Main Menu

বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে ‘মাহতাবপুরের শুঁটকি’

নিউজ ডেস্ক:
প্রবাসে বসবাসকারী সিলেটীদের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শুঁটকির বেশ পরিচিতি আছে। স্বাদে-ঘ্রাণে অতুলনীয় বেশি থাকায় বিদেশে শুঁটকির কদরও রয়েছে। সিলেটের ছোট মাছের শুঁটকি দেশের চাহিদা মিটিয়ে এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। তবে ভারতে সিলেটের ছোট মাছের শুঁটকি’র চাহিদা বেশি রয়েছে।

এদিকে বিদেশে শুঁটকির কদর বাড়ায় সিলেটেও শুঁটকি উৎপাদন আগের চেয়ে বেড়েছে। সিলেটের লামাকাজির শুঁটকি এখন বিশ্বময় পরিচতি। এখানে উৎপাদিত শুঁটকি রপ্তানি হচ্ছে লন্ডন-আমেরিকা-কানাডাসহ ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। এজন্য সিলেটের মাহতাবপুর দেশ-বিদেশে ‘শুঁটকি গ্রাম’ নামে পরিচিতি লাভ করেছে। সেখানে বছরে কোটি টাকার শুঁটকি উৎপাদিত হচ্ছে।

বিশ্বনাথ উপজেলার লামাকাজি ইউনিয়নের মাহতাবপুর গ্রাম। সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক লাগোয়া গ্রামটির অবস্থান। সিলেট নগরী থেকে গ্রামটির দূরত্ব মাত্র ২০ কিলোমিটার। বিশাল জায়গাজুড়ে এ গ্রামের গড়ে উঠেছে শুঁটকি উৎপাদন কেন্দ্র। সড়কের উত্তর পাশে মাহতাবপুর শুঁটকি উৎপাদন কারখানা। আর দক্ষিণ পাশে একটি বড় মৎস্য আড়ত রয়েছে। প্রতিদিন বিভিন্ন হাওর থেকে এখানে বিপুল পরিমাণ মাছ আসে। আর এই মাছের বাজারকে কেন্দ্র করেই মূলত গড়ে উঠেছে মাহতাবপুর শুঁটকির আড়ত। সেখানে চাতাল করে বা উঁচু মাটির ডিবিতে শুঁটকি শুকানো হয়। পরে সেটি বিভিন্নভাবে প্রক্রিয়াজাত করা হয়।

জানা যায়, নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী। এ চার মাস শুঁটকি তৈরির ভরা মৌসুম থাকে। এই সময়ে বাজারে মাছের দাম কম থাকে। এ সময় সিলেট ও সুনামগঞ্জের বিভিন্ন হাওর থেকে মাছ সংগ্রহ করা হয়। এখানে ১৮ থেকে ২০ প্রজাতির শুঁটকি উৎপাদন হয়। ফলে বছরে প্রায় ২০০ থেকে আড়াইশ টন শুঁটকি উৎপাদিত হয়। যার বাজারমূল্য প্রায় শত কোটি টাকা। শুঁটকির চাহিদা দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে দিন দিন বাড়ছে।

মাহতাবপুর গ্রামের মানুষ সারা বছর ধরে শুঁটকি উৎপাদন করেন। এই গ্রামসহ আশপাশ এলাকার প্রায় চার শতাধিক নারী ও পুরুষ শুঁটকি উৎপাদন কারখানায় শ্রমিকের কাজ করেন। তারা মাছ কাটা থেকে লবণ ছিটানো ও রোদে শুকানোর কাজ করে। এর বিনিময়ে প্রতিদিন মজুরি পান ১৫০ থেকে ২০০ টাকা।

শ্রমিকরা জানান, মাছ কাটার পর লবণ ছিটিয়ে দেয় হয়। এরপর রোদে শুকানোর ৩-৪ ঘণ্টা পর চাতাল করে বা উঁচু মাটির ডিবিতে রাখা হয়। এখানে পুঁটি, টৈংরা, বাইম, চিংড়ি, চান্দা ও কাইখ্যা এইসব প্রজাতির মাছের শুঁটকি তৈরি করা হয়। পরে সেগুলো সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ঢাকার ব্যবসায়ীদের কাছে পাইকারী ধরে বিক্রি করা হয়। বাংলাদেশের এই ব্যবসায়ীরা শুঁটকিগুলো বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে। পুঁটি মাছের শুঁটকি ভারতে বেশ জনপ্রিয়।

ব্যবসায়ীরা জানান, গজার মাছের শুঁটকি ৭০০ থেকে ২০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। পাইকারের কাছে প্রতি কেজি পুঁটি মাছের শুঁটকি ৬০০-৭০০ এবং টেংরা মাছের শুঁটকি ৭০০-৮০০ টাকা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাইকাররা এই দুই জাতের শুঁটকি বেশি ক্রয় করেন। তারা পুঁটির শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত করে ‘সিঁদল’ শুঁটকি তৈরি করেন। বিশেষ করে যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের কাছে ‘সিঁদল’ শুঁটকির কদরই আলাদা। এ সিঁদল বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি দেশীয় বাজারেও বিক্রি হয়। তাদের উৎপাদিত শুঁটকি যুক্তরাজ্য, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে।

আমেনা বেগম নামের এক নারী শ্রমিক বলেন, সারাদিন কাজ করে মাত্র ১৫০ টাকা মজুরিতে আমাদের সংসার চলে না। আমার গরিব মানুষ। অভাবের সংসার চালানোর জন্য অল্প টাকায় এ কাজ করি।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সিলেটের কয়েক লাখ মানুষ বসবাস করেন। প্রবাসীদের কাছে শুঁটকির কদরই আলাদা। বিশেষ করে যুক্তরাজ্যে সিঁদল শুঁটকির চাহিদা ব্যাপক। অনেকের স্বজন দেশে এলে তারা যাওয়ার সময় শুঁটকি নেওয়ার কথা বলেন। লন্ডন বা আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে থাকা সিলেটীরা বাংলাদেশ থেকে যাওয়ার সময় পরিবারের সদস্যদের জন্য ১০-১৫ কেজি, আবার অনেকে এর চেয়েও বেশি শুঁটকি নিয়ে যান।

আব্দুল মান্নান নামের এক আড়ত মালিক জানান, বছরে মাত্র ৬ মাস শুঁটকি ব্যবসায়। অল্পদিনের হলেও এটি লাভজনক ব্যবসা। আমাদের শুঁটকিগুলো পাইকারদের কাছে অনেক জনপ্রিয়। তিনি আরো জানান, সিলেটের সবচেয়ে বড় পাইকারি আড়ত নগরীর মাছিমপুরে এসব শুঁটকি বিক্রি করা হয়। সেখান থেকে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে দেশে ও বিদেশে পৌঁছে যায়।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *