মানুষের ক্ষতি ডেকে আনে যেসব স্বভাব
জাওয়াদ তাহের, অতিথি লেখক:
মানুষের ভালো-মন্দ নানা রকম স্বভাব আছে। ভালো স্বভাব মানুষকে ভালোর দিকে টেনে নিয়ে যায়। আবার কিছু স্বভাব এমন আছে, যা মানুষকে তিলে তিলে ধ্বংস করে দেয়। আমার ভেতর যদি এসব মন্দ স্বভাব থাকে তাহলে নিজেকে তা থেকে বিরত রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করা।
ধীরে ধীরে একটি স্বভাব থেকে নিজেকে পবিত্র রাখার চেষ্টা করা। আমাদের সবার মাঝেই এসব স্বভাব কমবেশি আছে। তাই নিজের এসব ত্রুটি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা কর্তব্য। এমন কিছু স্বভাব হলো
কৃপণতা
কৃপণতা মানুষের এক মন্দ স্বভাব।
কোরআন ও হাদিসে কৃপণ মানুষের ব্যাপারে অনেক নিন্দা এসেছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ প্রদত্ত অনুগ্রহে (সম্পদে) যারা কৃপণতা করে, তারা যেন কিছুতেই মনে না করে, এটা তাদের জন্য ভালো কিছু; বরং এটা তাদের পক্ষে অতি মন্দ। যে সম্পদের ভেতর তারা কৃপণতা করে, কিয়ামতের দিন তাকে তাদের গলায় বেড়ি বানিয়ে দেওয়া হবে। আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর মিরাস কেবল আল্লাহরই জন্য।
তোমরা যা কিছুই করো আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক অবগত।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৮০)
অহংকার
আল্লাহর দেওয়া নিয়ামত ইত্যাদি নিয়ে অহংকার করা। অন্যকে ও দুর্বল মনে করা, সত্যকে অস্বীকার করা এবং মানুষকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা—এগুলো সব অহংকারের বহিঃপ্রকাশ। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, মানুষ চায় যে তার পোশাক সুন্দর হোক, তার জুতা সুন্দর হোক, এটাও কি অহংকার? রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ সুন্দর, তিনি সুন্দর ভালোবাসেন।
প্রকৃতপক্ষে অহংকার হচ্ছে দম্ভভরে সত্য ও ন্যায় অস্বীকার করা এবং মানুষকে ঘৃণা করা।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৬৬)
আত্মপ্রবঞ্চনা ও আত্মতৃপ্তি
আত্মতৃপ্তি মানুষের অধঃপতন ডেকে আনে। যে ব্যক্তি নিজেকে সর্বেসর্বা মনে করে, তার কোনো ভুল হয় না—এমনটা বিশ্বাস করে, সে ক্ষতির মধ্যে আছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘বস্তুত আল্লাহ বহু ক্ষেত্রে তোমাদের সাহায্য করেছেন এবং (বিশেষ করে) হুনায়নের দিন, যখন তোমাদের সংখ্যাধিক্য তোমাদের আত্মপ্রসাদে লিপ্ত করেছিল। কিন্তু সে সংখ্যাধিক্য তোমাদের কোনো কাজে আসেনি এবং জমিন তার প্রশস্ততা সত্ত্বেও তোমাদের জন্য সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। অতঃপর তোমরা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে (যুদ্ধক্ষেত্র থেকে) পলায়ন করেছিলে।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ২৫)
লৌকিকতা
লোক দেখানো ইবাদত এটি অত্যন্ত ঘৃণিত। আরবিতে এটিকে রিয়া বলে। শয়তান মানুষের ভেতরে, ছলে বলে কৌশলে এই লৌকিকতা ঢুকিয়ে দেয়। আল্লাহ তাআলা লৌকিকতার ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘অতএব দুর্ভোগ সেসব নামাজির জন্য, যারা তাদের নামাজ সম্পর্কে উদাসীন। যারা লোক দেখানোর জন্য তা করে। এবং নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র অন্যকে দেয় না। (সুরা : মাউন, আয়াত : ৪-৮)
হিংসা
আত্মিক এক ধ্বংসাত্মক ব্যাধির নাম হিংসা। হিংসা মানুষকে তিলে তিলে ক্ষয় করে দেয় শেষ করে দেয়। যারা হিংসুক, তারা ইহকাল ও পরকাল উভয় জগতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা ধারণা করা থেকে বিরত থাকো। ধারণা বড় মিথ্যা ব্যাপার। তোমরা দোষ তালাশ করো না, গোয়েন্দাগিরি করো না, পরস্পর হিংসা পোষণ করো না, একে অন্যের প্রতি বিদ্বেষভাব পোষণ করো না এবং পরস্পর বিরোধে লিপ্ত হয়ো না; বরং তোমরা সবাই আল্লাহর বান্দা ভাই ভাই হয়ে যাও।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬০৬৪)
অনিয়ন্ত্রিত রাগ
রাগ মানুষের স্বভাবগত একটি বিষয়। তবে অতিরিক্ত রাগ ক্ষতিকর। অনেক মানুষ আছে সামান্য কিছুতেই প্রচণ্ড রেগে যায়। এই রাগ তার শরীর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। রাগের মাধ্যমে অপ্রত্যাশিত অনেক কিছু ঘটে যায়। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নবী (সা.)-এর কাছে একজন লোক এসে বলল, আমাকে কিছু শিখিয়ে দিন, তবে আমাকে বেশি বলবেন না, যাতে আমি তা মুখস্থ করতে পারি।
তিনি বললেন, ক্রোধ প্রকাশ করো না, উত্তেজিত হইয়ো না। লোকটি তার কথার পুনরাবৃত্তি করলে প্রতিবারই তিনি বললেন, ক্রোধ প্রকাশ করো না, উত্তেজিত হয়ো না। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২০২০)
প্রাচুর্যের মোহ
ধনসম্পদ আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ামত। তবে ধন-সম্পদের প্রতি অতিরিক্ত লোভ-লালসা কল্যাণকর নয়। এই সম্পদের লোভ অনেক সময় তাকে পাপের পথে নিয়ে যেতে বাধ্য করে। মানুষ সম্পদের লোভে পড়ে নীতি-নৈতিকতা হারিয়ে ফেলে। অর্থের প্রতি অতিরিক্ত লালসা মানুষকে পশুর স্তরে নামিয়ে আনে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের জন্য দরিদ্রতার আশঙ্কা করি না; বরং আমি আশঙ্কা করি যে তোমাদের কাছে দুনিয়ার প্রাচুর্য আসবে যেমন তোমাদের আগের লোকদের কাছে এসেছিল, তখন তোমরা সেটা পাওয়ার জন্য পরস্পর প্রতিযোগিতা করবে যেমন তারা করেছিল। আর তা তাদের যেভাবে ধ্বংস করেছিল তোমাদেরও ধ্বংস করে দেবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪০১৫)
যশ-খ্যাতি
যশ-খ্যাতির মোহ এক ভয়ংকর ব্যাধি। যা মানুষের ভেতরকে অন্তঃসারশূন্য করে দেয়। তখন তার ইবাদতে মন বসে না। ভালো কাজগুলো হয়ে যায় একদম প্রাণশূন্য। কাব ইবনে মালিক আল-আনসারি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, দুটি ক্ষুধার্ত নেকড়ে বাঘকে ছাগলের পালে ছেড়ে দেওয়া হলে পরে তা যতটুকু না ক্ষতিসাধন করে, কারো সম্পদ ও প্রতিপত্তির লোভ এর চেয়ে বেশি ক্ষতিসাধন করে তার ধর্মের। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২৩৭৬)
Related News
মজার ছলে কাউকে গালি দেওয়া কি ঠিক?
মজার ছলে কাউকে গালি দেওয়া কি ঠিক? আড্ডার সময়ে বন্ধুরা একে অপরের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনেরRead More
যৌবনকালের ইবাদতের গুরুত্ব নিয়ে যা বললেন আজহারী
যৌবনকালের ইবাদতের গুরুত্ব নিয়ে যা বললেন আজহারী যৌবনকালের ইবাদত একটি লাভজনক ইনভেস্টমেন্ট বলে মন্তব্য করেছেনRead More