ব্রিটেনে জমে উঠেছে পিতৃত্ব ব্যবসা

বিদেশবার্তা২৪ ডেস্ক:
ব্রিটিশ পুরুষেরা অভিবাসী শিশুদের বাবা হিসেবে নিজের নাম ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন হাজার হাজার পাউন্ড৷ বিবিসির অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এ তথ্য৷
অভিবাসী নারীদের অনেকেই জানিয়েছেন, প্রায় ১১ লাখ টাকার বিনিময়ে তাদের সন্তানের জন্মসনদে একজন ব্রিটিশ নাগরিককের নাম নিবন্ধন করিয়েছেন। এই ধরনের জালিয়াতির মাধ্যমে নবজাতক শিশুরা ব্রিটিশ নাগরিকত্ব ও মায়েরা বৈধতা পেয়ে থাকেন।
“আমি একজন ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী নাগরিক। আপনি যদি সন্তানসম্ভবা হন এবং আপনার শিশুর জন্য যদি বাবা খোঁজেন, আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।”
“আমি চার মাসের সন্তানসম্ভবা। আমার ২৫-৪৫ বছর বয়সি একজন [ব্রিটিশ] নাগরিক বাবার প্রয়োজন।
সম্প্রতি, ব্রিটেনের ফেসবুক সয়লাব এই ধরনের বার্তা ও বিজ্ঞাপনে।
বিবিসির একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী অনথিভুক্ত অভিবাসী মায়েদের কেন্দ্র করে সংগঠিত হচ্ছে ব্যাপক জালিয়াতি।
ব্রিটিশরা অভিবাসী মায়েদের গর্ভে জন্ম নেয়া নবজাতকের বাবা হিসাবে প্রশাসনের কাছে নিবন্ধিত হতে প্রায় ১১ হাজার পাউন্ড করে নিচ্ছেন। সত্যিকারের না হলেও অর্থের বিনিময়ে একজন সদ্য ভূমিষ্ট শিশুর জন্মসনদে পিতা পরিচয় দিয়ে শিশুটিকে বৃটিশ নাগরিক হতে সহায়তা করছেন অনেকেই।
অনিয়মিত অভিবাসী হিসেবে বৈধতা পেতে এবং অভিবাসী শিশুর নাগরিকত্ব নিশ্চিত করার জন্যই এমন বেআইনি কাজে বিপুল অর্থ ঢালছেন অভিবাসী নারীরা।
জাল পিতা ও সন্তানসম্ভবা নারীদের খুঁজে পেতে একের পর বিজ্ঞাপনের দেখা মিলছে ব্রিটেনের বিভিন্ন কমিউনিটির প্রাইভেট ফেসবুক গ্রুপগুলোতে।
এছাড়া, এই খাতে বেশ কিছু মধ্যস্থতাকারীও তৈরি হয়েছে। যারা অভিবাসী মা ও ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী পুরুষদের মধ্যে যোগাযোগ করিয়ে দিচ্ছেন। এসব ক্ষেত্রে তারা মধ্যস্থতার জন্য সার্ভিস চার্জ নামে অবৈধ মুনাফা নিয়ে থাকেন।
বিবিসির একজন সাংবাদিক একজন গর্ভবতী মহিলার হয়ে গেছেন এক মধ্যস্থতাকারীর কাছে৷ তিনি তার বন্ধুর ভবিষ্যত সন্তানের জন্য বাবা খুঁজছেন বলে জানান। সংশ্লিষ্ট দালাল বা মধ্যস্থতাকারী তাকে ৩৫০ পাউন্ডের বিনিময়ে একজন ব্রিটিশের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। অপরদিকে, সন্তানের বাবা হতে ওই ইংরেজ নাগরিককে প্রায় ১০ হাজার পাউন্ড দেয়ার শর্তে চুক্তিতে আসার প্রস্তাব পান প্রসূতি নারী।
মধ্যস্থতাকারী একজন দালাল বিবিসির প্রতিবেদককে বলেন, ‘‘আমার কাছে থাকা সব পুরুষ ব্রিটেনে জন্মগ্রহণ করা। তারা এর আগে কারও বাবা হিসেবে নিবন্ধিত হননি। আমি জানি কীভাবে পুরো প্রক্রিয়া সামাল দিতে হয়। আপনার বৈধতা নিয়ে চিন্তা করবেন না। পরবরতীতে অবশ্যই বৈধতা পেয়ে যাবেন।”
এসব প্রতারকদের তথ্য অনুযায়ী, ব্রিটেনে বছরের পর বছর ধরে অনুশীলন হওয়া এই প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত সহজ এবং এভাবে হাজারো অভিবাসী নারী উপকৃত হয়েছেন।
অভিবাসন আইন বিশেষজ্ঞ আইনজীবী আনা গঞ্জালেজ বিবিসিকে বলেন, ‘‘এটি অবিশ্বাস্যভাবে বিস্তৃত একটি জালিয়াতি। এটি অত্যাধুনিক হওয়ায় নজরদারি করা অত্যন্ত কঠিন। এই কৌশলটি অনিয়মিত পরিস্থিতিতে থাকা নারীদের হতাশা এবং তারা যুক্তরাজ্যে থাকতে যে কোন ছাড় দিতে প্রস্তুত সেটির প্রামণ।”
এই ধরনের কোন কেলেঙ্কারি সম্পর্কে জানার পর যুক্তরাজ্য কর্তৃপক্ষ জালিয়াতি প্রতিরোধ ও শনাক্ত করার জন্য আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
ব্রিটিশ হোম অফিস বিবিসিকে জানায়, শুধুমাত্র একটি জন্মসনদ থাকলেই পিতৃত্বের প্রমাণ যথেষ্ট নয়। কারও আবেদনে সন্দেহ থাকলে অতিরিক্ত প্রমাণ চাওয়া হয়।
আরেক অভিবাসন আইনজীবী হারজাপ ভাঙ্গালের মতে, “এই ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়। এই একক পদক্ষেপ পুরো সমস্যাকে পরিবর্তন করবে না৷ অনেকে এসব বেআইনি কাজে জড়িত। দৃস্কৃতিকারীরা জানে তাদের তেমন কোন বিচার হবে না। যার কারণে তারা তাদের অবৈধ কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে।”
Related News

বাংলাদেশি শিশুর লেখা চিঠির জবাবে যা বললেন চীনা প্রেসিডেন্ট
বিদেশবার্তা২৪ ডেস্ক: চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের কাছে লেখা চিঠির জবাব পেয়েছেন বাংলাদেশি শিশু আলিফা চীন।Read More

ইইউতে অনিয়মিত অভিবাসন: ২০২২ সালে আসা বাংলাদেশির সংখ্যা প্রায় ২৭ হাজার
বিদেশবার্তা২৪ ডেস্ক: ২০২২ সালে অনিয়মিত পথে ইউরোপীয় ইউনিয়নে এসেছেন ২৬ হাজার ৫২৭ বাংলাদেশি অভিবাসী। এদেরRead More