Main Menu

হাওরের ধানে ব্লাস্টের প্রাদুর্ভাব

নিউজ ডেস্ক:
হবিগঞ্জে বোরো ধানে ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে হাওরের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে ব্রি-২৮ জাতের ধান। কাটার মৌসুমে এসে দেখা যাচ্ছে কোনো ধানেই চাল নেই। আছে শুধু খোসা। চারাসহ ধানগুলো সাদা হয়ে গেছে। সব হারিয়ে এখন পরিবার পরিজন নিয়ে টিকে থাকা দায় হয়ে পড়েছে কৃষকদের।

সরেজমিনে বিভিন্ন হাওর ঘুরে জানা যায়, ব্রি-২৮ জাতের ধান অনেকটাই সরু। চালও সরু হয়। খেতেও সুস্বাদু। ফলনও ভালো হয়। এক বিঘা জমিতে অন্তত ২০ মণ ধান ফলে। তাছাড়া অন্যান্য ধানের চেয়ে এটি আগে কাটা যায়। ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগও এটিকে তেমন ক্ষতি করতে পারে না। আবার বিক্রি করতে গেলে বাজারে এর দামও বেশি মেলে। তাই এর প্রতি কৃষকদের আগ্রহ অনেক বেশি।

হবিগঞ্জ সদর, লাখাই, বানিয়াচং, আজমিরীগঞ্জ, নবীগঞ্জ, মাধবপুর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা হাওরবেষ্টিত। হাওর এলাকার প্রায় সবাই কৃষির উপর নির্ভরশীল। কেউ নিজের জমিতে আবার কেউ অন্যের জমি বর্গা নিয়ে আবাদ করেন।

এ বছর জেলায় বোরো আবাদ হয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ৫৭৫ হেক্টর জমিতে। এর মাঝে হাওরের একটি বৃহৎ অংশে কৃষকরা ব্রি-২৮ জাতের ধান আবাদ করেন। কিন্তু চলতি মৌসুমে কাটার সময় ধানে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। ব্লাস্ট রোগে নষ্ট হয়ে গেছে হাওরের পর হাওর ধান। গাছসহ ধান সাদা হয়ে গেছে। ভেতরে কোনো আঁশ নেই। পুরোটাই খোসা। এগুলো এখন জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

সদর উপজেলার লুকড়া গ্রামের কৃষক মো. তাহের হোসেন। নিজের জমি নেই। অন্যের জমি টাকার বিনিময়ে বর্গা নিয়ে আবাদ করেন। এ বছর ৩ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে আবাদ করেছিলেন। সব হারিয়ে এখন নিঃস্ব তিনি।

কথা বলতে গিয়ে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, আমি অসুস্থ মানুষ। ৩ বিঘা জমি চাষ করেছিলাম। কোনো জমিতেই একগোটা ধানও হয়নি। আমি পরিবার নিয়ে কীভাবে চলবো।

মো. ফরিদ উদ্দিন নামে এক কৃষক জানান, তাদের হাওরে প্রায় ২ হাজার বিঘা জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এ ধান এখন গরুকেও খাওয়ানো যাবে না। গরু এসব খায় না। এগুলো কেটে নিয়ে পোড়ানো ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

মো. জোয়াদ আলী নামে অপর এক কৃষক বলেন, আমরা ৯৫ ভাগ মানুষ হাওরে ব্রি-২৮ জাতের ধান রোপণ করি। এটির ফলনও ভালো হয়। এবার ১ শতাংশ ধানও হয়নি। সব নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আমরা কিভাবে খাবার যোগাড় করবো তা ভেবে পাচ্ছি না।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী জানান, এমনিতে জেলার আবহাওয়া ভালোই ছিল। কিন্তু ১৫-২০ দিন আগে হঠাৎ করেই দিনের তাপমাত্রা বেড়ে ৩২-৩৩ ডিগ্রি পর্যন্ত হয়। আর রাতে তাপমাত্রা কমে ঠান্ডা হয়। ফলে ব্রি-২৮ জাতের ধানে ব্লাস্ট ডিজিজের প্রকোপ দেখা দেয়। উপজেলা থেকে বিষয়টি অবহিত হওয়ার পর তাৎক্ষণিক নাটিবো এবং ট্রোপার এর মধ্যে যেকোনো একটি ছত্রাকনাশক দিয়ে রোগ প্রতিরোধ করা এবং প্রতিকারের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, হাওরে কৃষকরা ধান লাগিয়ে আসার পর তেমন একটা যত্ন নেন না। একেবারে কেটে নিয়ে আসেন। এ পর্যন্ত ব্লাস্ট রোগে জেলায় ৫০ থেকে ৬০ হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়েছে।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *