Main Menu

ডলার সঙ্কট : পণ্য আমদানি নিয়ে শঙ্কা

নিউজ ডেস্ক:
ডলার সংকটে এলসি খুলতে না পারায় পণ্য আমদানি নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে নানা শঙ্কা দেখা দেয়। এ অবস্থায় জানুয়ারিতে এলসি খোলার হার বাড়লেও আশ্বস্ত হতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন- পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও সেটা পর্যাপ্ত নয়। এছাড়া বন্দরে পণ্য আটকা পড়লে জরিমানাও গুনতে হচ্ছে।

জানা যায়, রমজানে ভোগ্যপণ্য আমদানি সহজ ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে এলসি খোলা জরুরি। এজন্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ডলার সরবরাহ করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে কয়েক দফা অনুরোধ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এরপর জানুয়ারি থেকে বেড়েছে এলসি খোলার হার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, সবশেষ জানুয়ারি মাসে ৫ লাখ ৬৫ হাজার ৯৪১ টন চিনির জন্য এলসি খোলা হয়েছে, যা গত বছর (২০২২-এর জানুয়ারি) ছিল ৫ লাখ ১১ হাজার ৪৯২ টন।

এছাড়া জানুয়ারিতে ৩ লাখ ৯০ হাজার ৮৫৩ টন তেলের জন্য এলসি খোলা হয়েছে, যা গত বছর ছিল ৩ লাখ ৫২ হাজার ৯৫৯ টন। একইভাবে বেশি খোলা হয়েছে ছোলা ও পেঁয়াজের এলসি। গত জানুয়ারিতে ২৯ হাজার ৪৮১ টন খেজুর আমদানির এলসি খোলা হয়েছে। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ১৬ হাজার ৪৯৮ টন ছিল। এছাড়া ৮ হাজার টন বেড়ে ৪২ হাজার ৫৬২ টন পেঁয়াজের জন্য এলসি খোলা হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘রমজানের পণ্যে আর কোনো সমস্যা নেই। সবাই এখন এলসি খুলতে পারছে। তারপরেও কোনো সমস্যা হলে সে বিষয়ে সহায়তা দিচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।’

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলার সরবরাহ করতে বাংলাদেশ ব্যাংক অন্য ব্যাংককে নির্দেশনা দিলেও সেটার সমাধান হয়নি। ফলে ভোগ্যপণ্য আমদানি সহজ ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে এলসি খোলার জন্য ডলার সংকট রয়েই গেছে। এছাড়া বন্দরে আটকে পড়া পণ্যের জন্য এখনো তাদের জরিমানা গুনতে হচ্ছে। এগুলোর প্রভাব পড়বে রমজানের পণ্যমূল্যে।

দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ টিকে গ্রুপের পরিচালক মোস্তফা হায়দার বলেন, ‘সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু এখনো আমরা সেটার কোনো সুফল পাইনি। ডলারের একটা রেট সরকার ধার্য করেছে। তবে এখনো এলসিতে ক্রাইসিস রয়েছে। আমরা ম্যানেজ করছি, কিন্তু সেটার জন্য বাড়তি খরচ হচ্ছে। কোনো না কোনোভাবে সেটা হচ্ছে জটিলতার মধ্য দিয়ে।’

রমজানের পণ্য খালাসে কোনো জটিলতা তাদের ছিল না জানিয়ে মোস্তফা হায়দার বলেন, ‘আমরা আউটার থেকে পণ্য খালাস করি। সেটা নিয়ে কোনো সমস্যা হয়নি।’

ডলার সংকটের কারণে এলসি না খুলতে পারার বিভিন্ন অভিযোগ ভিত্তিহীন জানিয়ে কয়েকদিন আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, ‘রমজানে ভোগ্যপণ্যের পর্যাপ্ত এলসি খোলা হয়েছে। রমজান শুরুর আগে এসব এলসির পণ্য দেশে আসবে। সরবরাহ ও শৃঙ্খলা ঠিক থাকলে রমজানে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ার কোনো আশঙ্কা নেই।’

তিনি বলেন, ‘ব্যাংকগুলোকে এলসির দায় পরিশোধে সহায়তার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রতিনিয়ত ডলার বিক্রি করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসেই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে বিক্রি করা হয়েছে ৯২০ কোটি ডলার। দেশের ইতিহাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এর আগে কখনই এত পরিমাণ ডলার বিক্রি করতে হয়নি।’

ডলার সংকটে বিল পরিশোধ না করতে পারায় চট্টগ্রাম বন্দরে শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন আমদানিকারকের পণ্য আটক করে গত মাসে। বিলম্বের জন্য তাদের পণ্য খালাসে বাড়তি জাহাজ ভাড়া ও জরিমানাও গুনতে হয়েছে। সেখানে এস আলম গ্রুপ এবং মেঘনা গ্রুপের পণ্যও ছিল।

এ বিষয়ে মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের সিনিয়র সহকারী মহাব্যবস্থাপক তসলিম শাহরিয়ার বলেন, ‘বেশ জটিলতার পরে পণ্যগুলো বন্দর থেকে খালাস করা গেছে। তবে সেজন্য আমাদের বাড়তি ভাড়া ও জরিমানাও গুনতে হয়েছে। জাহাজের বিপরীতে প্রতিদিন ৪০ হাজার ডলার জরিমানা দিতে হয়েছে, যা পুরোটাই লোকসান।’

বর্তমানে বন্দরে পণ্য খালাস পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. আরিফ বলেন, ‘কিছু কোম্পানির পণ্য খালাস হয়েছে। তবে সবগুলো খালাস হয়নি। কিছু জাহাজ এখনো আউটারে রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘যেগুলো খালাস হচ্ছে, সেটা বিলম্বে। কিন্তু একটি জাহাজ ১০-১২ দিন বসে থাকলে সেটার খরচ বাড়ছে। এগুলোর প্রভাব কিন্তু পণ্যের দামের ওপর পড়বে, যা অবশেষে ভোক্তাকেই বহন করতে হবে।’

গত ডিসেম্বর থেকেই রমজানকেন্দ্রিক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির এলসি খোলা শুরু হয়েছে। জানুয়ারিতে বাড়লেও ডলার সংকটের কারণে নিত্যপণ্য আমদানি বিল পরিশোধে দেরি হয়েছে গত বছরের শেষ কয়েক মাস। তখন এলসি খোলায়ও দেখা দিয়েছিল চরম জটিলতা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই সময়ের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের শেষ চার মাসে অপরিশোধিত চিনির এলসি আগের বছরের চেয়ে ২৮ শতাংশ কমেছে। এছাড়া অপরিশোধিত সয়াবিন তেল ৪৭ শতাংশ, সয়াবিন ৮৩ শতাংশ, অপরিশোধিত পাম তেল ৯৯ শতাংশ, ছোলা ৪৭ শতাংশ ও খেজুর আমদানির এলসি খোলা কমেছে ৩০ শতাংশ।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *