Main Menu

ইউরোপে যাচ্ছে জৈন্তাপুরের ‘নাগা মরিচ’

নিউজ ডেস্ক:
নাগামরিচের নাম শুনলেই ঝাল প্রিয় ভোষন রশিকদের আগ্রহ বেড়ে যায়। সেই নাগামরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে এবার সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলায়। শুধু তাই নয় দেশের গন্ডি পেরিয়ে জৈন্তাপুরের নাগা মরিচ রপ্তানী হচ্ছে ইউরোপ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জৈন্তাপুরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী চলতি মৌসুমে রপ্তানিযোগ্য এই ফসলটি চাষ করে হাসি ফুটেছে উপজেলার কৃষকদের মাঝে।

এ মৌসুমে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ১২৫ হেক্টর জমিতে নাগামরিচের চাষ করা হয়েছে। তার মধ্য সিংহভাগই দরবস্ত ইউনিয়ন এলাকায়।

এখন পর্যন্ত কৃষকদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী চলতি মৌসুমে ৯ কোটি ৩৬ লক্ষ টাকার মত নাগামরিচ বিক্রি করা হয়েছে। যা লক্ষমাত্রা পূরণ হয়ে অতিরিক্ত মুনাফা আদায় করতে সক্ষম হয়েছে কৃষকগণ। চলতি মৌসুমে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে বৃহৎ ও মাঝারি পর্যায়ে ৭৮০ জন কৃষক নাগামরিচের আবাদ করেছেন।

উপজেলার সফল এক নাগামরিচ চাষী দরবস্ত ইউনিয়নের শ্রিখেল গ্রামের মোহাম্মদ আলির ছেলে শাহরুল আম্বিয়া জানান, চলতি মৌসুমে আশ্বিন মাসে তিনি ৫ বিঘা জমিতে নাগামরিচের আবাদ করেন। তার আবাদকৃত চারার পরিমান ৪ হাজার ৫০০র মত।

তিনি বলেন, আশ্বিন মাসের পর বৃষ্টি কম হওয়ায় এবং কার্তিকের খরার কারণে এ বছর নাগামরিচের ফলন ভালো হয়েছে। সেই সাথে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া সার বীজ ও উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাঠ পরিদর্শনের ফলে ফলন ভালো হয়েছে বলে।

তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে তার মোট চাষাবাদ বাবদ ব্যয় প্রায় তিন লক্ষ টাকার মত। সামনের ফসল তুলা ও আনুষঙ্গিক খরচ বাবদ আরো দেড় লক্ষ টাকার মত ব্যয় হবে। তিনি মৌসুমের শেষ পর্যন্ত বারো লক্ষ টাকার নাগামরিচ বিক্রি করার আশাবাদী বলে জানান।

নাগামরিচ গুলোর মূল ক্রেতা কারা এ প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ঢাকার শ্যামপুর,তাঁতিবাজার, কারওয়ান বাজার ও চট্টগ্রামের খাতুনগন্জ থেকে পাইকাররা এসে নাগামরিচ কিনেন।

উপজেলার অপর এক সফল চাষি, জৈন্তাপুর ইউনিয়নের ভিত্রিখেল গ্রামের ছানু মিয়ার ছেলে জহিরুল ইসলাম বলেন, চলতি মৌসুমে তিনি ৪ বিঘা জমিতে নাগামরিচ আবাদ করেন। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে তাকে প্রদর্শনী দেয়া হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, চলতি মৌসুমে তার বিক্রি লক্ষমাত্রা ১০ লক্ষ টাকা অধিক বলে তিনি জানান। তিনি বলেন দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকারেরা মরিচ কিনতে জৈন্তাপুরে আসেন। মৌসুমের শুরুতে প্রতিপিছ ৬ টাকা দরে বিক্রি করলেও ফসল বাড়ার সাথে সাথে তার দাম কিছুটা কমে আসে। বর্তমানে ২০ লিটার প্লাস্টিকের বালতি সমপরিমান চার বালতিতে এক বস্তা প্রস্তুত করা হয়। এক বস্তা মরিচের বর্তমান মূল্য তেরো থেকে সাড়ে তেরো হাজার টাকার মত। তিনি বলেন মরিচগুলো বস্তা হিসেবে কিনে উপজেলার সারিঘাট, দরবস্তে নিয়ে কার্টনে ভরে প্যাকেট জাত করা হয়। বর্তমানে জৈন্তাপুরের উৎপাদিত নাগামরিচ বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে শুনে নিজেকে একজন গর্বিত কৃষক মনে করছেন জহিরুল আলম।

এ বিষয়ে জৈন্তাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামীমা আক্তার জানান, নাগামরিচ একটি রপ্তানিযোগ্য কৃষি ফসল। সিলেটের তিনটি ফসল জারালেবু, নাগামরিচ ও গোয়ালগাদ্দা শিম বর্তমানে ইউরোপ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। তার মধ্যে জারালেবু ও নাগামরিচ জৈন্তাপুরে উৎপাদিত সর্বাধিক।

তিনি আরো বলেন, কৃষক পর্যায়ে উন্নমানের চারা, সার সহ উপজেলায় ২৫টি প্রদর্শনী প্লট তৈরী করে দেয়া হয়েছে। তাছাড়াও উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিকভাবে মাঠ পরিদর্শন ও কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছে।

তিনি জানান, বেশ কয়েক বছর নাগামরিচের রপ্তানি ইউরোপ সহ বিভিন্ন দেশে হয়ে আসছে। চলতি বছরে রপ্তানিকারকদের একটি প্রতিনিধি দল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাথে যোগাযোগ করেছে। তারা কন্ট্রাক ফার্মের ভিত্তিতে কৃষকদের কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই লক্ষ্যে রপ্তানিযোগ্য ফসল হিসেবে আমরা কিছু বৈশিষ্ট্য অনুসরণ করছি। গুড এগ্রিকালচার ফার্মিং অর্থাৎ উত্তম কৃষি চর্চার মাধ্যমে নির্দিষ্ট পরিমান,চারা,সার কতটুকু দুরত্বে চাষ হবে সেই সাথে জৈব বালাইনাশক ব্যবহার নিশ্চিতে কাজ করা হচ্ছে।

তিনি জানান, চলতি বছর ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে ঢাকা থেকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উর্ধতন কর্মকর্তা ও রপ্তানিকারকদের একটি প্রতিনিধি দল জৈন্তাপুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের নাগামরিচ ও জারালেবুর বাগান পরিদর্শন করেছেন। তারা নাগামরিচ চাষীদের সাথে বিভিন্ন পরামর্শ মুলক আলোচনা ও দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *