Main Menu

নারী ও পুরুষের জন্য মাহরাম যে ১৪ ব্যক্তি

ধর্ম ডেস্ক:
নারী পুরুষ সবাইকে আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি করেছেন নিজ অনুগ্রহ ও কুদরতে। ঈমান-বিশ্বাস, কালিমা, ‍নামাজ, এক কথায় ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলোতে নারী-পুরুষ সবার জন্য একই বিধান। নারী-পুরুষের সৃষ্টিগত ভিন্নতা ও বৈশিষ্ট্যের কারণে ক্ষেত্র বিশেষে কিছু কিছু পার্থক্য অবশ্যই রয়েছে। তবে মৌলিক বিশ্বাস ও বিধান পালনের ক্ষেত্রে সবাই সমান। এতে কোনও ছাড় বা গড়িমসির অবকাশ নেই।

নারী-পুরুষের মাঝে দূরত্ব ও নিরাপদ সম্পর্ক

পৃথিবীতে চলাফেরা ও বসবাসের শৃঙ্খলা দিক থেকে আল্লাহ তায়ালা যেসব বিধান দিয়েছেন তার একটি নারী-পুরুষের একে অপর থেকে দূরত্ব ও নিরাপদ সম্পর্ক বজায় রাখা। সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি সীমালঙ্ঘনের বিষয়টি ইসলামে নিষিদ্ধ। নারী-পুরুষের একে অপরের সঙ্গে দৃষ্টি অবনত রাখা ও পর্দার বিধান দেওয়া হয়েছে।

কোরআনে চেহারা ঢেকে রাখার বিধান

পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে ও মুমিনদের নারীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজ হবে। ফলে তাদের উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আহযাব : ৫৯)

আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা মুমিন নারীদেরকে আদেশ করেছেন যখন তারা কোনো প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হবে তখন যেন মাথার উপর থেকে ওড়না/চাদর টেনে স্বীয় মুখমন্ডল আবৃত করে। আর (চলাফেরার সুবিধার্থে) শুধু এক চোখ খোলা রাখে।-(ফাতহুল বারী ৮/৫৪, ৭৬, ১১৪)

ইবনে সীরিন বলেন, আমি (বিখ্যাত তাবেয়ী) আবীদা (সালমানী রাহ.)কে উক্ত আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, কাপড় দ্বারা মাথা ও চেহারা আবৃত করবে এবং এক চোখ খোলা রাখবে।

মাহরাম কাদের বলা হয়?

অন্য জায়গায় আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তোমরা তাঁদের (নবী পত্নীদের) নিকট কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাও। এই বিধান তোমাদের ও তাদের হৃদয়ের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। তোমাদের কারো জন্য আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেওয়া সংগত নয় এবং তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পত্নীদেরকে বিবাহ করা তোমাদের জন্য কখনো বৈধ নয়। আল্লাহর দৃষ্টিতে এটা ঘোরতর অপরাধ। -(সূরা আহযাব (৩৩) : ৫৩)

 

পর্দা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ বিধান। তবে নারী-পুরুষদের জন্য নির্দিষ্ট কিছু মানুষের সাথে পর্দার বিধান নেই। তাদের সঙ্গে দেখা করার বিধান রয়েছে। এই মানুষদের মাহরাম বলা হয়। ইসলামী পরিভাষায় মাহরাম বলা হয়, যাদেরকে বিবাহ করা হারাম বা অবৈধ এবং দেখা করা বা দেখা দেওয়া জায়েয বা বৈধ।

কোরআনে মাহরামের পরিচয়

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,

حُرِّمَتْ عَلَيْكُمْ أُمَّهَاتُكُمْ وَبَنَاتُكُمْ وَأَخَوَاتُكُمْ وَعَمَّاتُكُمْ وَخَالَاتُكُمْ وَبَنَاتُ الْأَخِ وَبَنَاتُ الْأُخْتِ وَأُمَّهَاتُكُمُ اللَّاتِي أَرْضَعْنَكُمْ وَأَخَوَاتُكُم مِّنَ الرَّضَاعَةِ وَأُمَّهَاتُ نِسَائِكُمْ وَرَبَائِبُكُمُ اللَّاتِي فِي حُجُورِكُم مِّن نِّسَائِكُمُ اللَّاتِي دَخَلْتُم بِهِنَّ فَإِن لَّمْ تَكُونُوا دَخَلْتُم بِهِنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ وَحَلَائِلُ أَبْنَائِكُمُ الَّذِينَ مِنْ أَصْلَابِكُمْ وَأَن تَجْمَعُوا بَيْنَ الْأُخْتَيْنِ إِلَّا مَا قَدْ سَلَفَ ۗ إِنَّ اللَّهَ كَانَ غَفُورًا رَّحِيمًا

‘তোমাদের প্রতি হারাম করা হয়েছে তোমাদের মা এবং মেয়ে, বোন, ফুফু, খালা, ভাইঝি, ভাগিনী, দুধ মা, দুধ বোন, শ্বাশুড়ি, তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যার সঙ্গে সঙ্গম হয়েছ তার পূর্ব স্বামীর ঔরসজাত মেয়ে যারা তোমাদের তত্ত্বাবধানে আছে, কিন্তু যদি তাদের সঙ্গে তোমরা সহবাস না করে থাক, তবে (তাদের বদলে তাদের মেয়েদেরকে বিয়ে করলে) তোমাদের প্রতি গুনাহ নেই এবং (তোমাদের প্রতি হারাম করা হয়েছে) তোমাদের ঔরসজাত পুত্রের স্ত্রী এবং এক সঙ্গে দু’ বোনকে (বিবাহ বন্ধনে) রাখা, পূর্বে যা হয়ে গেছে, হয়ে গেছে, নিশ্চয়ই আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, দয়ালু।’ -(সুরা নিসা : আয়াত ২৩)

 

কোরআনের বর্ণনা অনুযায়ী নারী-পুরুষদের জন্য এমন ব্যক্তি ১৪জন। এই মানুষদের সঙ্গে দেখা দেওয়া জায়েজ, পর্দা ফরজ নয়, তবে এদের বিয়ে করা যাবে না। এখানে তাদের পরিচয় তুলে ধরা হল-

পুরুষের জন্য মাহরাম ১৪ জন।

তারা হলেন- মায়ের সমপর্যায়ের ৫ জন

১. মা

২. ফুফু (বাবার বোন)

৩. খালা (মায়ের বোন)

৪. শাশুড়ি ( স্ত্রী এর মা )

৫. দুধ-মা (যে মা ছোট বেলায় দুধ খাইয়ে ছিলেন)

বোনের সমপর্যায়ের ৫ জন

৬. নিজের বোন

৭. নানি (মায়ের মা)

৮. দাদি (বাবার মা)

৯. নাতনি (আপন ছেলে ও মেয়ের কন্যা)

১০. দুধ-বোন

মেয়ের সমপর্যায়ের ৪ জন

১১. মেয়ে

১২. ভাতিজি (আপন ভাই-এর মেয়ে)

১৩. ভাগ্নি (আপন বোনের মেয়ে)

১৪. ছেলের বউ

এসব ব্যক্তি ছাড়া পুরুষরা বাকি সবার সঙ্গে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে। তবে স্ত্রী জীবিত থাকা অবস্থায় স্ত্রীর আপন বোনকে বিয়ে করা যাবে না। আবার তার সঙ্গে দেখাও করা যাবে না।

নারীদের মাহরাম ১৪ জন।

তারা হলেন- বাবার সমপর্যায়ের ৪ জন

১. বাবা

২. চাচা

৩. মামা

৪. শ্বশুর

ভাইয়ের সমপর্যায়ের ৫ জন

৫. সহোদর ভাই

৬. নিজ দাদা

৭. নিজ নানা

৮. নিজ নাতি

৯. দুধ-ভাই

ছেলের সমপর্যায়ের ৫ জন

১০. ছেলে

১১. ভাইয়ের ছেলে

১২. বোনের ছেলে

১৩. মেয়ের জামাই

১৪. দুধ-ছেলে






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *