Main Menu

হারিকেন ইয়ানের আঘাতে লণ্ডভণ্ড ফ্লোরিডা, নিহত ৪৫

হারিকেন ইয়ানের আঘাতে লণ্ডভণ্ড ফ্লোরিডা, নিহত ৪৫
নিউজ ডেস্ক:
বিধ্বংসী হারিকেন ইয়ানের আঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্য ফ্লোরিডার বিভিন্ন শহর লণ্ডভণ্ড হয়েছে। এতে বিভিন্ন শহরের অন্তত ৪৫ জন নিহত হয়েছেন। হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে। এছাড়া ঝড়ের তাণ্ডবে গোটা রাজ্য তছনছ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

যুক্তরাষ্ট্রের ঘূর্ণিঝড় পূর্বাভাসকেন্দ্র ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার (এনএইচসি) জানিয়েছে, ২৮ সেপ্টেম্বর বুধবার স্থানীয় সময় ৩টার দিকে ফ্লোরিডার ফোর্ট মায়ার্স শহরের পশ্চিমে কায়োকাস্তা উপকূলে আছড়ে পড়ে ইয়ান। সে সময় ফোর্ট মায়ার্স ও তার আশপাশের এলাকায় বাতাসের গতিবেগ ছিলো ঘণ্টায় ২৪০ কিলোমিটার।

এনএইচসির বরাত দিয়ে সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার ফ্লোরিডায় আছড়ে পড়ার পর বৃহস্পতিবার ঝড়টি দক্ষিণদিকে সরে যেতে থাকে এবং ফ্লোরিয়ার পার্শ্ববর্তী অঙ্গরাজ্য নর্থ ও সাউথ ক্যারোলাইনায় গিয়ে শক্তি হারিয়ে সাধারণ ঘুর্ণিঝড়ে পরিণত হয়।

ফ্লোরিডা মূলত একটি উপদ্বীপ। মার্কিন এই অঙ্গরাজ্যের একদিকে আটলান্টিক মহাসাগর, অন্যদিকে মেক্সিকো উপসাগর। শুক্রবার ফ্লোরিডার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আঘাত হানে হারিকেন ইয়ান, যেটিকে ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ ঘুর্ণিঝড় বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ফ্লোরিডায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে ইয়ান। প্রবল ঝড়ো বাতাস ও জলোচ্ছ্বাসে অঙ্গরাজ্যের উপকূলীয় বিভিন্ন শহরের কোনো ভবন ধ্বংসের হাত থেকে রেহাই পায়নি। বুধবার ঝড় যে শহরে আছড়ে পড়েছিল, সেই ফোর্ট মায়ার্স শহর প্রায় হ্রদে পরিণত হয়েছে। এছাড়া জলোচ্ছ্বাসের পাশাপাশি মুষলধারে বর্ষণের কারণে ফ্লোরিডার অরল্যান্ডোসহ সমুদ্র থেকে দূরবর্তী শহরগুলোতেও বন্যা দেখা দিয়েছে।

ইয়ানে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ফোর্ট মায়ার্স ও তার লাগোয়া শহর ন্যাপলসে। উভয় শহরই ফ্লোরিডার লি জেলা অন্তর্গত। লি’র মেয়র রজার ডেসজারলেইস সিএনএনকে তার জেলার পরিস্থিতি সম্পর্কে সিএনএনকে বলেন, ‘কোনো কিছুকে ওপরে তুলে প্রবল জোরের সঙ্গে আছড়ে ফেললে সেটির যে অবস্থা হয়, লি’র প্রায় সব ভবনেরই তেমন অবস্থা। কোনো ভবন আর আস্ত নেই।’

যুক্তরাষ্ট্রের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের ফ্লোরিডা শাখার মতে, লি জেলায় নিহতের সংখ্যাও সবচেয়ে বেশি। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে পুরো ফ্লোরিডায় যে ৪৫ জন নিহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে ১৬ জনই ফ্লোরিডার। মেয়র মতে, নিহতের প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি।

মেয়র বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে হাজার হাজার মানুষকে নিরাপদস্থানে সরিয়ে আনতে পেরেছি, কিন্তু তারপরও অনেককেই আনা সম্ভব হয়নি। ফলে প্রকৃত নিহতের সংখ্যা আরও বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

শুধু তাই নয়, ঝড়ে ফ্লোরিডাজুড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার গুরুতর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রাজ্যের লি, শার্লটি, ডেসোটো ও হার্ডিসহ বিভিন্ন জেলায় ১৬ লাখেরও বেশি গ্রাহক বর্তমানে বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছেন। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে ব্যাপক বন্যা। অঙ্গরাজ্যের আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যের সব শহর বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে এবং এর আগে এত বড় পরিসরে বন্যা ফ্লোরিডায় দেখা যায়নি।

ইউএস ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার জানিয়েছে, এখনো ক্যারোলিনাসের উপকূলে বিপজ্জনক ঝড়বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। উপকূলীয় ও উত্তর-পূর্ব দক্ষিণ ক্যারোলিনার কিছু অংশে বন্যা পরিলক্ষিত হয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শুক্রবার হারিকেন ইয়ানকে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সবচেয়ে ‘বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয়সমূহের একটি’— উল্লেখ করেছেন। এক বিৃবতিতে বলেন, ‘এত বড় মাত্রার ধ্বংসযজ্ঞ যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক ইতিহাসে দেখা যায়নি। যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে।’

কেন্দ্রীয় সরকার থেকে ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যকে সব প্রকারের সহযোগিতা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বাইডেন।






Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *