রাগ বাড়াতে পারে নানা রোগ, নিয়ন্ত্রণ করবেন যেভাবে
নিউজ ডেস্ক:
ক্রোধ বা রাগ একটি স্বাভাবিক তীব্র মানসিক অবস্থা, যা অনুভূতিতে আঘাত প্রাপ্তির ফলে একটি শক্তিশালী অস্বস্তিকর এবং অসহযোগী প্রতিক্রিয়া হয়ে থাকে মানুষ । ক্রোধের সম্মুখীন একজন ব্যক্তি মানসিক অবস্থার পাশাপাশি প্রায়ই শারীরিক প্রভাবও অনুভব করেন। যেমন: হৃদ্স্পন্দন বৃদ্ধি, উচ্চ রক্তচাপ এবং অ্যাড্রেনালিন ও নোরাড্রেনালিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
ভালোবাসা, দুঃখ-বেদনার মত রাগও একটি আবেগ। ছোট কিংবা বড় বিভিন্ন ঘটনায় আমরা রাগ প্রকাশ করি। কিন্তু এই আবেগটি বেশি প্রকাশ পেলে নানা বিপত্তি তৈরি হয়।
অনেকেই রেগে গেলে ভাঙচুর করেন, উচ্চস্বরে চিৎকার করেন, এমনকি গায়ে হাতও তুলে ফেলেন। অতিরিক্ত রাগের প্রভাব পড়তে পারে ব্যক্তিজীবন, সামাজিক ও পেশাগত জীবনে। দেখা দিতে পারে উচ্চ রক্তচাপ, খিটখিটে মেজাজের মতো সমস্যাও। তাই লাগাম টেনে ধরতে হবে এই রাগ নামক আবেগের।
যেকোনো মানুষের শরীরেই রাগ থাকে, তবে অতিরিক্ত রাগ হলে সেটা অস্বাভাবিক। এর পেছনে লুকিয়ে থাকে কোনো না কোনো মানসিক রোগ। অতিরিক্ত রাগ শরীরে নেতিবাচক প্রভাবও ফেলে। পারিবারিক, সামাজিক জীবন ও পেশাগত জীবনকে ব্যাহত করে। অস্বাভাবিক রাগের কারণ ও প্রতিকার নিয়ে চিকিৎসকরা জানান–
রাগের কারণ:
জেনেটিক বা বংশগত।
পরিবেশগত : অত্যধিক এবং দীর্ঘমেয়াদি চাপ।
দীর্ঘমেয়াদি উৎপীড়ন/উত্ত্যক্তকরণ।
অতিরিক্ত ক্লান্তি, ক্ষুধা, ঘুমের অভাব।
বঞ্চিত থাকা, অর্থনৈতিক, সামাজিক, পেশাগত জীবনে দীর্ঘমেয়াদি বঞ্চিত করা, স্নেহ, মমতা, ভালোবাসার অভাব।
নেশাদ্রব্য সেবন: অতিরিক্ত রাগের অন্যতম প্রধান কারণ।
সম্পর্কগত সমস্যা: Conflict, স্বামী-স্ত্রী, মা-বাবা, ভাই-বোন, সন্তানের সঙ্গে দ্বন্দ্বমূলক সম্পর্ক।
অতিরিক্ত টিভি দেখা, পর্নোগ্রাফি আসক্তি, ইন্টারনেট বা ফেসবুকে আসক্তি।
দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক অসুস্থতা: ব্যথা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হাঁপানি, হৃৎপিণ্ডের সমস্যা, হাড় ভাঙা, ঈর্ষা, পারকিনসনিজম, স্ট্রোক, মৃগিরোগ, ব্রেইন টিউমার, লিভার, কিডনি ও হার্টফেইলিউরের রোগী।
রাগ নিয়ন্ত্রণ :
বিভিন্ন কারনে আমরা রাগান্বিত হয়ে যাই। রাগ একটি স্বাভাবিক আবেগ। সেনাবাহিনীতে যারা কাজ করেন তাদেরকে রাগ নিয়ন্ত্রণ করা শেখানোর জন্য নিয়মিত কোর্স করানো হয়। নিয়ন্ত্রিত রাগ স্বাভাবিক, স্বাস্থ্যসম্মত এমনকি কখনো কখনো প্রয়োজনীয়। কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত রাগ বয়ে আনতে পারে সীমাহীন দুর্ভোগ। ব্যক্তিগত, সামাজিক জীবনেও এর প্রভাব পড়তে পড়তে পারে দীর্ঘ মেয়াদে এমনকি আজীবন।
কখন মানুষ রাগ করে? কেউ যখন দেখে তাকে বারবার তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা হচ্ছে, তার উপযুক্ত সম্মান বা অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করা হচ্ছে, তার সাথে ধোঁকা দেওয়া হচ্ছে, তার নম্রতা কিংবা দয়াকে দুর্বলতা হিসেবে ধরে তাকে অপমান করা হচ্ছে অথবা তার প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে এমন পরিস্থিতিতে একজন মানুষের রাগান্বিত হওয়াটা স্বাভাবিক ঘটনা।
এছাড়াও হঠাৎ করে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বিব্রতকর বা অসম্মানজনক, অসৌজন্যমূলক আচরণের প্রতিক্রিয়া হিসেবেও কখনো কখনো মানুষ রাগান্বিত হতে পারে।
রাগ নিয়ন্ত্রণের একটি জনপ্রিয় মডেল আছে। এটি ইংরেজিতে এটি হলো এবিসিডি মডেল।
এ- a হলো activating event বা ঘটনার সূত্রপাত
বি – b হলো bilief system বা আপনার বিশ্বাস বা দৃষ্টিভঙ্গি
সি – c হলো consequences বা ফলাফল
ডি – d হলো । disputes বা আপনার যুক্তি
কী করণীয়
দ্রুত স্থান ত্যাগ করুন।
অবস্থান পরিবর্তন করুন।
ক্ষমা করে দিন।
টপিক পরিবর্তন করুন।
অন্যের পরামর্শ গ্রহণ করার চেষ্টা করুন।
আপনার প্রতিক্রিয়ার ফলাফল কি হবে কল্পনা করুন।
রাগের সূত্রপাতের পেছনে একজনের ভুল নাকি প্রতিহিংসা সেটা বিবেচনা করুন।
ভুল হলে ক্ষমা করে দিন।
আর প্রতিহিংসা হলে বুঝেশুনে, শক্তিসামর্থ্য অনুযায়ী জবাব দিন। মার খাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে বা পরাজিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে প্রস্থান করুন, ভাগুন। মনে রাখবেন, এটাই পৃথিবীর শেষ ঘটনা নয়।
রাগের মাথায় কখনো সিদ্ধান্ত নেবেন না। কোনো প্রতিজ্ঞা করবেন না। কারো সাথে জেদ করবেন না। অপমানজনক কিছু বলবেন না। ভাঙচুর বা মারামারি করবেন না।
রাগের চিকিৎসা
রাগ নিয়ন্ত্রণে তিন ধরণের চিকিৎসা হয়ে থাকে। ফিজিক্যাল ওষুধ, সাইকোলজিক্যাল ও সোশ্যাল।
সাইকোলজিক্যাল : CBT, Family Therapy, (ফ্যামিলি থেরাপি)। এনগার ম্যানেজমেন্ট রিলাক্সজেশন থেরাপি। দীর্ঘমেয়াদি কাউন্সেলিংই অতিরিক্ত রাগ নিয়ন্ত্রণে আনার সর্বোত্তম পন্থা, রাগের চিকিৎসা করলে হবে না, রাগের পেছনে লুকিয়ে থাকা মানসিক রোগ শনাক্ত করে ট্রিটমেন্ট করতে হবে।
অতিরিক্ত রাগের শারীরিক প্রভাব:
হৃৎপিণ্ডের গতি বৃদ্ধি, বুকে চাপ অনুভব, শ্বাসকষ্ট, রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া, দীর্ঘ মেয়াদে হাইপারটেনশন, মাথাব্যথা, চুল পড়ে যাওয়া, মাংসপেশি শক্ত হয়ে যাওয়া, মস্তিষ্কের হাইপোথেলামাস থেকে কর্টিসল হরমোন নিঃসরণ, cortisol হরমোন রক্তে বেশি থাকলে দীর্ঘমেয়াদি হার্টে সমস্যা হতে পারে। দেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে গিয়ে জীবাণুজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
Related News
অভিজ্ঞতা ছাড়াই চাকরী দেবে দারাজ
অভিজ্ঞতা ছাড়াই চাকরী দেবে দারাজ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে দারাজ বাংলাদেশ লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি ডেলিভারি ম্যানRead More
শীতে লবঙ্গ খাবেন যে কারণে
শীতে লবঙ্গ খাবেন যে কারণে। শীতের সময়ে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও বেশি শক্তিশালী করাRead More