Main Menu

হজের সফরে যেসব জায়গায় দোয়া কবুল হয়

ধর্ম ডেস্ক:
হজের সফর দোয়া কবুলের মোক্ষম সময়। হজ বা ওমরাহর জন্য ইহরামের নিয়ত করা থেকে শুরু করে হজ ও ওমরাহ সম্পন্ন করে বাড়িতে ফিরে আসার পরেও ৪০ দিন পর্যন্ত হাজির দোয়া কবুল হতে থাকে। হজের সফরে এমন কিছু সময় ও স্থান রয়েছে, যে সময় ও স্থানে দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

দোয়া করার প্রসিদ্ধ কিছু স্থান উল্লেখ করা হলো-

হারাম শরিফ

হারাম শরিফের সীমা বায়তুল্লাহর পশ্চিমে জেদ্দার পথে শুআইদিয়া পর্যন্ত ১০ মাইল, পূর্বে জেরুসালেমের পথে ৯ মাইল, দক্ষিণে তায়েফের পথে ৭ মাইল এবং উত্তরে মদিনা শরিফের পথে ৫ মাইল। এটি ইবাদতের সর্বশ্রেষ্ঠ স্থান এবং দোয়া কবুলের সর্বোত্তম জায়গা।

মসজিদুল হারাম

মসজিদুল হারাম হলো- কাবা শরিফের চারদিকের বৃত্তাকার মসজিদ। এটি পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মসজিদ। এখানে দোয়া কবুল হয়।

কাবা শরিফ

মসজিদুল হারামের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত কৃষ্ণ বর্ণের চতুষ্কোণ আয়তাকার গৃহটিই হলো কাবা শরিফ। কাবা হলো আল্লাহর ঘর। কাবা মুসলিম জাতির কিবলা বা ঐক্যের কেন্দ্রবিন্দু। ইবাদত ও দোয়া কবুলের জন্য এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ আর কোনো স্থান হতেই পারে না। কাবাঘরের ওপর যখন নজর পড়ে, তখন দোয়া কবুল হয়।

মিজাবে রহমত

কাবাঘরের ছাদের পানি পড়ার জন্য উত্তর পাশে হাতিমের ভেতরে মাঝখান বরাবর একটি সোনার পরনালা রয়েছে। একে মিজাবে রহমত বলে। এটি দোয়া কবুলের স্থান।

হাতিম

কাবাঘর–সংলগ্ন উত্তর দিকে অর্ধবৃত্তাকার দেয়ালঘেরা স্থানকে ‘হাতিম’ বা হুজ্জাতু ইসমাইল বলা হয়। এই স্থানটুকু আগে কাবাঘরের অন্তর্ভুক্ত ছিল। তাই এখানে নামাজ পড়া মানে কাবার ভেতরে নামাজ পড়া। এটা দোয়া কবুলের সর্বোত্তম স্থান।

হাজরে আসওয়াদ

কাবাঘরের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে দেয়ালে লাগানো জান্নাতি পাথর। এখান থেকে তাওয়াফ শুরু করতে হয় এবং এখানেই শেষ করতে হয়। হাজরে আসওয়াদ চুম্বনে গুনাহ মাফ হয়। ইশারায়ও চুম্বন করা যায়। এটি দোয়া কবুলের স্থান।

কাবা শরিফের রোকনসমূহ

কাবাঘরের প্রতিটি কোণকে রোকন বলা হয়। দক্ষিণ-পূর্ব কোণে হাজরে আসওয়াদ অবস্থিত। কাবাঘরের উত্তর-পূর্ব কোণকে বলা হয় রোকনে ইরাকি, উত্তর-পশ্চিম কোণকে বলা হয় রোকনে শামি এবং দক্ষিণ-পশ্চিম কোণকে বলা হয় রোকনে ইয়ামানি। এর প্রতিটি কোণ দোয়া কবুলের স্থান।

রোকনে ইয়ামানি ও হাজরে আসওয়াদের মধ্যস্থল

কাবার পশ্চিম-দক্ষিণ কোণ হলো রোকনে ইয়ামানি এবং পূর্ব-দক্ষিণ কোণ হলো রোকনে হাজরে আসওয়াদ। তাওয়াফের প্রতি চক্করে এই স্থানে পড়তে হয়: ‘রাব্বানা আতিনা ফিদ দুনিয়া হাছানা, ওয়া ফিল আখিরাতি হাছানা; ওয়া কি না আযাবান নার।’ হে আল্লাহ, আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দিন, আখেরাতে কল্যাণ দিন এবং দোজখের আগুন থেকে রক্ষা করুন। (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২০১)।

মাতাফ

মাতাফ, অর্থাৎ তাওয়াফ করার স্থান। কাবা শরিফের চতুর্দিকে তাওয়াফের জন্য খোলা স্থানটিই হলো মাতাফ। এখানে দোয়া কবুল হয়।

মাকামে ইবরাহিম

কাবা শরিফের পূর্ব দিকে মাতাফ বা তাওয়াফ ভূমিসংলগ্ন মাকামে ইবরাহিমে যে প্রস্তরখণ্ড সংরক্ষিত আছে, তার ওপর দাঁড়িয়ে হজরত ইবরাহিম (আ.) কাবাঘরের প্রাচীর গাঁথতেন। এই পবিত্র স্থানের পেছনে দাঁড়িয়ে প্রতি প্রকার তাওয়াফের পর দুই রাকাত ‘ওয়াজিবুত তাওয়াফ’ নামাজ আদায় করতে হয়। এখানে দোয়া কবুল হয়।

সাফা পাহাড়

কাবা শরিফের পূর্ব পাশের নিকটতম পাহাড়। সাফা পাহাড়ে উঠে কাবাঘরের দিকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ত করে সায়ি শুরু করতে হয়। এটাও দোয়া কবুলের জায়গা।

মারওয়া পাহাড়

মসজিদুল হারাম শরিফ থেকে ৪৫০ মিটার পশ্চিম-উত্তর দিকে মারওয়া পাহাড় অবস্থিত। এটাও দোয়া কবুলের জায়গা। সায়ির সময় প্রতিবার মারওয়া পর্বতে দোয়া করতে হয়।

জমজম

পবিত্র কাবাঘরের পূর্ব দিকে মসজিদুল হারাম শরিফ চত্বরেই জমজম কূপ অবস্থিত। এটি জগতের সবচেয়ে সুপেয় পানির উৎস। এটা দোয়া কবুলের অন্যতম একটি স্থান।

মাসআ

সাফা ও মারওয়া এই দুই পাহাড়ের মধ্যস্থলে বিবি হাজেরা আ: তার শিশুপুত্র ইসমাইল আ:-এর পানীয়ের সন্ধানে ছোটাছুটি করেছিলেন। সেই স্মৃতি রক্ষার্থে হজরত মোহাম্মদ সা:-এর অনুকরণে হাজিদের এই দুই পাহাড়ের মধ্যে সাতবার যাওয়া-আসা করতে হয়, একে সায়ি বলা হয়। এটিও দোয়া কবুলের জায়গা।

আরাফাত

আরাফাত ময়দানে হজরত আদম আ:-এর সাথে হজরত হাওয়া আ:-এর পুনর্মিলন হয় এবং তাঁরা স্বীয় ভুলের জন্য তথায় আল্লাহ তাআলার দরবারে মোনাজাত করেন এবং ওই মোনাজাত কবুল হয়। সে জন্য হাজিরা এই স্থানে সমবেত হয়ে এই প্রার্থনা করেন: ‘হে আমাদের রব! আমরা আমাদের সত্তার প্রতি জুলুম করেছি, আপনি যদি আমাদের ক্ষমা না করেন ও দয়া না করেন; অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত হব।’ (সুরা-৭ আরাফ, আয়াত: ২৩)।

জাবালে রহমত

দয়ার পাহাড়, এই পাহাড় আরাফাত ময়দানে অবস্থিত। এর উচ্চতা ৩০০ ফুট। এর উপরিভাগে একটি শুভ্র বর্ণ স্তম্ভ আছে, যেখান থেকে হজরত মুহাম্মদ সা: বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। এই পাহাড় দৃষ্টিগোচর হওয়ামাত্র লাব্বাইক ও দরুদ শরিফ পড়তে হয়। এখানে বাবা আদম আ: ও মা হাওয়া আ:-এর দোয়া কবুল হয়।

মুজদালিফা

মুজদালিফার ময়দানে বা প্রান্তরে বাবা আদম আ: ও মা হাওয়া আ:-এর প্রথম একত্রে রাত্রিবাস হয়েছিল। আরাফাতের দিবস শেষে সূর্যাস্তের পর এখানে এসে হাজিদের রাতযাপন করতে হয়। এখান থেকে শয়তানকে মারার জন্য ৭০টি কঙ্কর নিতে হয়। এখানে দোয়া কবুল হয়।

মিনা

আল্লাহ তাআলার আদেশে হজরত ইবরাহিম আ: স্বীয় তরুণ পুত্র হজরত ইসমাইলকে আ: যে স্থানে কোরবানির জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন, সেই স্থানের নাম মিনা। মক্কা শরিফ থেকে মিনা পাঁচ কিলোমিটার দূরত্বে অবিস্থত। মিনা প্রান্তরে হজের আগের দিন এবং হজের পর তিন দিন, অর্থাৎ চার দিন তাঁবুতে অবস্থান করতে হয়। এখানে দোয়া কবুল হয়।

মসজিদে নামিরা

আরাফাতের দিনে এখান থেকে হজের ভাষণ দেওয়া হয়। এই দিন এখানে জোহর ও আসরের নামাজ একত্রে জোহরের ওয়াক্তে পড়তে হয়। এখানে দোয়া কবুল হয়।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *