Main Menu

পর্যটকদের মন কাড়ে ডিবির হাওরের লাল শাপলা

নিউজ ডেস্ক:
সিলেট মানেই যেন নিসর্গের হাতছানি। কোথাও টিলার গায়ে চায়ের গাছের সবুজ চাদর, কোথাও পাথরের কাঠিন্যের মাঝে জলের শীতল পরশ, কোথাও বা জল-বৃক্ষের মিতালি। বাংলাদেশের উত্তরপূর্বের এই জনপদে নানা রূপে, নানা রঙে ধরা দিয়েছে প্রকৃতি।

এমনই এক রূপের ডালি বিছানো রয়েছে সিলেটে জৈন্তাপুরের ডিবির হাওরে। লাল শাপলায় রঙিন হয়ে উঠে এখানকার চারটি বিল। শরতের শেষের ভাগ থেকে শীতজুড়ে লাল শাপলার বিলগুলো মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য ছড়িয়ে সবাইকে আকর্ষণ করে। লাল শাপলার মাঝ দিয়ে নৌকা নিয়ে বেড়ানোর সময় মন যেন কোথায় হারিয়ে যেতে চায়। পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে জৈন্তাপুর উপজেলার এখন মূল আকর্ষণ হয়ে উঠেছে এই ডিবির হাওর। বহু দূর থেকে মানুষ দেখতে আসে এই শাপলার বিল।

সিলেট শহর থেকে ৪২ কিলোমিটারের যাত্রাপথ। শাপলার বিলের পূর্ণ সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে ভ্রমণপিপাসুদের পৌঁছাতে হবে ভোরে। সূর্যের আলো ফোটার আগেই যেন শাপলার রূপ ফোটে ফোটে বেরোয়। সিলেট শহর থেকে বাসে করে বা সিএনজি অটোরিকশায় চেপে পৌঁছা যায় শাপলার বিলে। বাসে করে গেলে আপনাকে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় নামতে হবে। সেখান থেকে ৫ মিনিট হাঁটলেই আপনি পৌঁছে যাবেন ডিবির হাওরে। এছাড়া চাইলে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় চেপে বসতে পারেন বিল পর্যন্ত যেতে।

সিলেট শহর থেকে জৈন্তাপুর উপজেলার পর্যন্ত জনপ্রতি বাস ভাড়া পরবে মাত্র ৬০ থেকে ৭০ টাকা। লেগুনায় চড়ে গেলেও খরচ পড়বে প্রায় একই রকম। আর সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে যেতে চাইলে ভাড়া পড়বে দেড় থেকে দু হাজারের মধ্যে। শাপলার বিল ঘুরে দেখার জন্য পুরো নৌকা ভাড়া নেওয়া যাবে চার থেকে পাঁচশ টাকার মধ্যে। অবশ্য নৌকা ভাড়া মৌসুম ভেদে কম বেশি হয়ে থাকে। শাপলার বিলের আশেপাশে তেমন কোনও রেস্টুরেন্ট এবং খাবার ব্যবস্থা না থাকায় আয়োজনটা নিজ দায়িত্বেই করতে হবে।

ভারত সীমান্তবর্তী মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে ডিবি বিল, ইয়াম বিল, হরফকাট বিল ও কেন্দ্রীবিল এই চারটি বিলে সম্মিলনে বিস্তৃত ডিবির হাওর। চারটি বিল মিলে লাল শাপলার রাজত্ব ছড়িয়ে আছে ৯০০ একর এলাকাজুড়ে। এক সময় জৈন্তার রাজা রামসিংহের সমাধি বুকে নিয়ে চুপচাপ পড়ে ছিল ডিবির হাওর।

বছর ত্রিশেক আগে সীমান্তের ওপারের খাসিয়া সম্প্রদায় ডিবি বিলে লাল শাপলার চারা রোপণ করেন পূজা-অর্চনায় ফুলের চাহিদা মেটাতে। ধীরে ধীরে ডিবি বিল ছাড়িয়ে লাল শাপলায় রঙিন হয়ে উঠে কেন্দ্রী বিল, হরফকাটা বিল ও ইয়ামবিল। এমনকি আশপাশের পুকুরেও দেখা মেলে লাল শাপলার। চারটি বিলের অন্তত ৭০০ একর জায়গা লাল শাপলা দখল করে আছে। জৈন্তা রাজ্যের রাজা রাম সিংহকে এ হাওরে ডুবিয়ে মারা হয়েছিল। সেই স্মৃতিতেই নির্মিত দুইশত বছরের পুরাতন একটি মন্দিরও আছে সেখানে।

ডিবির হাওরের অন্যতম আকর্ষণ হলো হাওরের পার ঘেঁষা পাহাড়ের সারি। হরফকাটা ও ডিবি বিলের মধ্যে রয়েছে রাজা রাম সিংহের সমাধিস্থল। দূর পাহাড়ে দেখা মিলবে খাসিয়াদের পান-সুপারির বাগান। প্রকৃতির বুকে শিল্পীর তুলিতে আঁকা এ যেন এক নকশিকাঁথা।

সিলেট থেকে জৈন্তাপুরের ডিবির হাওরে ভোরে ঘুরতে আসা নাজমিন বেগম বলেন, জায়গাটি অনেক সুন্দর। ছবিতে যেমন দেখেছি বাস্তবে আরও সুন্দর। পরিবার নিয়ে এসেছি, দারুণ উপভোগ করছি। সিলেটের সৌন্দর্য দেখতে মানুষ ঘুরতে আসে বিভিন্ন জায়গা থেকে। এই মৌসুমে ডিবির হাওরের সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে। দেশের নানা প্রান্ত থেকে দর্শনার্থীরা ছুটে আসেন সিলেটে।

এজন্য নিরাপত্তা, খাবার ব্যবস্থা, মূল সড়ক থেকে বিল পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারের প্রয়োজন জানিয়ে তিনি বলেন, এসব ঠিক করলে পর্যটকের পরিমাণ আরও বাড়বে, আমাদের সিলেটের সুনামও বাড়বে।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *