অফিসের জিনিস ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা যাবে?
ধর্ম ডেস্ক:
জীবনযাপনের জন্য মানুষকে কাজ করতে হয়। ইসলাম মানুষকে কর্মের প্রতি উদ্ধুদ্ধ করেছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
فَاِذَا قُضِیَتِ الصَّلٰوۃُ فَانۡتَشِرُوۡا فِی الۡاَرۡضِ وَ ابۡتَغُوۡا مِنۡ فَضۡلِ اللّٰهِ وَ اذۡکُرُوا اللّٰهَ کَثِیۡرًا لَّعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ
অতঃপর যখন নামাযজ সমাপ্ত হয়, তখন জমিনে ছড়িয়ে পড়, আর আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান কর এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করতে থাক- যাতে তোমরা সাফল্য লাভ করতে পার। (সূরা জুমা, (৬২), আয়াত, ১০)
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও সাহাবিদের কাজ করার প্রতি উৎসাহিত করেছেন। একবার এক সাহাবি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আর্থিক সাহায্য চাইলে তিনি তার শেষ সম্বল বাটি ও কম্বল বিক্রি করে তা দিয়ে কুঠার কিনতে বলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতে কুঠারের হাতল লাগিয়ে দেন। সে সাহাবিকে জঙ্গল থেকে কাঠ কেটে তা বাজারে বিক্রি করার নির্দেশ দেন। এভাবে কর্মমুখী জীবন নির্বাহের ব্যবস্থা করে দেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘নিজ হাতের শ্রমে উপার্জিত জীবিকার চেয়ে উত্তম আহার কেউ কখনও গ্রহণ করেনি। আল্লাহর নবী দাউদ আলাইহিস সালাম নিজ হাতে উপার্জন করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ’ (বুখারি, হাদিস, ২০৭২)
হাদিসে মানুষকে কর্মমুখী করার প্রতি উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘সব জমিনই আল্লাহর এবং সবাই আল্লাহর বান্দা। কাজেই, যে ব্যক্তি কোনো অনাবাদি জমিন আবাদ করবে, সে ব্যক্তি তার মালিক হবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস, ৩০৭৬)।
সময়, যুগ এবং পরিস্থিতি ভেদে কর্ম ক্ষেত্র ভিন্ন হয়ে থাকে। বর্তমান সময়ে কর্মক্ষেত্রের অন্যতম একটি ধরন ও মাধ্যম হলো অফিস। অধিকাংশ মানুষই অফিসে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। অফিসে কাজের জন্য নির্ধারিত ও নির্দিষ্ট সরঞ্জাম দেওয়া হয়। এই সরঞ্জামগুলো অফিসের কাজের জন্যই ব্যবহার করা উচিত। অফিসের বাইরে এর ব্যবহার করা ঠিক নয়। তবে অফিসিয়াল কাজের জন্য অফিসের বাহিরেও তা ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু অফিসিয়াল কাজের বাইরে তা ব্যবহার করা জায়েজ হবে না।
অফিস কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে অফিসের জিনিস নিজে ব্যবহার করলে গুনাহ হবে। এক্ষেত্রে এ থেকে মুক্ত হওয়ার পদ্ধতি হলো, কর্তৃপক্ষের কাছে এর জন্য ক্ষমা চেয়ে অনুমতি নিয়ে নেওয়া এবং ভবিষ্যতে এমনটি না করার দৃঢ় সংকল্প করা।
এক হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুসলমানদের পরস্পর চুক্তি করা জায়েজ আছে। তবে ওই চুক্তি জায়েজ নয়, যা হালালকে হারাম করে, অথবা হারামকে হালাল করে, মুসলমানরা তাদের শর্তের উপর অটল থাকবে, হালালকে হারামকারী অথবা হারামকে হালালকারী শর্ত ছাড়া। (সুনানে তিরমিজি, হাদীস, ১৩৫২, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস, ৩৫৯৬, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস, ৯৬)
এছাড়া পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ لاَ تَأْكُلُواْ أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ إِلاَّ أَن تَكُونَ تِجَارَةً عَن تَرَاضٍ مِّنكُمْ
হে মুমিনরা! তোমরা পরস্পরের সম্পদকে অন্যায়ভাবে গ্রাস কর না। তবে ব্যবসায়িক পদ্ধতিতে পারস্পরিক সন্তুষ্টচিত্তে হলে ভিন্ন কথা। (সূরা নিসা, আয়াত, ২৯)
এক হাদিসে হজরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াাসল্লাম ইরশাদ করেছেন, ধার হিসেবে যা গ্রহণ করা হয়,তা পরিশোদ করতে হবে। দুগ্ধবতী পশুর দুধ পান করা শেষ হলে তা ফেরত দিতে হবে। দেনা থাকলে তা পরিশোধ করতে হবে। এবং কেউ যদি কোন জিনিসের দায়িত্ব গ্রহণ করে, তবে তাকে দায়িত্বশীল হতে হবে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস, ৩৫৬৭, সুনানে তিরমিজি, হাদীস, ২১২০, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস, ২২২৯২)
এজন্য অফিসের কোনো সরঞ্জাম অনুমতি ছাড়া ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে এবং এ ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে।
Related News
মা-বাবার হক আদায়ে সন্তানের যা করণীয়
মা-বাবার হক আদায়ে সন্তানের যা করণীয় সন্তান মা-বাবার অস্তিত্বের অংশ। নিজের অস্তিত্বের অংশের প্রতি মা-বাবারRead More
বায়তুল মোকাররমের নতুন খতিবকে নিয়ে যা বললেন শায়খ আহমাদুল্লাহ
বায়তুল মোকাররমের নতুন খতিবকে নিয়ে যা বললেন শায়খ আহমাদুল্লাহ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব নিযুক্তRead More