Main Menu

হজের সফরে সেলফি প্রবণতা যে কারণে ক্ষতিকর

মুহাম্মদ ছফিউল্লাহ হাশেমী, অতিথি লেখক:
হজ ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম। যাদের পবিত্র মক্কায় যাতায়াত ও হজের কাজ সম্পাদন করার মতো আর্থিক ও দৈহিক সামর্থ্য আছে তাদের জন্য জীবনে একবার হজ পালন করা ফরজ।

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি অর্জনই হজের মূল উদ্দেশ্য। তাইতো হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে হাজিরা ছুটে আসেন পবিত্র মক্কায়। মহান রবের প্রতি ভক্তি, ভালোবাসা আর প্রেম উথলে উঠে হাজিদের হৃদয় আঙ্গিনায়। পবিত্র কাবার চত্বরে আসতেই তারা নিজেকে আবিষ্কার করেন পরম সৌভাগ্যবান হিসেবে।

বাইতুল্লাহর প্রতিটি পদে পদে, প্রতিটি পদক্ষেপে তারা খুঁজে ফেরেন মহান রবের সন্তুষ্টি। সেই সন্তুষ্টি পেতে চাইলে হজসহ যাবতীয় ইবাদত হতে হবে লৌকিকতামুক্ত, শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। লোক দেখানো যেকোনো ধরনের কার্যক্রমই হজসহ যাবতীয় ইবাদত-বন্দেগির চেতনাকে বিনষ্ট করে দেয়।

বর্তমানে হজের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও মহান ইবাদতে গিয়েও মোবাইল ফোনের ক্যামেরা ব্যবহার করে সেলফি তথা নিজেদের ছবি তোলায় ব্যস্ত হচ্ছেন অনেক হজযাত্রী। জেনে কিংবা না জেনে তারা মক্কার স্মৃতিবিজড়িত বিভিন্ন জায়গার ছবি কিংবা সেলফি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

ইহরাম বাঁধার স্থান (মিকাত) থেকে শুরু করে বিমানে, ইহরামে, বায়তুল্লাহ তাওয়াফে, জমজমের পানি পানে, সাফা-মারওয়া সায়িতে, আরাফাতের ময়দানে, মিনার কঙ্কর নিক্ষেপে এমনকি মাথামুণ্ডনেও সেলফি তুলে তা টুইটার বা ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করছেন অনেক হাজী সাহেব।

নিজেই নিজের ছবি তোলাকেই সেলফি বলা হয়। আজকাল বিশেষ কোথাও গেলে সেখানে সেলফি তুলে বিশেষ মুহূর্তের এমন ছবি পোস্ট করা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খুবই জনপ্রিয় প্রবণতা।

বর্তমান সমাজে সেলফি একটি রোগের মতো হয়ে গেছে। মহাকাশ গবেষণা থেকে শুরু করে দিনমজুর পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছেছে এ সেলফির ব্যবহার। অতি গুরুত্বপূর্ণ ও মহান ইবাদত হজে গিয়েও সেলফির ব্যবহার একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা শুধুমাত্র মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই হজের আহকামগুলো ইখলাসের সঙ্গে যথাযথ আদায় করতে হয়।

লোক দেখানো যে কোনো ধরনের কার্যক্রমই ইবাদত-বন্দেগির চেতনাকে বিনষ্ট করে দেয়। সেলফির কার্যক্রম, ক্যামেরার ফ্ল্যাশ ইবাদতের অন্তরায়। মুমিন হৃদয়ের একনিষ্ঠতায় মারাত্মক বিঘ্ন ঘটায় এই সেলফি। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, যেকোনো রকম আত্মপ্রদর্শনে মুমিনের বড় সম্পদ তাকওয়া অর্জন হয় না। তাই হজের সফরে নিজেকে প্রদর্শনের ইচ্ছাকে দমিয়ে রাখতে হবে।

হজ তথা ইবাদতে সেলফির মাধ্যমে সাধারণত মানুষের বাহবা পাওয়াই উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, যার মাধ্যমে ইবাদত রিয়াগ্রস্ত হয়, যাকে হাদিসে বলা হয়েছে ‘শিরকে আসগর’ ছোট শিরক। এসম্পর্কে রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘সামান্যতম রিয়াও (লোক দেখানো আমল) শিরক।’ (সুনান ইবনে মাজাহ)।

অন্যত্র রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি লোক দেখানো ইবাদত করে, আল্লাহ এর বিনিময়ে তার লোক দেখানো উদ্দেশ্য প্রকাশ করে দেবেন।’ (সহিহ বুখারি)।

বর্তমানে মহামারীর মতো ছড়িয়ে পড়া এই সেলফি তোলা ও ভিডিও করা মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। যেখানে মানুষ শুধু আল্লাহকে পেতেই যায়, সেখানে লাইক-কমেন্ট পেতে মরিয়া হওয়া অত্যন্ত গর্হিত কাজ।

এছাড়াও মনে রাখতে হবে, বাইতুল্লাহ জিয়ারত বা হজ মূলত আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইবরাহিম (আ.)-এর স্মৃতির নির্দশনসমূহ ও তার পরিবারের চরম আত্মত্যাগেরই স্মরণ।

সুতরাং হজের সময় নিজেই নিজের ছবি তুলে পোস্ট করা থেকে বিরত থেকে হজের কার্যাদি সম্পন্নের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে তাঁর সন্তুষ্টির জন্য হজে অংশগ্রহণ ও একমাত্র তাঁর সন্তুষ্টির জন্যই হজ পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন!

লেখক: পরিচালক, বেতুয়া হাশেমিয়া দারুস সুন্নাহ মাদরাসা, দেবিদ্বার, কুমিল্লা






Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *