Main Menu

বাংলাদেশ থেকে অভিবাসী হিসেবে ইতালি যাওয়ার উপায়

নিউজ ডেস্ক:
ইউরোপ তো বটেই, বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধ দেশ ইতালি। উন্নত জীবন ও জীবিকার সন্ধানে বৈধ বা অবৈধ উপায়ে প্রতিদিনিই ইতালির উদ্যেশে পাড়ি জমাচ্ছে অভিবাসন প্রত্যাশীরা। এর কারণ হচ্ছে ইতালি বরাবরই প্রমাণ করে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক মানবিক তারা।

বিদেশিদের প্রতি ইতালির মানুষের সহৃদয় মনোভাব বেশি। তাছাড়া, প্রায়ই অস্থায়ী অভিবাসী শ্রমিকদের বৈধতা দেয় দেশটি।

একারণেই যেপথেই আসুক না কেন একবার দেশটিতে গেলেই একসময় বৈধতা পাবে বলে মনে করেন অনেকে। তাইতো ইউভুক্ত ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশিদের কাছে পছন্দের দেশ ইতালি।

কিন্তু বাংলাদেশি থেকে থেকে ইতালি যাওয়ার উপায় কী| আবেদন প্রক্রিয়াই বা কেমন। আসুন জেনে নেই বাংলাদেশ থেকে্ ইতালি যাওয়ার উপায়।

দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর গেল বছরের ২৭ শে জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশিদের জন্য ইতালি ভিসা আবেদন শুরু হয়েছে।

আট বছর বন্ধ থাকার পর ইতালি বাংলাদেশিদের জন্য সিজনাল ও নন সিজনাল ভিসা আবেদনের সুযোগ করে দিয়েছে৷ এই স্কিমের অধীনে বাংলাদেশসহ ৩০টি দেশ থেকে ৬৯ হাজার ৭০০ অভিবাসীকর্মী আনার অনুমতি দিয়েছে দেশটির শ্রম ও সামাজিক পরিকল্পনা বিষয়ক মন্ত্রণালয়৷

ইউরোপের বাইরে থাকা কতজন অভিবাসী কাজের ভিসায় ইতালিতে আসতে পারবেন সেটি নিয়ে প্রতি বছর ডিক্রি জারি করে দেশটির সরকার। চলতি ২০২৩ সালের জন্য এই সংখ্যা সাত হাজার বাড়িয়ে ৮২ হাজার ৭০৫টি করেছে ইতালি।

ইতালির ভিসা

ইতালি ভিসার মূল ক্যাটাগরি দুটি। সিজনাল ও নন সিজনাল ইতালি ভিসা। সিজনাল ভিসার মধ্যে আবার কয়েকটি প্রকারভেদ আছে। এছাড়াও প্রতিবছর ইতালিতে বিভিন্ন দক্ষ শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়।

ইতালি স্পন্সর ভিসা

ইতালি প্রতিবছর বিভিন্ন রাষ্ট্র থেকে অনেক জনশক্তি আমদানি করে। বাংলাদেশ থেকেও এ বছর ইতালি স্পন্সর ভিসা চালু করা হয়েছে। আপনি যদি বাংলাদেশ থেকে ইতালি যেতে চান। তাহলে আপনাকে সরকারিভাবে ইতালি প্রবেশ করতে হবে।

এছাড়াও ইতালি স্পন্সর ভিসার জন্য একটি বৈধ পাসপোর্ট লাগবে। আপনি যে কোম্পানির অধীনে ইতালি কাজ করবেন, সেই কোম্পানির অ্যাপোয়েন্টমেন্ট লেটার। আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি। ইতালি যাওয়ার জন্য প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে।

ইতালি স্টুডেন্ট ভিসা

বাংলাদেশ থেকে আপনি চাইলে উচ্চশিক্ষা লাভ করার জন্য ইতালি যেতে পারেন। ইতালিতে উচ্চশিক্ষা লাভ করার অনেক ডিগ্রি ও প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ইতালি স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আপনার কিছু যোগ্যতার প্রয়োজন হবে।

আপনি যখন ইতালি স্পন্সর ভিসা পাবেন, তখন আপনার কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কিন্তু আপনি যখন স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে ইতালি যাবেন। আপনার কিছু আলাদা ভাবে যোগ্যতার প্রমাণ দি jfiতে হবে। আপনাকে প্রথমে HSC পরীক্ষায় সন্তুষ্টজনক ফলাফল অর্জন করতে হবে। আপনার একটা বৈধ পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয় পত্র থাকতে হবে।

ধরুন আপনি ইতালি গিয়ে University of Bologna বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চান। সেই বিশ্ববিদ্যালয় যদি আপনাকে গ্রহণ করে। তাহলে University of Bologna আপনাকে একটা আমন্ত্রণপত্র দেবে। সেই আমন্ত্রণ পত্র ভিসা করার সময় জমা দিতে হবে। এছাড়াও ইংরেজি ভাষায় দক্ষ হতে হবে। এই কয়েকটা যোগ্যতা থাকলে আপনি ইতালি স্টুডেন্ট ভিসা করতে পারবেন।

বাংলাদেশ থেকে ইতালি যাওয়ার জন্য প্রথমে আপনার একটি বৈধ পাসপোর্ট লাগবে। আপনাকে আগেই বলে রাখি, আপনি যদি বাংলাদেশ থেকে সরকারিভাবে ইতালি যাওয়ার জন্য প্রথমে একটি বৈধ পাসপোর্ট লাগবে।

আপনার পাসপোর্ট এর মেয়াদ সর্বনিম্ন ১ বছর থাকতে হবে। আপনি কোন ক্যাটাগরির ভিসা নিয়ে যেতে চাচ্ছেন এটা জানাতে হবে। আপনি যদি পর্যটক হিসেবে ইতালি যান, তাহলে আপনাকে সিজনাল ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।

আবার আপনি যদি নির্মাণ শ্রমিক হিসাবে ইতালি যেতে চান। তাহলে আপনাকে নন সিজনাল ভিসার নিয়ে ইতালি পাড়ি জমাতে হবে। আপনি যে ক্যাটাগরি ভিসার মাধ্যমে ইতালি যান না কেন? আপনাকে বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ইতালি যেতে হবে।

ইতালি ভিসা খরচ

ইতালি ভিসা খরচ নির্ভর করবে আপনার ইতালি ভিসা ক্যাটাগরির উপর। ইতালিতে দুই ধরনের ভিসা প্রচলিত আছে। ইতালি সিজনাল ভিসা ও ইতালি নন সিজনাল ভিসা।

আপনি যদি সিজনাল ভিসা ইতালি যেতে চান, তাহলে আপনার সর্বনিম্ন ৩/৪ লাখ টাকা লাগবে। আবার আপনি যদি নন সিজনাল ভিসা নিয়ে ইতালি যেতে চান, তাহলে আপনাকে ৯/১০লাখ টাকা জমা দিতে হবে। আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে, সিজনাল ও নন সিজনাল ভিসা কি?

যারা ভ্রমণ করার জন্য/ব্যবসা করার জন্য ইতালি যাবে,তারা সিজনাল ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবে। সিজনাল ভিসা নিয়ে ইতালি গেলে আপনি সর্বোচ্চ ৬/৯ মাস ইতালি থাকতে পারবেন।

আর যারা কাজ করার জন্য ইতালি যেতে ইচ্ছুক, তাদের জন্য নন সিজনাল ভিসা প্রযোজ্য। আপনি যখন কোন কাজ করার জন্য ইতালি যাবেন। তখন ইতালির নন সিজনাল ভিসা নিতে হবে।

ইতালির ভিসার জন্য আবেদন

গেল বছর ২০২২ হতে শুরু হওয়া এই আবেদন পত্রে স্বনিযুক্ত শ্রমিক ও মৌসুমী কর্মীদের নিয়োগকর্তা এবং যারা বিদ্যামান রেসিডেন্সি পারমিট রূপান্তর করবে তাদের আবেদনপত্র গ্রহণ শুরু হবে।

আবেদনপত্র শুধুমাত্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে অনলাইনে করতে হবে। আবেদন করার জন্য আপনার একটি ইতালিও এসপি আইডি ইলেকট্রনিক্স আইডি প্রয়োজন হবে। তাই ইতালিতে বসবাসরতদের বাইরে থেকে কেউ করতে পারবে না।

আবেদনপত্রে, আপনি ইতালিতে কোথায় থাকবেন তার ঠিকানা বিবরণে পাশাপাশি কাজের চুক্তি ও প্রয়োজনীয় নথি, যেমন কর্ম সংস্থান চুক্তির একটি অনুলিপি বা যে কোন প্রসঙ্গে লাইসেন্স অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তাহলে শুধুমাত্র ইতালিতে প্রবেশ করতে পারবেন।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

ইতালি স্পন্সর ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রয়োজন আছে। এই সমস্ত কাগজপত্র গুলো নিয়েই দূতাবাসের মাধ্যমে তা জমা দিতে হবে।

৬ মাস মেয়াদী পাসপোর্ট
৪ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি
এনআইডি কার্ডের ফটোকপি
নিবন্ধন আইডি কার্ডের ফটোকপি
বর্তমানে কর্মরত তার প্রমান
বিদেশে কর্মরত থাকলে তার প্রমান
উক্ত কাগজপত্র সংগ্রহ করে আপনারা স্পন্সর ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে জেনে রাখা উচিত যে উক্ত কাগজপত্র গুলোতে যদি কোন ভুল ত্রুটি থেকে থাকে তাহলে অগ্রিম ভাবে তা ঠিক করে রাখতে হবে।

প্রয়োজনীয় দক্ষতা

নিয়োগকর্তার প্রয়োজনীয় নিয়ম অনুযায়ী যে সমস্ত রিকোয়ারমেন্ট গুলো চাওয়া হয় তা থাকতে হবে এবং পাশাপাশি ইতালি ভাষা সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে। নির্মাণ খাতে সাধারণত অদক্ষ কর্মী হিসেবে আগ্রহী হয়ে থাকলে অবশ্যই আবহাওয়া সম্পর্কে এবং নির্মাণ খাতে কাজের জন্য পরিবেশ সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে।

পাশাপাশি কোম্পানির ভিসা, হোটেল-রেস্তোরাঁ, শহর ড্রাইভিং অন্যান্য কাজের জন্য অবশ্যই অভিজ্ঞতা থাকা লাগবে। তা না হলে স্পন্সর ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন না। কৃষিকাজে যদি আপনি স্পন্সর ভিসার মাধ্যমে যেতে চান তাহলে অবশ্যই কৃষি বিষয়ে পারদর্শী হতে হবে। তাহলেই আপনারা স্পন্সর ভিসা পাবেন।

তবে এক্ষেত্রে আপনারা যদি বিদেশে এই কাজে নিয়োজিত ছিলেন অথবা কাজ করেছেন এমন কোন অভিজ্ঞতা থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুলো আগে থেকেই তৈরী করে নিবেন।

যদি এই সমস্ত কাগজপত্র না থাকে তাহলে আপনারা বাংলাদেশের বিভিন্ন বেসরকারি অথবা সরকারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে সমস্ত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে আপনারা খুব সহজেই স্পন্সর ভিসার জন্য প্রশিক্ষণ নিয়ে কাগজপত্র তৈরি করে নিতে পারবেন।

এজেন্সির মাধ্যমে আবেদনের কোনো সুযোগ নেই

ইতালি বা যেকোন দেশে কর্মী নিয়োগের কোনো সার্কুলার দেয়া হলে বাংলাদেশ থেকে আগ্রহী বেশিরভাগ আবেদনকারী সাধারণত বেসরকারি এজেন্সিগুলোতে ভিড় করেন। কিন্তু এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে মধ্যপ্রাচ্য বা অন্যান্য দেশগুলোর মতো ইতালিতে চাইলেই কোনো এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করা যায় না।

কৃষি, হোটেল-রেস্তোরাঁ, নির্মাণ খাতসহ সার্কুলারে তালিকাভুক্ত খাতগুলোতে মৌসুমি ও স্পন্সর উভয় ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন একমাত্র নিয়োগকর্তা। অর্থাৎ, ইতালিতে কৃষি বা অন্যান্য খাতে ব্যবসা করছেন এমন কোনো মালিক যদি তার প্রতিষ্ঠানের জন্য কর্মীর প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রে তিনি আবেদনকারীর বিস্তারিত তথ্য ও যাবতীয় সরকারি নিয়ম অনুসরণ করে সরকারের নির্দিষ্ট দপ্তরে আবেদন করবেন।

সরকার যাচাই-বাছাই করে আবেদন মঞ্জুর করলে পরবর্তীতে নিয়োগকর্তা ভিসাসহ অন্যান্য প্রস্তুতির জন্য আবেদনকারীকে অবহিত করবেন।

সর্বোপরি একজন আবেদনকারীর উচিত সরকারি বেতন কাঠামো এবং থাকা-খাওয়াসহ যাবতীয় খরচ সম্পর্কে অবগত হয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *