Main Menu

কবি মুহিত চৌধুরীর জন্মদিন আজ

কবি মুহিত চৌধুরীর জন্মদিন আজ

মবরুর আহমদ সাজু:
জীবন মানে কি এর উত্তর পাওয়া বড্ড মুশকিল। আমি মনে করি, জীবন মানে কাহিনীর সমাবেশ জীবনকে যদি সেলুলয়েডর ফিতে বন্দি দৃশ্যর মতো দেখি তাহলে জীবন অন্যরকম।
জীবন হয়ত সত্যিই নিরর্থক। তাকে অর্থবহ করে তোলায় সাধনায় নিরন্তর নিমজ্জিত রয় মানুষ। ‘অর্থবহ’ শব্দটি একেক জনের কাছে একেক ‘অর্থ’ নিয়ে হাজির হয় বলেই কেউ কেউ জীবনকে ফুলের মতো সুন্দর করতে সারাজীবন সাধনা করেন। কেউ বিহঙ্গের মতো বাঙময় হতে বিদ্রোহের আগুন জ্বালেন জীবনজুড়ে।

প্রিয় পাঠক, সাহিত্যেপাঠে শরতে শিউলী ফুলকে নিয়ে যেমন কাব্য জগতে কবিদের শেষ নেই। তেমনি সাহিত্যিকদের জীবন চলার পথে ভক্ত অনুরাগীদের শেষ নেই। যার কথা বলছি। তিনি সিলেটের মাটি ও মানুষের কবি ও লেখক, মুহিত চৌধুরী। আজ সেই কবির জন্মদিন।

কবি মুহিত চৌধুরী ১৯৬০ সালের ২রা নভেম্বর সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার চক্রবাণী গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। দশম শ্রেণীর ছাত্র থাকাকালে লেখনীতে মনোযোগী হন । কথায় আছে না, ছোট ছোট ভাবনা, ছোট ছোট স্বপ্ন আর ছোট ছোট কাজের সমষ্টিই জীবন। এই ছোট স্বপ্ন থেকে কবি, স্কুল জীবনে
গল্পের বই ’আঁখি ভরা জল’ এবং নাটক ’প্রতিশোধ নেব না’ গ্রন্থ ও নাটক দিয়ে তার পথচলা শুরু করেন।
এরপর থেকে তার সাহিত্যের সাথে এগিয়ে চলা।
মুহিত চৌধুরী মুলত কবি হলেও সাংবাদিকতা ও সংস্কৃতি অঙ্গনে রয়েছে তাঁর বরিষ্ট বিচরণ। তাঁর সুনিপুণ লেখনিতে যেমন পাঠকরা প্রাণ ফিরে পায় তেমনি দক্ষ নেতৃত্বে ও দেশ জাতির কল্যাণে অগ্ররাশি হয়ে রয়েছেন। সেজন্য আজ সিলেটবাসীর পেয়েছে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাব যার প্রতিষ্ঠাতা তিনি। পাশাপাশি তিনি জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল দৈনিকসিলেট ডটকম ও মাসিক বিশ্ববাংলার সম্পাদক। মুহিত চৌধুরী একাধারে একজন লেখক, কবি,গীতিকার, সাংবাদিক ও নাট্যকার।
কবির কয়েকটি বই আমি পড়ে বুঝতে পেরেছি আসলে তিনি সাহ্যিত্যে চমৎকার রসায়ন করেন। তাঁর কাব্যগ্রন্থে সাহিত্যের দুটো প্রধান বিভাগ রয়েছে। তার একটি হলো-ভাবের সাহিত্য আর অন্যটি হলো জ্ঞানের সাহিত্য। জ্ঞানের সাহিত্য, এখানে কবি রসের মাধ্যমে পাঠকের বুদ্ধিকে জাগ্রত করে দেন।

পাঠক লেখার মধ্যখানে যে বলেছিলাম শরতের শিউলী ফুলকে নিয়ে যেমন কাব্য জগতে আলোচনার শেষ নেই।সেই কথাটির অন্তনির্হিত যদি এভাবে বলি মনে হয় ভুল হবে না। আমার স্মৃতি শক্তি যদি আমার সাথে প্রতারনা না করে তাহলে বলবো। তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশে একুশ শতাব্দীর অন্যতম প্রাণ পুরুষ। কবি মুহিত চৌধুরী আধুনিকতা, অসাম্প্রদায়িক ও স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী একজন লেখক।
আসলে, সমাজ বদলে যাচ্ছে, নতুন সমাজের নতুন মানুষ, সবকিছুকে মিলিয়ে সামগ্রিকভাবে জীবনকে গড়ে তোলার জন্য এগিয়ে আসছেন। আমরা তাই মানবসমাজ, সংস্কৃতি, চেতনা এবং মানবদেহকে নিয়ে পরিবেশের ইতিহাসসম্মত ও পরস্পরনির্ভর গতি প্রকৃতি যদি বোঝতে না পারি তাহলে সাহিত্যের জিজ্ঞাসার কোনো কিনারা করতে পারবো না। আমাদের সাহিত্য চিন্তায় একটা সামগ্রিক পটভূমি তাই আনতেই হবে।

সাহিত্যের মাঝে আমরা যে বিষয়টা খুঁজি তা হলো রসাস্বাদন। আর রসদান করাই সাহিত্য ও সাহিত্যিকের উদ্দেশ্য। নদী চলতে চলতে প্রসারিত হতে থাকে, তেমনি সাহিত্যও চলতে চলতে একজনের মনের মাধুরী মিশ্রিত রস-বাণী বিশ্বময় ব্যাপ্তি লাভ করে। এ সাহিত্যটা অন্তরের, জীবন-গভীরের গোপন কথা। মুখের ভাষায় যা প্রকাশ করা যায় না, তা প্রকাশ করতে হয় ছবির মাধ্যমে। আর অঙ্কিত ছবিই মূলত সাহিত্য, যা সবার জন্য সৃষ্টি হয়। তেমনি কবি মুহিত চৌধুরী ও করছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘সাহিত্য’ গ্রন্থে বলেন, অন্তরের জিনিসকে বাইরের, ভাবের জিনিসকে ভাষায়, নিজের জিনিসকে বিশ্বমানবের ও ক্ষণকালের জিনিসকে চিরকালের করিয়া তোলার নামই সাহিত্য। সাহিত্যিকরা প্রাণের স্পন্দনের সঙ্গে মিশে যেতে পারেন, এমন একজন কবি মুহিত চৌধুরী,যিনি গণমানুষের প্রাণের স্পন্দনে মিশে গেছেন।

কবি মুহিত চৌধুরীর প্রকাশিত গ্রন্থ গুলো হচ্ছে প্রতিশোধ নেব না (নাটক), সানাই কথা বললো না (কবিতা), নির্লেজ্জর লজ্জা (কবিতা), আমেরিকায় বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি (গবেষণা), যদি ভালোবাসা মরে যায় (কবিতা), সহজ হজ্জ্ব গাইড(ধর্ম বিষয়ক), ফিরে আসা (উপন্যাস), কসম সিনাই পর্বতের (কবিতা), পাখি গেলে পোকার বাস (গীতি সংকলন)। বাংলাদেশে অনলাইন সাংবাদিকতা, এইঘর এই মন (উপন্যাস) ।

সাহিত্য যদি সমাজের শরীর হয় তবে কাব্য সাহিত্য হবে তার আত্মা। মানুষের ভেতর, কবে, কখন, কিভাবে কবিতা প্রথম সঞ্চারিত হয়েছিল তা আজ গবেষণার অথবা গবেষণার অতীত বিষয়।গেল দশকে হাজার বছর আগে স্পেনের গুহা মানুষ যে ধাবমান হরিণ এঁকেছিল তার পা ছিল অনেক। মানুষের চলার সঙ্গে হাজার হাজার বছর ধরে লেগে আছে গতি, ঠিক ওই বহুপা হরিণের মতো। এক কথায় বলা যায় গতি আছে বলেই মানুষ পাথরে পাথর ঘষে আগুন আবিষ্কারের পর চমৎকৃত হয়েছিল। মানুষের উদ্ভাবনেচ্ছা ওই আলতামারিয়া গুহার বহুপা বিশিষ্ট হরিণের মতো।

মানুষ বেঁচে থাকে না রেখে যায় তাঁর সৃষ্টি । তেমনি সৃষ্টির সন্ধানে আগামির প্রজন্মর জন্য এই কবি লিখেন নতুনধারায় আপন মনে সৃজনধর্মী লেখা।

কবি মুহিত চৌধুরী গীতি সংকলন প্রসঙ্গে বিশিষ্ট গবেষক প্রফেসর নন্দলাল শর্মা বলেছেন-’সিলেট হল গানের স্বপ্নরাজ্য। এই রাজ্যে এখনও বিচরন করছেন মরমী ফকির। সংসার বিবাগী না হয়েও অনেকে মরমী রাজ্যে বিচরণ করে আমাদের সংগীত জগতকে সমৃদ্ধ করেছেন। একুশ শতকে এসেও মরমী গানের ধারা সিলেটে সজীব ও প্রবাহমান। এ ধারার একজন উল্লেখযোগ্য গীতিকবি মুহিত চৌধুরী। কবি গীতিকার-ঔপন্যাসিক-নাট্যকার-গবেষক ও সম্পাদক নানা পরিচয় তার। দীর্ঘকাল ধরে তিনি গান লিখেছেন। মরমীগান, পল্লিগীতি আধুনিক প্রভৃতি বিচিত্র ধরনের গান তিনি সমান দক্ষতায় লেখেন। কবির জন্মদিন হউক উজ্জ্বল বেচে থাকুন কাব্যজগতে।

সর্বশেষে যে কথাটি বলা একান্ত কাম্য কবি মুহিত চৌধুরী, চার দশকের বেশি সময় ধরে যুক্ত আছেন লেখালেখির সাথে। স্কুলজীবনে তিনি লিখেছেন দু’টি বই। এ পর্যন্ত ১২টি বই প্রকাশিত হয়েছে তাঁর।
বাংলাদেশ বেতার, সিলেটের একজন প্রসিদ্ধ গীতিকার ও নাট্যকার তিনি। এ পর্যন্ত চার শতাধিক গান লিখেছেন। তাঁর লেখা গানগুলো নিয়ে ২০১০ সালে প্রকাশিত হয় ‘পাখি গেলে পোকার বাস’ শিরোনামে গীতি সংকলন।

এছাড়া বেতার ও টিভিতে অর্ধ শতাধিক নাটক প্রচারিত হয়েছে তাঁর। পেশায় একজন সাংবাদিক তিনি। সিলেটে অনলাইন সাংবাদিকতার পথিকৃৎ বলা হয় তাকে।

যুক্তরাষ্ট্রে থাকাকালিন ‘শিকড়’ নামক একটি ম্যাগাজিন প্রকাশ করতেন তিনি। ২০১১ সালে ‘দৈনিকসিলেট ডটকম’ নামে একটি অনলাইন পত্রিকা প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৪ সালের ৮ জুলাই প্রতিষ্ঠা করেন সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাব।

১৯৯৫ সালে মানবতাবাদী কবিতা লিখে যুক্তরাষ্ট্রের ’দ্যা ন্যাশনাল লাইব্রেরী অব পোয়েট্রি’ থেকে এডিটর চয়েজ এওয়ার্ড পান। কথায় আছে কীর্তিমানের মৃত্যু নেই । মানবজীবন সংক্ষিপ্ত কিন্তু এ সংক্ষিপ্ত জীবনে মানুষ তার দেহকে অমরত্ব না দিতে পারলেও তার কীর্তির অমরত্ব দিতে পারে। সর্বশেষে এটাই বলবো শুভ জন্মদিন মুহিত চৌধুরী-শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় বেঁচে থাকুন বাঙ্গালীর হৃদয়ে।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *