Main Menu

ইসরাইলকে দমাতে যেসব প্রস্তাব দিলেন আরব ও মুসলিম বিশ্বের নেতারা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে টানা এক মাসেরও বেশি সময় বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে আসছে ইসরাইল।
নৃসংস এই হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ১১ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই সাড়ে ৭ হাজার। ইসরায়েল যে হামাসকে নির্মূলে এই নৃসংস অভিযান পরিচালনা করছে, সেই হামাসের টিকিটিও খুঁজে পাচ্ছে না তারা। এর ফলে সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করছে।

বর্বর এই আগ্রাসনের জেরে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে ক্ষোভ। জাতিসংঘসহ বিশ্বের অন্যতম মানবাধিকার ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ, শিশু হত্যা, সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে হামলা, মানবিক সংকট সৃষ্টিসহ ভয়াবহ সব অভিযোগ এনেছে।

তারা শিগগিরই গাজায় যুদ্ধ বন্ধ এবং সহায়তা পৌঁছানোর সুযোগ করে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। গাজার বর্ত মান পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কীভাবে মেনে নিতে পারে, এমন প্রশ্নই তুলেছেন রেডক্রস ফেডারেশনের প্রধান।

এমন অবস্থার মধ্যে মুসলিম ও আরব বিশ্বের নেতারা সৌদি আরবে একত্রিত হয়েছিলেন। তবে সম্মেলনে ফিলিস্তিন ইস্যুতে এখনও তারা দৃঢ় কোনো পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি।

তারপরও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জানিয়েছে যে, তারা ইসরায়েলের পাশে আছে এবং গাজায় তারা স্থায়ী বা দীর্ঘ সময়ের জন্য যুদ্ধবিরতি চায় না।

এদিকে গাজা ও ফিলিস্তিনের যখন এমন অবস্থা তখন সৌদি আরবে আলোচনায় বসেছিলেন অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) এর ৫৭দেশসহ আরব ও মুসলিম বিশ্বের নেতারা। সেখানে যোগ দেন, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান, সৌদির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান, ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রায়িসি, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি এবং সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদসহ মুসলিম বিশ্বের নেতারা।

ওআইসি এবং আরব লীগের নেতাদের নিয়ে শনিবার ও রোববার পৃথকভাবে দুটি শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন পরিকল্পনা করেছিল সৌদি আরব। পরে সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ‘গাজার নজিরবিহীন পরিস্থিতির আলোকে যৌথভাবে শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনের ঘোষণা দেয়।

সম্মেলনে যা বললেন মুসলিম বিশ্বের নেতারা

সম্মেলনে নেতাদের কেউ বলেছেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার। কেউ কেউ ফিলিস্তিনের প্রতি আরও দৃঢ়তা প্রকাশ এবং গাজায় যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। তবে সামগ্রিকভাবে ফিলিস্তিনিদের জন্য কী করা জরুরি, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কতটা কঠোর হবে এবং যুদ্ধ বন্ধ না হলে তারা কী করবে এ বিষয়ে আসলে এসব নেতারা কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি।

বৈঠকের শুরুতে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর যুদ্ধ অব্যাহত রাখার নিন্দা জানান। সেইসঙ্গে তিনি অবিলম্বে সামরিক অভিযান বন্ধ করা-সহ গাজায় মানবিক করিডোর তৈরির প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বলেন, ফিলিস্তিনে আমাদের ভাইদের বিরুদ্ধে এই বর্বর যুদ্ধ স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান এবং এর নিন্দা জানায় সৌদি আরব। সম্মেলনে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, ‘আমরা একটি মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছি; যা আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট ইসরায়েলি লঙ্ঘন। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যর্থতার প্রমাণ দেয় এই বিপর্যয়।’

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রায়িসি বলেন, ‘গাজা যুদ্ধ হলো হক ও বাতিলের মধ্যকার যুদ্ধ। প্রত্যেককে আজ সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে কে কোন পক্ষে দাঁড়াবে। ইরানি প্রেসিডেন্ট গাজা যুদ্ধ বন্ধে প্রস্তাব দিতে গিয়ে আরও বলেন, আমেরিকা সরাসরি এ যুদ্ধে প্রবেশ করেছে এবং ইসরায়েলের পেছনে দাঁড়িয়েছে। ইসরায়েলকে আত্মরক্ষার অজুহাতে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে অপরাধ চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করছে যুক্তরাষ্ট্র।’

সম্মেলনে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেন, ফিলিস্তিনিরা ‘গণহত্যা যুদ্ধের’ মুখোমুখি হয়েছে। ইসরায়েলি ‘‘আগ্রাসন’’ বন্ধ করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

রিয়াদে যৌথ সম্মেলনে অংশ নিয়ে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের বিরোধের স্থায়ী সমাধানে আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলনের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘গাজায় আমাদের যা দরকার তা কয়েক ঘণ্টার বিরতি নয়, বরং আমাদের স্থায়ী যুদ্ধবিরতি দরকার।’

কাতারের আমির বলেছেন, তার দেশ— যেখানে কয়েকজন হামাস নেতা রয়েছেন— ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির জন্য মধ্যস্থতা করতে চাইছে। শিগগিরই গাজায় মানবিক যুদ্ধবিরতি হবে বলে আশাপ্রকাশ করেছেন তিনি। শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি বলেন, ‘ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইনের ঊর্ধ্বে— বিশ্ব সম্প্রদায় এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি কতদিন পোষণ করবে?’

সম্মেলনের যৌথ বিবৃতিতে যা বলা হলো

রিয়াদ শীর্ষ সম্মেলনের বিবৃতিতে ইসরায়েলে অস্ত্র ও গোলাবারুদ রফতানি বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়া আরব-ইসলামিক শীর্ষ সম্মেলনে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ করতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে সিদ্ধান্তমূলক, বাধ্যতামূলক পদক্ষেপ নেওয়ারও আহ্বান জানানো হয়েছে।

গাজায় নিরলস ইসরায়েলি হামলায় ক্ষোভ প্রকাশ করে এবং দখলদার বাহিনীর দ্বারা সংঘটিত জঘন্য যুদ্ধাপরাধ ও নৃশংস গণহত্যার নিন্দা জানিয়েছেন নেতারা। ইসরায়েলি আগ্রাসন আত্মরক্ষার কাঠামোর আওতায় পড়ে এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন সম্মেলনের নেতারা।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *