Main Menu

কাঠগড়ায় পরীমনি, বিয়ে নিয়ে বিপাকে নাসির

নিউজ ডেস্ক:
করোনার দ্বিতীয় দফা ঢেউয়ে ঢাকার প্রায় চার মাস বন্ধ ছিল আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম। তবুও বছর জুড়েই ঢাকার নিম্ন আদালত ছিল আলোচনার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দুতে।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আগমনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের জেরে লকডাউনের মধ্যেও ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদের নেতাকর্মী এবং হেফাজতে ইসলামের শীর্ষনেতারা গ্রেফতার হয়ে আসেন আদালতে। বছরের শেষ দিকে চিত্রনায়িকা পরীমনিসহ বেশ কয়েকজন মডেল গ্রেফতার হন বিভিন্ন মামলায়। অন্যের স্ত্রী তালাক ছাড়া বিয়ে করে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয় ক্রিকেটার নাসির হোসেনকেও।
ইকমার্স খাতে অস্থিরতার জেরে ফেঁসে যায় ইভ্যালিসহ বিভিন্ন ইকমার্স প্রতিষ্ঠান, গ্রেফতার হন অনেকে। বছরের শেষ দিকে এসে আমিনবাজারে ছয় ছাত্র হত্যায় ৯ জনের মৃত্যুদণ্ড ও দুর্নীতির মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের রায়ও ছিল আলোচনায়।

মোদী ইস্যুতে আন্দোলনে কাঠগড়ায় হেফাজত-ছাত্র অধিকার:
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আগমনের বিরোধিতা করে কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে সহিংসতার জেরে ধরপাকড়ের মুখে পড়ে হেফাজতে ইসলাম। একই ইস্যুতে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের সংগঠন ছাত্র-যুব অধিকারেরও অনেক নেতাকর্মী গ্রেফতার হন। ২৬ মার্চ সকালে নরেন্দ্র মোদীর ঢাকায় আগমনের প্রতিবাদে আগের দিন বিক্ষোভ মিছিল করে ছাত্র-যুব অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা। মতিঝিলে সেই মিছিল থেকে পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে গ্রেফতার হন সংগঠনটির ৩২ নেতাকর্মী। একই ইস্যুতে পরবর্তী এক মাসে সংগঠন দুটির অন্তত ৫৬ নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়ে আসেন আদালতে। যার মধ্যে ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনও ছিলেন। এদিকে নরেন্দ্র মোদীর আগমনের প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলাম ২৬ মার্চ বায়তুল মোকাররম মসজিদসহ সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল করে। সেসব কর্মসূচিতে সারাদেশে সহিংসতায় অন্তত পাঁচ নেতাকর্মী নিহতের পর ২৮ মার্চ সংগঠনটি হরতাল পালন করে। এতেও বেশকিছু হতাহতের ঘটনা ঘটে। সেসব কর্মসূচিকে ঘিরে সারাদেশের মতো ঢাকাতেও হয় মামলা। এসব মামলায় হেফাজতের আলোচিত নেতা মামুনুল হক, আজিজুল হক ইসলামাদীসহ বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী গ্রেফতার হন। করোনায় লকডাউনের মধ্যে মামুনুলদের গ্রেফতারে আদালতে উত্তাপ ছিল।

বাদী থেকে আসামি পরীমনি:
সাভারে একটি বোট ক্লাবে ধর্ষণচেষ্টা হয় বলে অভিযোগ এনে ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিনসহ কয়েকজনের নামে গত ১৪ জুন মামলা করেন চিত্রনায়িকা পরীমনি। পরদিন গ্রেফতার হন নাসির, হয় মাদক মামলাও। পরীমনির মামলাসহ মাদক মামলায় ৩০ জুন জামিনে মুক্তি পান ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ। তার মুক্তির প্রায় এক মাস পর র‌্যাবের অভিযানে গ্রেফতার হন পরীমনি নিজেই। ৪ আগস্ট আটকের পর ৫ আগস্ট তাকে আদালতে আনা হয়। মাদক আইনের মামলায় তিন দফা রিমান্ডেও নেওয়া হয় পরীমনিকে। শেষ পর্যন্ত ২৬ দিন কারাভোগের পর ৩ আগস্ট ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে জামিন পান পরীমনি। সেই থেকে কখনো বাদী, আবার কখনো আসামি হিসেবে নিয়মিতই আদালতে আনাগোনা করছেন এই চিত্রনায়িকা। পরীমনির আগমনে ঢাকার আদালতে উৎসুক জনতা এমনকি আইনজীবীরাও ভিড় জমান।

পরীমনি ছাড়াও বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার হয়ে আদালতে আসেন ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা, মরিয়ম আক্তার মৌ এবং বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেত্রী হেলেনা জাহাঙ্গীররাও মাদক, ডিজিটাল, নিরাপত্তাসহ বেশ কয়েকটি মামলায় গ্রেফতার হয়ে আসেন আদালতে।

বিয়ে জটিলতায় ক্রিকেটার নাসির:
ক্রিকেটার নাসির হোসেন চলতি বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি বিয়ে করেন। নাসিরের স্ত্রী তামিমা সুলতানা তাম্মিকে নিজের বিবাহিত স্ত্রী দাবি করেন রাকিব হাসান নামে এক যুবক। তাই এ নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক, যা শেষ পর্যন্ত গড়ায় আদালতে। চলতি বছর ২৪ ফেব্রুয়ারি রাকিব ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় আদালতের নির্দেশে গত ৩০ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘তামিমার আগের স্বামী রাকিব হাসানকে ডিভোর্স দেওয়া সংক্রান্ত কাগজপত্র জালজালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। নাসিরকে বিয়ের আগে রাকিবকে ডিভোর্স দেননি তামিমা। তাই নাসির-তামিমার বিয়ে আইনত অবৈধ। ’ ওইদিনই আদালত নাসির ও তার স্ত্রীকে হাজিরে সমন দেন। পরে ৩০ অক্টোবর তারা আদালতে হাজির হয়ে জামিন নেন। তাই বিয়ে করে শেষ পর্যন্ত আইন-আদালত করতে হয়েছে ক্রিকেটার নাসিরকেও।

গ্রাহক প্রতারণায় কাঠগড়ায় ইভ্যালিসহ ইকমার্স খাত:
কোভিডে দীর্ঘ সময় লকডাউনে দেশে দ্রুত সম্প্রসারিত হয় ইকমার্স খাত। তবে লোভনীয় অফার দিয়ে গ্রাহক টেনে অনেক প্রতিষ্ঠানই পা বাড়ায় প্রতারণায়। আর সেই প্রতারণার কারণে দেশের সর্ববৃহৎ ইকমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির সিইও মো. রাসেল এবং তার স্ত্রী ও প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীমা নাসরিন গত ১৭ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার হন। পরদিন তাদের আদালতে এনে নেওয়া হয় রিমান্ডে। এরপর তাদের বিরুদ্ধে ঢাকাতেই অন্তত ডজন খানেক মামলা হয়। সেসব মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে নেওয়া হয় রিমান্ডে। ইভ্যালি ছাড়াও ই-অরেঞ্জ, রিং আইডি, এসপিপিস ওয়ার্ল্ড, কিউকম, ফাল্গুনি শপসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তাকে গ্রেফতার করা হয় এই সময়ে।

আমিনবাজারে ছাত্র হত্যা মামলায় ৯ জনের মৃত্যুদণ্ড:
রাজধানীর অদূরে সাভারের আমিনবাজারে ছয় ছাত্র হত্যা মামলায় ১৯ আসামির মৃত্যুদণ্ডের ঘটনাও ছিল ঢাকার আদালতে অন্যতম আলোচিত ইস্যু। এক দশক আগে ২০১১ সালের ১৭ জুলাই শবে বরাতের রাতে সাভারের আমিনবাজারের বড়দেশী গ্রামের কেবলারচরে ডাকাত সন্দেহে ছয় ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। নিহতরা হলেন ধানমন্ডির ম্যাপললিফ স্কুলের ‘এ’লেভেলের ছাত্র শামস রহিম শাম্মাম, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ইব্রাহিম খলিল, বাঙলা কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তৌহিদুর রহমান পলাশ, তেজগাঁও কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র টিপু সুলতান, মিরপুরের বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সিতাব জাবীর মুনিব এবং বাঙলা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র কামরুজ্জামান। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গত ২ ডিসেম্বর ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৩ জনকে যাবজ্জীব কারাদণ্ড দেন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ইসমত জাহান। এই মামলার অপর ২৫ আসামি খালাস পান।

সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবরের কারাদণ্ড:
অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং তথ্য গোপনের মামলায় চারদলীয় জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে আট বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার একটি আদালত। গত ১২ অক্টোবর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭ এর বিচারক মো. শহিদুল ইসলাম এই রায় দেন। ২০০৭ সালের ২৮ মে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে যৌথবাহিনীর হাতে আটক হওয়া এ আসামির বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপনের মামলাটি ২০০৮ সালের ১৩ জানুয়ারি রমনা থানায় দায়ের করা হয়। মামলাটি করেন সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-১ এর সহকারী পরিচালক মির্জা জাহিদুল আলম। তদন্ত শেষে ওই বছরের ১৬ জুলাই দুদকের উপসহকারী পরিচালক রূপক কুমার সাহা আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। সূত্র: বাংলানিউজ






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *