Main Menu

নেককার নারীর ৭ গুণ

ধর্ম ডেস্ক:
পুরুষের জীবনে মা, বোন, স্ত্রী- বিভিন্ন সম্পর্কে জরিয়ে আছেন নারী। মায়ের মায়া-মমতা ছাড়া শিশুর স্বাভাবিক শৈশব কল্পনা করা যায় না, বেড়ে ওঠার বয়সে বোনের যত্ন, পরিণত বয়সে সবকিছু গুছিয়ে নিতে স্ত্রী হিসেবে নারীর বিশেষ অবদান থাকে একজন পুরুষের জীবনে। মূলত আদর্শ পরিবার-সমাজ নির্মাণে নারীর ভূমিকা থাকে সব থেকে বেশি।

নারী নেককার এবং আল্লাহ ভীরু হলে এর প্রভাব পড়ে তার নিজস্ব ও আশপাশের পরিবেশে। এভাবেই সুস্থ সমাজ গড়ে ওঠে। কোরআন ও হাদিসের বিভিন্ন জায়গায় নেককার ও সৎ নারীর বেশ কিছু গুণ বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে নেককার নারী সাতটি গুণ তুলে ধরা হলো-

সালিহা (সতী ও দ্বীনদার)

একজন মুমিন নারী হবেন সালিহা তথা সতী ও দ্বীনদার। ‘সালিহা’ শব্দের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনে জারির তাবারি বলেন, ‘দ্বীনের সঠিক অনুসারী সৎকর্মশীল নারীরা।’ (তাফসিরে তাবারি: ৬/৬৯১)

এই গুণের অধিকারী নারীদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ বলেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘পৃথিবী পুরোটাই সম্পদ। আর পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ হলো সালিহা তথা সতীসাধ্বী ও নেককার নারী।’ (মুসলিম, হাদিস, ১৪৬৭)

‘কানেতা’

মুমিন নারীকে হতে হবে ‘কানেতা’ তথা আনুগত্যশীল। ‘কানেতা’ শব্দের ব্যাখ্যায় আল্লামা কাতাদা (রহ) বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা ও স্বামীর অনুগত নারীরা।’ (তাফসিরে তাবারি: ৬/৬৯১)

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলো—কোন নারী উত্তম? তিনি বললেন, ‘যাকে দেখলে স্বামী আনন্দবোধ করে, যাকে আদেশ করলে আনুগত্য করে এবং স্ত্রী ও সম্পদের ব্যাপারে স্বামী যা অপছন্দ করে তা থেকে বিরত থাকে।’ (আহমদ: ৯৫৮৭)

স্বামীর আনুগত্যের মাধ্যমে একজন মুমিন নারী জান্নাতে গড়ে নিতে পারেন নিজ ঠিকানা। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত সালাত পড়বে, রমজানের রোজা রাখবে, নিজ লজ্জাস্থান হিফাজত করবে এবং স্বামীর আনুগত্য করবে সে জান্নাতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করবে।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস, ৪১৬৩)

‘নিজের সতীত্ব ও স্বামীর সম্পদের হেফাজতকারী’

একজন মুমিন নারী স্বামীর অনুপস্থিতিতে তার ধন-সম্পদ ও নিজ সতীত্ব হেফাজত করবেন। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘উত্তম স্ত্রী সে, যার দিকে তাকালে তোমাকে আনন্দিত করে, আদেশ করলে আনুগত্য করে, আর তুমি দূরে থাকলে সে তার নিজের ব্যাপারে এবং তোমার সম্পদের ব্যাপারে তোমার অধিকার রক্ষা করে।’ (বাযযার: ৮৫৩৭)

আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তাকওয়া অবলম্বনের পর কোনো মুমিন পুরুষের জন্য সতী স্ত্রীর থেকে অধিক কল্যাণকর কিছু নেই। কেননা, স্বামী তাকে আদেশ করলে সে তা মান্য করে। স্বামী তার দিকে তাকালে সে তাকে আনন্দ দেয়। স্বামী তার সম্পর্কে কোনো কসম খেলে সে স্বামীর কসম পূর্ণ করতে সহযোগিতা করে। আর স্বামী কোথাও গেলে স্ত্রী নিজ সতীত্ব ও স্বামীর সম্পদ সংরক্ষণের ব্যাপারে স্বামীর কল্যাণকামী হয়।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস, ১৮৫৭)

দ্বীনের কাজে স্বামীর সহযোগী

একজন মুমিন নারী স্বামীকে দ্বীনদারির ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবেন। সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আবেদন করলেন— আমরা যদি জানতাম কোন সম্পদ সর্বোত্তম যা আমরা অর্জন করব! (তাহলে কতইনা ভালো হতো!) তখন রাসুলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘সর্বোত্তম সম্পদ হলো, জিকিরকারী জিহ্বা, শোকরগোজার অন্তর এবং মুমিন স্ত্রী যে তার স্বামীকে তার ঈমানের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে।’ (তিরমিজি: ৩০৯৪)

হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী, ঈমানের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা তথা স্বামীকে পরিপূর্ণরূপে দ্বীন মেনে চলতে সহযোগী হওয়া মুমিন নারীর বিশেষ গুণ। মোল্লা আলী কারি (রহ) লিখেন, ‘স্ত্রী স্বামীকে তার দ্বীনের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে। যেমন- স্বামীকে সালাত, রোজা ও অন্যান্য ইবাদতের কথা স্মরণ করিয়ে দেবে এবং তাকে ব্যভিচার ও অন্যান্য গুনাহের কাজ থেকে বিরত রাখবে।’ (মিরকাতুল মাফাতিহ: ৪/১৫৫৬)

একজন মুমিন নারী সচ্চরিত্রা হবেন; গোপনে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপনকারিণী হবেন না। এমনকি অশ্লীলতার ধারে-কাছেও যাবে না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে- ‘তারা বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে চারিত্রিক পবিত্রতাসম্পন্ন হবে, ব্যভিচারিণী হবে না এবং গোপনে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপনকারিণী হবে না।’ (সূরা নিসা, ২৫) কেননা আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেন, ‘তোমরা প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য কোনো ধরনের অশ্লীল কাজের কাছে যেও না।’ (সূরা আনআম, আয়াত, ১৫১)

পর্দার বিধান যথাযথভাবে পালন

একজন মুমিন নারী ইসলামের পর্দাবিধান যথাযথভাবে পালন করবেন।

পর্দাবিধানের সারকথা হলো- মুমিন নারী ঘরেই অবস্থান করবেন। পরপুরুষের সঙ্গে কথা-বার্তা এবং সাক্ষাৎ করবেন না। প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাবেন না। প্রয়োজনে বাইরে যেতে হলে বোরকা পরিধান করে বের হবেন।

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা তোমাদের গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করো। আগেকার জাহেলি যুগের মতো নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়িও না। তোমরা সালাত কায়েম করো, জাকাত প্রদান করো এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করো।’ (সুরা আহজাব, আয়াত, ৩০)

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে নবী, আপনি আপনার স্ত্রী, কন্যা ও মুুমিন নারীদেরকে বলে দিন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্ত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষামাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা আহজাব, আয়াত, ৫৯)

আল্লাহ তাআলা আরও ইরশাদ করেন, ‘তারা যেন নিজেদের সৌন্দর্য তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর অন্য স্ত্রীর পুত্র, ভাই, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, আপন নারীরা, তাদের মালিকানাধীন দাসী, যৌনকামনা নেই—এমন পুরুষ খেদমতগার এবং নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ব্যতীত অন্য কারো কাছে প্রকাশ না করে।’ (সুরা নুর, আয়াত, ৩১)

সরলমতী

একজন মুমিন নারী সতীসাধ্বী হওয়ার পাশাপাশি সরলমতী হবেন। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘যারা সতীসাধ্বী, সরলমতী মুমিন নারীদের প্রতি অপবাদ আরোপ করে তারা দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশপ্ত। আর তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।’ (সুরা নুর, আয়াত, ২৩)






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *