Main Menu

লন্ডনে যে কারণে বেকার কেয়ার ভিসায় আসা বাংলাদেশিরা

মুনজের আহমদ চৌধুরী, লন্ডন

সিলেট শহরের ফাতেমা-রিপন দম্পতি বাংলাদেশ থেকে ৩০ লাখ টাকা দিয়ে দালালের সঙ্গে স্ট্যাম্পে চুক্তি করে কেয়ার ভিসায় ব্রিটেনে এসেছেন। ফুলটাইম (পূর্ণকালীন) কাজ দেওয়ার কথা থাকলেও, নিয়োগদাতা গত ছয় মাসে এক ঘণ্টাও কাজ দেয়নি। ফলে দুর্বিষহ জীবন পার করছেন তারা। এমন উদাহরণ একটি নয়, দেশটিতে এখন শত শত উদাহরণ।

 

 

কেয়ার বা ওয়ার্ক পারমিট ভিসার মূল শর্ত হলো কাজ থাকতে হবে। কিন্তু কাজে যোগ দিতে না পারায় গত দুই সপ্তাহে কেয়ার ভিসায় আসা ব‌্যক্তিদের সর্বশেষ অবস্থা জানতে চিঠি দিয়েছে হোম অফিস।

এ অবস্থায় ভিসা বাতিলের শঙ্কায় আছেন বহু বাংলাদেশি। ইতোমধ্যে কাজ দিতে না পারা ও অনিয়মের কারণে বাতিল হয়েছে বেশ কয়েকটি কেয়ার হোমের লাইসেন্সও। এতে বাতিল হওয়া কেয়ার হোমের কর্মীরা সীমাহীন দুর্ভোগ পার করছেন।

আয়েশা সিদ্দীকি কেয়ার ভিসায় লন্ডনে এসেছেন ছয় মাস আগে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, হাজারো বাংলাদেশি কেয়ার ভিসায় ব্রিটেনে আসার পর থেকে বেকার। শুধু আমি একা নই, বেশির ভাগ কোম্পানি কাজ দেয় না, যারা দেয়, তারাও সপ্তাহে সাত-আট ঘণ্টা করে দেয়। ওই কাজের টাকায় ট্রেন-বাসের ভাড়াই হয় না। থাকা-খাওয়ার খরচ তো অনেক দূরে।

ফাহিম আহমেদ নামের একজন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, তার কোম্পানিসহ বহু কোম্পানি এখানে আসার পর ইন্টারভিউ নিয়ে বলেছে তিন মাসের মধ্যে ইংরেজি ভাষার দক্ষতা অর্জন করতে হবে। ইংরেজি না জানলে তারা কাজ দেবে না। ইংরেজি বলতে পারলে তারপর কেয়ারারের ট্রেনিং হবে। সেই ট্রেনিংয়ের পর টেস্ট পরীক্ষায় পাস করলে তবেই মিলবে কাজ।

রিপন আহমেদ বলেন, সিলেটে যার সঙ্গে ২২ লাখ টাকায় চুক্তি হয়েছিল, এখন সে বলছে লন্ডনে পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত তার সঙ্গে চুক্তি ছিল, কাজের ব‌্যবস্থা সে করতে পারবে না। গত তিন মাস ধরে স্ত্রী ও এক সন্তানকে নিয়ে বেকার, সীমাহীন দুর্ভোগে দিন কাটছে আমাদের। রুমের ভাড়া মাসে ৯০০ পাউন্ড। কতদিন দেশ থেকে টাকা এনে ভাড়া দেবেন বা দিতে পারবেন, তা নিয়ে শঙ্কিত তিনি।

দালালরা বলছে, লন্ডনে পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত চুক্তি ছিল, কাজের ব‌্যবস্থা করতে পারবে নাযা বলছেন আইনজীবী ও সমাজকর্মীরা

 

 

লন্ডনের চ‌্যান্সেরি সলিসিটর্সের কর্ণধার ব‌্যারিস্টার মো. ইকবাল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কেয়ার ভিসা চালুর পরই রাতারাতি একশ্রেণির কেয়ার হোম মালিক ও তাদের দালালরা ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ব্রিটেনে আইনের ফাঁক গলে মানুষ পাচারের ব‌্যবসা শুরু করে। যে কেয়‌ার হোম মালিকের পাচঁ জন কর্মীর দরকার, তিনি ৪০ জনকে এনেছেন। আবার এমন ব্যক্তিও এসেছেন, যারা কেয়ার দেওয়ার জন‌্য প্রশিক্ষিত নন বা ন্যূনতম ধারণা নেই। তারা ব্রিটিশদের কেয়ার দেবেন, কিন্তু ব্রিটিশদের কথা বুঝতে পারেন না। হোম অফিসের উচিত ছিল যিনি কেয়ার ভিসায় আসছেন, কর্মী হিসেবে তার দক্ষতা যাচাই নিশ্চিত করা।

তারা আরও বলেন, যারা ৩০ লাখ টাকা খরচ করে ব্রিটেনে এসে কর্মহীন বেকার অবস্থায় আছেন, তাদের অসহনীয় দুর্ভোগে দিন কাটছে। হাজার হাজার কর্মীর মধ্যে অন্তত হাজার আছেন বাংলাদেশি, যারা কাজ না পাওয়ার কারণে ভিসা বাতিলের শঙ্কায় আছেন। কেয়‌ার হোম মালিকরা ও হোম অফিস এ দায় এড়াতে পারে না।

ব‌্যারিস্টার শুভাগত দে বলেন, প্রমাণ থাকলে প্রতারিতরা হোম অফিসে অভিযোগ করতে পারেন, মামলা করারও কথা বলেন অনেকে। অভিযোগ পেলে হোম অফিস তদন্ত করবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। কিন্তু এতে ভুক্তভোগীর সমস‌্যার সমাধান হচ্ছে না। আসার আগে জেনেবুঝে আসাটাই সবচেয়ে জরুরি।

সমাজকর্মী জুনেদুর রহমান বলেন, ইংল্যান্ডে কেয়ার হোমের ভিসায় কোনও কিছু চিন্তা না করেই ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা খরচ করে আসছেন। কিন্তু ওয়ার্ক পারমিট সঠিক না হওয়ায় নিয়োগদাতা কাজ না দিতে পারায় অসংখ‌্য বাংলাদেশি এ দেশে এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এ ছাড়া ব্রিটিশ সরকার নতুন আইন করেছে, যদি ইলিগ্যাল কোনও ওয়ার্কারকে কোনও নিয়োগদাতা কাজ দেয়, ইমিগ্রেশন কাজের জায়গায় কোনও ইলিগ্যাল লোক পাওয়া যায়, তাহলে সেই এমপ্লয়িকে ৪৫ হাজার পাউন্ড জরিমানা করা হবে। যা আগে ছিল ১৫ হাজার পাউন্ড। তাই জরিমানার ভয়ে মালিকরা অর্ধেক মজুরিতেও কাজ দিচ্ছেন না।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ থেকে যারা আসছেন, বুঝেশুনে সত্যিকার ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে আসবেন। যে কোম্পানি আপনাকে ওয়ার্ক পারমিট দেবে, সেই কোম্পানিতে আপনার কাজ থাকতে হবে। এ ছাড়া ব্রিটিশ আইন মোতাবেক কোনও কেয়ার হোম কোম্পানি কারও কাছ থেকে টাকা নিতে পারবে না। কোম্পানিগুলো নিজেরা ২০০ পাউন্ড খরচ করে ওয়ার্ক পারমিট ফ্রি দিয়ে থাকে।

কেয়ার হোমের ভিসায় এলে ড্রাইভিং জানা থাকতে হবে এবং ইংরেজি বুঝতে ও বলতে হবে এবং কেয়ারারের সব কাজ প্রফেশনালভাবে জানা থাকতে হবে। না হলে এখানে এসে কাজ মিলবে না বলে সতর্ক করেন তিনি।

ইউকে বাংলা প্রেসক্লাবের ট্রেজারার সাংবাদিক মাহবুবুল করীম সুয়েদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কেয়ার ভিসায় কোন টাকা নেওয়ার কথা না। অথচ স্পাউসসহ আসার ক্ষেত্রে দাল‌ালরা ২০ থেকে ২৫ হাজার পাউন্ড হাতিয়ে নেওয়ার অসংখ‌্য ঘটনা চোখের সামনে। এত টাকা খরচ করে আসার পরও কাজ নেই। অনেকে ইউরোপের দেশগুলোতে ঢোকার চেষ্টা করছেন।

কেয়ার ভিসার নামে একশ্রেণির দালালরা শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আর যারা আসছেন, তাদের শতকরা ৯৫ জনই প্রতারিত হচ্ছেন। শুধু কেয়ার ভিসা নয়, এখন চ‌্যারিটি ভিসা, মসজিদের ইমামের ভিসার নামেও প্রতারণা চলছে।

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *