Main Menu

নারীদের রোজা সংক্রান্ত জরুরি কিছু মাসয়ালা

ইসলাম ডেস্ক:
রমজানের রোজা প্রাপ্ত বয়স্ক, সুস্থ ও মুসলিম নারী-পুরুষ সবার জন্য ফরজ। রমজানের রোজার জন্য রয়েছে আলাদা বিধানাবলী। বিশেষ করে নারীদের জন্য। আজকের আয়োজনে নারীদের রোজা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কিছু বিধান নিয়ে আলোচনা করা হলো-

মাসয়ালা- ০১: রমজান মাসে নারীদের পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে রোজা না রাখলে অথবা রোজা রাখার পর পিরিয়ড শুরু হলে তার জন্য পানাহার করা বৈধ। তবে অন্য লোকদের সামনে পানাহার করা উচিত নয়। দিনের বেলায় যদি ঋতু বন্ধ হয়, তাহলে দিনের বাকি অংশে রোজাদারের মতো পানাহার ও যৌনাচার বর্জন করা ওয়াজিবব। -আহসানুল ফাতাওয়া: ৪/৪২০

এ প্রসঙ্গে হাদিসে বর্ণিত আছে, উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তাকে জিজ্ঞেস করা হলো হায়েজ (মাসিক) থেকে পবিত্রতার পর মহিলারা কি নামাজ ও রোজার কাজা আদায় করবে? তিনি বললেন, এ অবস্থায় আমাদের রোজার কাজা আদায় করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, নামাজের নয়। -সহিহ বোখারি ও মুসলিম

রোজা কাজা করা আর নামাজ কাজা না করা সম্পর্কে উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা যা বলেছেন, উলামায়ে কেরাম তার সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন অর্থাৎ ইজমা বা ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

মাসয়ালা- ০২: হায়েজ (মাসিক, পিরিয়ড), নেফাসের (প্রসব পরবর্তী স্রাব) সময়গুলোতে রোজা রাখা নিষেধ, তবে পরবর্তীতে এ দিনগুলোর রোজার কাজা করতে হবে।

মাসয়ালা- ০৩: পবিত্র অবস্থায় রোজা রাখার পর যদি হায়েজ শুরু হয় বা সন্তান প্রসব হয়, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে এবং পরে তা কাজা করতে হবে। চাই সেটা ফরজ বা নফল রোজা হোক।

মাসয়ালা- ০৪: রমজান মাসে সুবহে সাদেকের পর যদি কোনো মহিলার হায়েজ, নেফাস বন্ধ হয় আর সে ওই সময়ের মধ্যে কোনো কিছু পানাহার না করে এবং সে যদি রোজার নিয়ত করে তাহলে ওই দিনের রোজা শুদ্ধ হবে না ববং পরবর্তীতে ওই রোজার কাজা করতে হবে, কারণ সে দিনের শুরুলগ্নে অপবিত্র ছিল।

মাসয়ালা- ০৫: যদি কেউ পূর্ণ ১০ দিন ১০ রাত পর, রাতের শেষভাগে গিয়ে পবিত্র হয় এবং তখন রাতের এতটুকু সময়ও হাতে না থাকে যার মধ্যে একবার আল্লাহু আকবার বলতে পারে। তবুও পরের দিনের রোজা ওয়াজিব। আর যদি ১০ দিনের কমে হায়েজ বন্ধ হয় এবং এতটুকু রাত অবশিষ্ট থাকে, যার মধ্যে তাড়াহুড়া করে গোসল করে নিতে পারে তবে ১ বারও আল্লাহু আকবার বলা যায় না। তবুও পরের দিনের রোজা ওয়াজিব হবে। এমতাবস্থায় গোসল না করে থাকলে গোসল ছাড়াই রোজার নিয়ত করে নেবে, আর যদি সময় তার চেয়েও কম থাকে তাহলে রোজা হবে না। তাই সে রোজা রাখবে না। তবে সারাদিন তাকে রোজাদারের মতোই থাকতে হবে এবং পরে কাজা করতে হবে।

মাসয়ালা- ০৬: হায়েজ, নেফাস অবস্থায় কোরআনে কারিম তেলাওয়াত করা মুখস্থ হোক বা দেখে হোক জায়েজ নয়।

মাসয়ালা- ০৭: কোনো মেয়ের হেফজ (কোরআন মুখস্থ) করা অবস্থায় হায়েজ এসে গেলে এবং মুখস্থ করার জন্য কোরআন তেলাওয়াতের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে বা কোনো হাফেজ মেয়ের হায়েজ অবস্থায় কোরআন হেফজের জন্য তেলাওয়াত অব্যাহত রাখতে চাইলে মনে মনে তেলাওয়াত করবে, মুখে উচ্চারণ করবে না।

মাসয়ালা- ০৮: হায়েজ, নেফাসওয়ালি নারী বাচ্চাদের কোরআন শরীফ বানান করে শিক্ষা দিতে পারবে। তবে রিডিং পড়ানোর সময় ১ শ্বাসে পূর্ণ ১ আয়াত পড়াতে পারবে না বরং শ্বাস ভেঙে ভেঙে ১-২ শব্দ করে পড়াতে হবে।

মাসয়ালা- ০৯: কোনো নারী হায়েজ, নেফাস অবস্থায় আয়াতে সিজদার তেলাওয়াত শুনলে তার ওপর সিজদা করা ওয়াজিব নয়।

মাসয়ালা- ১০: হায়েজ, নেফাস অবস্থায় কোরআন শরিফ স্পর্শ করা যেমন জায়েজ নয়, অনুরূপভাবে কোরআনের আয়াত কোথাও লেখা থাকলে তাও স্পর্শ করা জায়েজ নয়। তবে যদি এমন কোনো কিতাব হয় যার মধ্যে কোরআনের আয়াত অপেক্ষা অন্য কোনো লেখা বেশি থাকে তাতে হাত লাগানো যাবে, তবে আয়াতলিখিত অংশের ওপর হাত লাগানো যাবে না।

মাসয়ালা: ১১: কোনো শো-পিস, জিনিসপত্র, পিরিচ, কাপড় কিংবা কাগজের ওপর যদি শুধু কোরআনের আয়াত লেখা থাকে, তাতে হাত লাগানো যাবে না। তবে পৃথক কোনো কাপড় দিয়ে তা ধরা যাবে।

মাসয়ালা- ১২: কোরআন শরিফের গিলাফ যদি কোরআন শরিফ থেকে আলাদা হয়, তবে তা দ্বারা কোরআন শরিফ ধরা জায়েজ আছে। অনুরূপভাবে শরীরে থেকে বিচ্ছিন্ন কাপড় দ্বারাও কোরআন শরিফ ধরা জায়েজ আছে।

মাসয়ালা- ১৩: কোরআন শরিফের সঙ্গে সংযুক্ত গিলাফ এবং যে কাপড় শরীরের সঙ্গে যুক্ত আছে যেমন উড়না, জামার হাতা ইত্যাদি দ্বারা কোরআন শরিফ স্পর্শ করা বা ধরা জায়েজ নয়।

মাসয়ালা- ১৪: হায়েজ, নেফাস অবস্থায় ধর্মীয় কিতাব পড়া এবং সেগুলো স্পর্শ করা জায়েজ আছে। তবে যে সব স্থানে কোরআনের আয়াত লেখা আছে তা পাঠ করা যাবে না এবং সেখানে যেন হাতের ছোঁয়া না লাগে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।

মাসয়ালা- ১৫: হায়েজ, নেফাস অবস্থায় কোরআন তেলাওয়াত ছাড়া যাবতীয় জিকির-আজকার, দোয়া-দরুদ ও তাসবিহ-তাহলিল পাঠ করা জায়েজ আছে। এমনকি দোয়ার নিয়তে কোরআনের আয়াতও পাঠ করা জায়েজ আছে।

মাসয়ালা- ১৬: পানাহারের শুরুতে বিসমিল্লহির রাহমানির রাহিম ও শেষে আলহামদুলিল্লাহ বলতে কোনো অসুবিধা নেই।

মাসয়ালা- ১৭: গর্ভবর্তী বা স্তন্যদানকারিনী রোজাদার নারীর যদি রোজা রাখার কারণে বাচ্চার বা তার প্রাণহানি অথবা মায়ের মারাত্মক স্বাস্থ্যহানির প্রবল আশঙ্কা হয়, তবে রোজা ভেঙে ফেলা জায়েজ; অন্যথায় জায়েজ হবে নয়।

মাসয়ালা- ১৮: ইস্তিহাযা (অসুস্থতাজনিত কারণে দেখা দেওয়া স্রাব, যা নিয়মিত পিরিয়ডকালীন সময়ের বেশি সময়ে যা দেখা দেয়) অবস্থায় রোজা রাখা সহিহ এবং জরুরি। রোজা না রাখার অনুমতি নেই।

মাসয়ালা- ১৯: ইস্তিহাযা অবস্থায় নারীরা নিজ ঘরে ওয়াজিব, সুন্নত ও নফল ইতিকাফ করতে পারবে তাতে কোনো অসুবিধা নেই।

মাসয়ালা- ২০: ইস্তিহাযা অবস্থায় নারীরা কোরআন শরিফ তেলাওয়াত ও স্পর্শ করতে পারবে।

মাসয়ালা- ২১: প্রাপ্ত বয়স্ক নারীদের প্রতিমাসে মাসিক হওয়া আল্লাহ প্রদত্ত একটি প্রাকৃতিক নিয়ম। নিয়মিত মাসিক হওয়া স্বাস্থ্যের জন্যেও উপকারী বটে। এ জন্য ইসলামি শরিয়ত তাদের এ দিবসগুলোতে রোজা না রাখার বিধান রেখেছে। এতদসত্ত্বেও যদি কোনো নারী ঔষধ সেবনের মাধ্যমে মাসিক বন্ধ রাখে তাহলে শরিয়তের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার বাধা নেই। তবে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হওয়ায় এরূপ না করা উত্তম। তার পরও যদি কেউ এমন ব্যবস্থা নেয়, তাহলে তার রোজা হয়ে যাবে।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *