Main Menu

হাওরে ভাসছে যুবকদের স্বপ্ন

বিদেশবার্তা২৪ ডেস্ক:
সুনামগঞ্জের ১২টি উপজেলার বিস্তৃর্ণ হাওর এলাকায় অসংখ্য খালবিল হাওর জলাশয়ে হাঁস পালনের জন্য বিপুল সম্ভাবনাময় স্থানে সুযোগ রয়েছে। আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বেকার যুবকরা ধার-দেনা করে স্বপ্ন নিয়ে হাঁস পালনে আগ্রহী হচ্ছে কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই। অনেক যুবক এই হাসেঁর খামার করে সফল হয়েছেন। আর অনেক যুবকের খামারের হাসঁ এখন হাওরের পানিতে ভাসছে, ভাসছে খামারীদের আগামীর সম্ভাবনা স্বপ্ন।

জেলার সচেতন মহল বলেন, ধান মাছ চাষের চেয়েও হাঁস পালনে লাভ বেশি। তাই সরকারিভাবে হাওরাঞ্চলে বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে হাঁসের খামার করাতে পারলে তাদের ভাগ্য বদলে দেয়া সম্ভব হবে। হাঁস পালন করায় দেশের সবচেয়ে বেশি হাঁসের ডিম উৎপাদন হয় হাওরবেষ্টিত জেলা সুনামগঞ্জে।

স্থানীয় হাঁসের খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলায় খামারিরা নিজেদের উদ্যোগে হাঁসের খাদ্যের ব্যবস্থা করলেও খোলা হাওরের বিল বাদলে হাঁস ঘুরে ঘুরে খাবার খেলে জলজ, মৎস্যসহ সব ধরণের প্রাকৃতিক খাবার গ্রহণ করতে পারে। জানুয়ারি মাস থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত হাঁসের বিচরণ ক্ষেত্র সংকুচিত হয়ে পড়ে। এ সময় হাওরের জমিতে ফসল উৎপাদন করায় হাঁস চড়ে খেতে পারে না। এই সময় হাঁস এসব খাদ্য থেকে বঞ্চিত হয়ে ডিম পাড়া বন্ধ করে দেয়। এপ্রিল মাস থেকে পুরো নভেম্বর মাস পর্যন্ত হাঁসের কোন ধরণের খাদ্য সংকট থাকে না। তাই প্রচুর পরিমাণে ডিম দেয়।

জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জ জেলায় সবচেয়ে বেশি হাসেঁর খামার ধর্মপাশায় ৩৫৮টি, ছাতকে ৩২৩টি, শান্তিগঞ্জে ৩১৫টি, সদর উপজেলায় ২৯৫টি, দিরাইয়ে ২৯৫টি, বিশ্বম্ভরপুরে ২৮১টি, তাহিরপুরে ১৫৫টি, দোয়ারাবাজারে ২৩৫টি, জামালগঞ্জে ২৮০টি, শাল্লায় ১৫৮টি ও জগন্নাথপুরে ১৭৫টিসহ মোট ২ হাজার ৮৭০টি হাঁসের খামার রয়েছে।

এসব খামারে ও গৃহস্থ পরিবারে ২৭ লাখ ৩০ হাজার ৪৪২টি হাঁস রয়েছে। সারা বছরে জেলায় হাঁসের ডিম উৎপাদন হয় ২৭ কোটি ৫৫ লাখ ১১ হাজার ১৮৬ টি। জেলায় ডিমের চাহিদা রয়েছে ২৫ কোটি ৬৬ লাখ ৬৯ হাজার ৭১২টি। উদ্বৃত্ত থাকে ১ কোটি ৮৮ লাখ ৪৭৪ হাজারেরও বেশি ডিম।

জেলায় উৎপাদিত ডিমের দাম প্রতিটি ডিম দশ টাকা দরে ডিমের দাম ২৭৫ কোটি ৫১ লাখ ১১ হাজার ৮৬০ টাকা। চাহিদাকৃত ডিমের দাম ২৫৬ কোটি ৬৬ লাখ ৯৭ হাজার ১২৭ টাকা। উদ্বৃত্ত ডিমের বাজার দর ১ কোটি ৮৮ লাখ ৪ হাজার ৭৪০ টাকা।

জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার দক্ষিন বাদাঘাট ইউনিয়নের দুর্ঘাপুর গ্রামের হাঁসের খামারি মনির হোসেন জানান, এখন ছোট ছোট জলমহাল গুলোতে হাঁস চরে প্রাকৃতিক উৎস থেকে হাঁসের সুষম খাবার পেলে ১২ মাসের মধ্যে টানা ১০ মাস হাঁস থেকে ডিম পাওয়া যেত। কিন্ত এই সময়েই হাসেঁর খাবার সংকট দেখা দেয়। ফলে যেখানে হাসেঁর খাবার আছে সেখানে নিয়ে যেতে হয় বাধ্য হয়ে। এতে করে খরচ ও কষ্ট দুটিই হয়।

জেলার তাহিরপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের মাটিয়ান হাওর পাড়ের রতনশ্রী গ্রামের হাঁসের খামারি সুজন মিয়া বলেন,অনেক দিন বেকার থাকার পর কোন প্রশিক্ষণ না নিয়েই অন্যের দেখা দেখি ও যারা হাসেঁর খামার করেছে তাদের দেখে দেখে হাসেঁর খামার করেছি। খুব ভাল না হলেও বেকার থাকার চেয়ে অনেক ভাল আছি। ছোট ছোট জলমহাল গুলো হাঁস পালনের জন্য এগুলো উন্মুক্ত করে দিলে ডিমের উৎপাদন আরও বেড়ে যেত। এছাড়াও সরকারী ভাবে আমাদের প্রশিক্ষণ ও ঋণ দিলে লাভবান হতাম এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত হতো।

জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে খামারীদের সর্বাত্মক পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হয়। হাঁস পালনের জন্য একটি নির্দিষ্ট এলাকা নির্ধারণ করে দেয় সরকার তাহলে এ জেলার মানুষ হাঁস পালন করে নিজেদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে পারবেন।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *