সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ভৌতিক হোল্ডিং ট্যাক্স, ক্ষুব্ধ নগরবাসী

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ভৌতিক হোল্ডিং ট্যাক্স, ক্ষুব্ধ নগরবাসী
সিলেট সিটিকর্পোরেশন নতুন এসেসমেন্টের উপর ভিত্তি করে নগরবাসীর উপর ভৌতিক হোল্ডিং ট্যাক্স বসিয়েছে।
শতকরা ৫ হাজার থেকে শুরু করে ১০ হাজার ১১ ভাগ পর্যন্ত ট্যাক্স বাড়ানো হয়েছে। পৃথিবীর কোন দেশে এমন নজির আছে বলে কারো জানা নেই। কেউ কেউ বলছেন এই কর্ম করে সিসিক গ্রিনিচ বুকে নিজেদের নাম লিখাতে পারবে। ট্যাক্স বাড়ে শতকরা ৫,১০ কিংবা ৫০ ভাগ আর এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। সিসিক বাড়িয়েছে শতকরা ১০ হাজার ভাগ কোন কোন ক্ষেত্রে এর চেয়ে আরো বেশি।
রবিবার (৫ মে) সিলেট সিটিকর্পোরেশন প্রাঙ্গনে গিয়ে দেখা যায় মানুষের দীর্ঘ লাইন। নতুন এসেসমেন্টে হোল্ডিং ট্যাক্সের শতকরা হার নিয়ে নাগরিকরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। অনেকেই ভৌতিক এবং অমানবিক হোল্ডিং ট্যাক্সের এই কার্যক্রম বন্ধ এবং বাতিল করার দাবী জানান। প্রয়োজনে তারা মামলা এবং গণআন্দোলন করারও হুমকি দেন।
২১ নং ওয়ার্ডে বসবাসকারী পিন্টু চন্দ্র (৩৫) একটি সেলুনে কাজ করেন। তিনি বছরে হোল্ডিং ট্যাক্স দিতেন ১২০০ টাকা । নতুন এসেসমেন্টে এটা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৫৪ হাজার টাকা অথাৎ শতকরা ৪,৫০০ ভাগ বাড়ানো হয়েছে। তিনি কাঁদ কাঁদ কন্ঠে বলেন, টিনের ঘরে বসবাস করি আমরা নিম্ন আয়ের মানুষ বছরে এতো টাকা কিভাবে পরিশোধ করবো।
২৭ নং ওয়ার্ডে বসবাসকারী সংবাদকর্মী আফরোজ খানের বার্ষিক হোল্ডিং ট্যাক্স ছিলো ৩০৮৬ টাকা। নতুন এসেসমেন্টে এটা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১,৫৬,৬০০টাকা । শতকরা হারে প্রায় ৫০৭৮ ভাগ। তিনি তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন-এসেসমেন্টের সময় সিসিকের লোকজনের মাথা হয়তো ঠিক ছিলো না। জানিনা তারা কী খেয়ে এমন উদ্ভট কাজ করেছেন।
সুজন সভাপতি ফারক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে এমন অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত নগরপিতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। বিষয়টি নিয়ে প্রথমে নগরবাসীর সাথে সিসিক মতবিনিময় করে শতকরা কতভাগ ট্যাক্স বাড়াবে তা নির্ধারণ করতে পারতো। তিনি বলেন, সময় এখনও ফুরিয়ে যায়নি, বর্তমান হোল্ডিং ট্যাক্স এর কার্যক্রম স্থগিত করে একটি সার্বজনিন সভা করে সকলের মতামতের ভিত্তিতে হোল্ডিং ট্যাক্সের হার নির্ধারণ করা হোক।
সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বারের সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুল জব্বার জলিল বলেন, যারা হোল্ডিং ট্যাক্স দেয় তাদের উপর বোঝা না চাপিয়ে নতুন ট্যাক্সদাতা তৈরী করা উচিত। হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়াবার আগে নাগরিক সুযোগ সুবিধা বাড়াতে হবে। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির এই সময়ে যখন মানুষের নাভিশ্বাস তখন এমন ভৌতিক
হোল্ডিং ট্যাক্স মেনে নেয়া যায় না। এই কার্যক্রম স্থগিত করে সহনীয় হারে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানো হউক।
সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকী বলেন, নতুন এসেসমেন্টে হোল্ডিং ট্যাক্স এর যে হার বসানো হয়েছে এটা রীতিমত নগরবাসীর সাথে জুলুম। নির্বাচনের পূর্বে মেয়র মো: আনোয়া্রুজ্জামান চৌধুরী বহুবার বলেছেন, ট্যাক্স না বাড়িয়ে তিনি নাগরিক সুযোগ সুবিধা বাড়াবেন,নগরবাসীকে গ্যাস দেবেন।
ভৌতিক এই হোল্ডিং ট্যাক্স কার্যক্রম দ্রুত বন্ধ করারও তিনি দাবী জানান।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে মেয়র মো: আনোয়ারুজ্জামানের মোবাইলে বার বার ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। রাত ১১.৪৫ মিনিটে পূনরায় চেষ্টা করলে তাঁর মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
পরে জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে ভয় পাবার কিছু নেই। মানবিক মেয়র মো: আনোয়ারুজ্জামান মহোদয় বিষয়টি দেখবেন। তিনি আরো বলেন হোল্ডিং ট্যাক্সের এই কার্যক্রমটি সাবেক মেয়র মহোদয় আরিফুল হক চৌধুরীর সময়ে নেয়া হয়েছিলো।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিসিকের এক ওয়ার্ড-কাউন্সিলর জানান, সিলেটকে গ্রীন সিটি, ক্লিন সিটি ও স্মার্ট সিটি বিনির্মাণে এবং ফুটপাত থেকে হকার সরিয়ে মেয়র মো: আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ইতোমধ্যে নগরবাসীর দৃষ্টি কেড়েছেন। তাকে বিতর্কিত করতে সিসিকে ঘাপটি মেরে বসে থাকা সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর অনুসারীরা প্ররোচনা দিয়ে হোল্ডিং ট্যাক্স এর এই নাটক মঞ্চস্থ করছে।
Related News

সুনামগঞ্জে হাওরে জলাবদ্ধতায় বিপাকে কৃষক
সুনামগঞ্জে হাওরে জলাবদ্ধতায় বিপাকে কৃষক চলতি বোরো আবাদ মৌসুমে সুনামগঞ্জের বেশ কয়েকটি হাওরে জলাবদ্ধতার কারণেRead More

ভারতের উচিত সীমান্ত হত্যা বন্ধ করা: মির্জা ফখরুল
ভারতের উচিত সীমান্ত হত্যা বন্ধ করা: মির্জা ফখরুল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন,Read More