Main Menu

ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে লিবিয়ায় নিখোঁজ হবিগঞ্জের ৮ যুবক

নিউজ ডেস্ক:
স্বপ্নের দেশ ইতালি যাওয়ার উদ্দেশ্যে হবিগঞ্জ থেকে রওনা দেওয়া আট যুবক গত ২০ দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। নিখোঁজ প্রত্যেকে পরিবারের সঙ্গে শেষবার যোগাযোগ করা পর্যন্ত লিবিয়ার ত্রিপোলিতে অবস্থান করছিলেন। আট যুবকের মধ্যে ছয় যুবকের বাড়ি বানিয়াচং উপজেলার পুকড়া ইউনিয়নের কাটখাল গ্রামে। নিখোঁজদের বাড়িতে নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। পরিবারের লোকজন একটা ফোনের অপেক্ষায় রয়েছেন। সবার চোখেমুখে এক অজানা আতঙ্ক।

নিখোঁজরা হলেন- বানিয়াচং উপজেলার পুকড়া ইউনিয়নের কাটখাল গ্রামের আব্দুল মমিনের ছেলে মাসুম মিয়া (২৫), আব্দুস শহিদের ছেলে রজব আলী (২২), ধলাই মিয়ার ছেলে রুহুল আমিন (২১), অমৃত মিয়ার ছেলে সিদ্দিক আলী (২১), মুছিউর রহমানের ছেলে রুবেল মিয়া (২১), আব্দুল মতিনের ছেলে আব্দুল হেকিম ফয়সল (২১), একই উপজেলার পুরান পাথারিয়া গ্রামের টেনু মিয়ার ছেলে নাইম মিয়া (২২) এবং লাখাই উপজেলার কাটাইয়া গ্রামের সফিকুল ইসলামের ছেলে জসিম উদ্দিন (২১)।

কাটখাল গ্রামের নিখোঁজ যুবকদের পরিবার জানায়, ইউরোপের দেশ ইতালি যাওয়ার উদ্দেশ্যে গত ১ ফেব্রুয়ারি বাড়ি থেকে বের হন কাটখাল গ্রামের ছয় যুবক। বিমানে তাদেরকে প্রথমে দুবাই নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাদেরকে সপ্তাহখানেক পর লিবিয়ার বেনগাজীতে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রায় ১৫ দিন পর বেনগাজী থেকে লিবিয়ার ত্রিপোলিতে নিয়ে যাওয়া হয়। ত্রিপোলিতে পৌঁছানোর পর কাটখাল গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা আমীর আলীর হাতে প্রত্যেক যুবকের পরিবার আগের কথা মতো চার লাখ করে টাকা দেয়।

ত্রিপোলি থেকে নৌকাযোগে ইতালি যাওয়ার আগে ‘গেমঘর’ নামে একটি গুদামের মতো একটি জায়গায় ঢোকানোর পূর্বে আরও সাড়ে তিন লাখ টাকা আমীর আলীকে দেওয়া হয়। এছাড়াও এই সময়ের মধ্যে প্রত্যেকের পরিবার আরও ৫০ হাজার টাকা দেয়।

ওই আট যুবককে ‘গেমঘরে’ ঢোকানোর পর প্রায় ২০দিন আগে তারা তাদের পরিবারের সঙ্গে ইমোতে কথা বলে জানান, তারা ভালো নেই। এরপর থেকে পরিবারের লোকজন তাদের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ করতে পারেননি।

নিখোঁজ যুবক আব্দুল হেকিম ফয়সলের ছোট ভাই মো. উজ্জল আহমেদ বলেন, আমার বড় ভাইসহ এই গ্রামের ছয়জন আমীর আলীর মাধ্যমে ইতালি যাওয়ার জন্য আট লাখ করে টাকা দিয়েছেন। গত ২০ দিন ধরে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। এমনকি আমীর আলী ও তার সহযোগী আলমগীরকে আর খুঁজে পাচ্ছি না। তারা বাড়ি থেকে পালিয়েছেন।

তিন আরও বলেন, ২০ দিন আগে আমার ভাই ইমোতে ফোন করে জানিয়েছিলেন- তিনি ভালো নেই। বেঁচে আছেন কিনা তাও জানি না। আমার মা-বাবা শয্যাশায়ী হয়ে গেছেন। দিনরাত শুধু কাঁদেন। তাদের সন্ধানের জন্য দালাল আমির আলীকে বার বার চাপ সৃষ্টি করলেও নিখোঁজদের কোনো সন্ধান দিতে পারেননি।

অপর নিখোঁজ মাসুম মিয়ার মা মোছা. পারভীন আক্তার বলেন, আমার ছেলের মুখে একটা শব্দ শোনার জন্য আমি ব্যাকুল হয়ে আছি। কখন আমার বাপধন আমার সঙ্গে কথা বলবে, তখনই আমার শান্তি হবে।

তিনি জানান, ছেলেকে ইতালি পাঠানোর জন্য এখন পর্যন্ত পাঁচ লাখ টাকা সুদে ধার নিয়েছেন। এছাড়াও গোয়ালের সব গরু বিক্রি করে দিয়েছেন।

রুহুল আমিনের মা খোশবানু বলেন, আমার জমিজমা ও গরু বিক্রি ছাড়াও সুদে ঋণ নিয়ে আট লাখ টাকা দিয়ে আমার ছেলেকে লিবিয়া পাঠিয়েছি। এখন আমার টাকাও গেল, ছেলেও গেল।

তিনি আরও বলেন, আমরা গরিব মানুষ। অবস্থার উন্নতির জন্য সব কিছুর বিনিময়ে মাসুমকে বিদেশ পাঠিয়েছিলাম। এখন আমি সব হারালাম।

নিখোঁজ রজব আলীর মা পারভীন আক্তার কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার ছেলের কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। আমরা গত ১৫-২০ দিন ধরে ঘুম নেই, খাওয়া নেই। কিছুই ভালো লাগে না। এমনকি এই দুশ্চিন্তায় ধানও তুলতে পারিনি ঠিক মতো।

নিখোঁজ রজব আলীর বাবা শহীদ মিয়া বলেন, মানবপাচারকারী আমীর আলী ও তার সহযোগী আলমগীর মিয়ার কুমন্ত্রণায় পড়ে আমার ছেলে ইতালি যাওয়ার জন্য বায়না ধরে। শুধু তাই নয়, গ্রামের আরও পাঁচ যুবক ইতালি যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ হয়। পরে মানবপাচারকারী আমীর আলী ও তার সহযোগী আলমগীর মিয়ার সঙ্গে জনপ্রতি সাত লাখ টাকা খরচে ইতালিতে যাওয়ার চুক্তি হয়। এছাড়াও লিবিয়াতে যাওয়ার পরই জনপ্রতি আরও এক লাখ টাকা নিখোঁজ যুবকদের পরিবারের কাছ থেকে নেওয়া হয়। ওই টাকা নিয়ে মানবপাচারকারী আমীর আলী বাড়িতে নতুন ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করেন। আমীর আলীর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে মানবপাচারের অভিযোগ রয়েছে।

অভিযুক্ত আমীর আলীর বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। কথা হয়েছে তার স্ত্রী আলম চানের সঙ্গে। আমীর আলী কোথায় আছে জানতে চাইলে তিনি জানান, তার স্বামী অসুস্থ হয়ে ঢাকায় রয়েছেন।

বিদেশে মানবপাচার সম্পর্কে জানতে চাইলে আলম চান বলেন, সবাই সব কিছু জেনেই আমার স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করে বিদেশ গেছে। আমার স্বামী কাউকে জোর করে বিদেশ পাঠায়নি। আমার এক দেবরও রয়েছে তাদের সঙ্গে।

পুকড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফেজ মো. সামরুল ইসলাম জানান, তিনি গত রোববার (২৯ মে) বিষয়টি জানতে পেরেছেন। কাটখাল গ্রামের মানুষ এ বিষয়ে একটা সভা করেছে। এরপর তিনি বিষয়টি জানতে পারেন।

এ ব্যাপারে জানতে বানিয়াচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদ্মাসন সিংহের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি এখনো তার জানা নেই।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *