ছড়ায় মূলত রক্ত, লালা, বীর্য, যোনিরস ও গর্ভফুলের মাধ্যমে। আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত ইনজেকশনের সুচ, রেজার, ব্লেড, ক্ষুর, এমনকি টুথব্রাশ হতে পারে জীবাণু ছাড়ানোর মাধ্যম। আক্রান্ত মায়ের গর্ভজাত সন্তান সহজেই ভাইরাস আক্রান্ত হতে পারে। অসংযত যৌনাচার, নেশার সামগ্রী নেওয়ার জন্য একই সিরিঞ্জ একাধিক ব্যক্তির ব্যবহার এ ভাইরাস ধ্বংসাত্মক আকারে ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ। রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্র, ডায়ালাইসিস সেন্টার, ডায়াগনস্টিক ল্যাব, যৌনপল্লী এ ভাইরাসের অন্যতম প্রধান আবাস। রক্ত পরিসঞ্চালনের আগে রক্তে ভাইরাসের উপস্থিতি নির্ণয় করা হয়। তবেই নিরাপদ রক্ত হিসেবে অসুস্থ মানুষের শরীরে তা পরিসঞ্চালন করা যায়। জেনে নিন রক্ত ভাইরাস মুক্ত কিনা। হেপাটাইটিস-বি থেকে মুক্ত থাকতে প্রতিরোধক টিকা নিন।
অ্যালকোহল ভয়ঙ্কর : অ্যালকোহল আরও দশটি অঙ্গের মতো লিভারের ক্ষতি ডেকে আনে। তাই সাবধান থাকুন। বদঅভ্যাস ত্যাগ করুন।
লেখক : মেডিসিন স্পেশালিস্ট ও এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট, সিএমএইচ
চেম্বার : আল রাজি হাসপাতাল
Related News
দৈনন্দিন জীবনকে সহজ করবেন যেভাবে
দৈনন্দিন জীবনকে সহজ করবেন যেভাবে দৈনন্দিন জীবনকে সহজ করার জন্য আপনাকে জটিলতা এবং অদক্ষতার ক্ষেত্রগুলোRead More
অমনোযোগ দূর করতে মেডিটেশন
অমনোযোগ দূর করতে মেডিটেশন প্রতিদিন মেডিটেশন করলে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে। এছাড়া অমনোযোগ দূরRead More