Main Menu

কোরআনের প্রতি ভালোবাসা নিয়ে ইজতেমায় যা বলা হয়েছে

মুহাম্মদুল্লাহ বিন ওয়াহিদ, অতিথি লেখক:
আগামীকাল শুক্রবার বাদ ফজরের বয়ানের মধ্য দিয়ে টঙ্গীতে শুরু হবে বিশ্ব ইজতেমার মূল কার্যক্রম। এর আগে বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে ইজতেমা ময়দান। বাদ ফজর বিশ্ব ইজতেমায় আগত তাবলিগের সাথীদের উদ্দেশ্যে আ’ম বয়ান শুরু হয়েছে।

এতে তিন দিনের এই ইজতিমায় আগত মুসল্লীরা কীভাবে সময় কাটাবেন এ বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এসময় কোরআনের প্রতি মানুষের ভালোবাসা বৃদ্ধির বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়, পবিত্র কোরআনে সবার জন্য হেদায়েত রয়েছে। ইজতিমায় তালিমের আমলের মাঝে যখন কোরআন শেখা-শেখানোর আমল হবে, সবাই খুব গুরুত্ব দিয়ে এতে অংশগ্রহণ করবেন। যিনি সহিহশুদ্ধভাবে কোরআন পড়তে পারেন, তিনি যারা পারেন না তাদের শেখাবেন। এর মাধ্যমে কোরআনের প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে৷

ইজতেমা মাঠের আম বয়ানে বছরে কমপক্ষে দুইবার কোরআন খতমের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়।

বয়ানে বলা হয়,

অনেকে মনে করেন, আমি তো বৃদ্ধ হয়ে গেছি। আমার কোরআন শেখার বয়স নেই। কিন্তু কোরআন শেখার নির্দিষ্ট কোনো বয়স নেই। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কোরআন শেখা যায়। আপনি কোরআন পড়তে না জানলে শেখা শুরু করে দিন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যিনি কোরআন শেখেন এবং শেখান তিনিই শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি।
এসময় বয়ানে আরও বলা হয়, ইজতিমায় মূলত সিফাত বা গুণ শেখানো হয়। ব্যক্তির আচার-আচরণ, চলাফেরা, ওঠাবসা কেমন হবে তা শেখানো হয়। বলা হয়, নামাজ, বান্দার প্রতি আল্লাহ তায়ালার হক, আল্লাহর হক শেখানো হয়। মোটকথা আল্লাহর সন্তুষ্টি আমরা কীভাবে অর্জন করতে পারি তা এখানে শেখানো হয়।

বয়ানে তাবলিগ ও ইজতেমার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়, এই ইজতিমায় আসার উদ্দেশ্য, দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ করা, অন্যকে দ্বীনের জন্য দাওয়াত দেওয়া ও এর মাধ্যমে আমাদের জীবনে পরিপূর্ণ ইসলামে চলে আসা।

বয়ানে বলা হয়, মানুষ পড়াশোনা করে ডিগ্রি অর্জনের জন্য, ব্যবসা, চাকরি করে টাকাপয়সা উপার্জন ও লাভের জন্য, ঠিক তেমনি তাবলিগের উদ্দেশ্য হল মানুষের হেদায়েত লাভ করা। মানুষ যেন পরিপূর্ণ দ্বীন মানতে পারে, আল্লাহর পথে জীবন চালাতে পারে–এটাই হলো তাবলিগের মেহনতের উদ্দেশ্য।
মানুষের বিপদাপদ সম্পর্কে ইজতেমা মাঠের আম বয়ানে বলা হয়েছে, দুনিয়া হলো হালতের ঘর। এখানে সুখ, দুঃখ, হাসি, কান্না, বিপদ সব আছে। মোটকথা সবকিছু মিলিয়েই হলো জীবন। যাদের ভেতরে দ্বীন আছে, আল্লাহ তাদের জীবনের সব বিপদ দূর করে দেন। দুঃখ দুর্দশা এলে এর থেকে উত্তরণের পথ বের করে তাদেরকে সুখময় জীবন দান করেন।

বয়ানে আরও বলা হয়, ঈমানের পরে সবচেয়ে বড় নেয়ামত হলো সুস্থতা। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তায়ালার কাছে সুস্থতার নেয়ামত চাও। কখনো অসুস্থতা ও দুঃখ-দুর্দ্দশা চেয়ো না। আল্লাহ তায়ালা দ্বীনদার মানুষকে এমন সুখময় জীবন দান করেন যে, আশপাশের সবাই ঈর্ষান্বিত হয়ে বলে–হায়, আমিও যদি এমন জীবন পেতাম!

 

যার ভেতরে দ্বীন এসেছে– আল্লাহ তার সবকিছুকে সহজ করে দেন। দুনিয়ার জীবনের পাশাপাশি তার পরকালের জীবনও সহজ এবং সুখের হয়। মৃত্যু সহজ হয়। তার কবরকে জান্নাতের বাগান বানিয়ে দেওয়া হয়। কেয়ামতের ভয়াবহ সময়ে তার ওপরে আরশের ছায়া দেওয়া হবে। জাহান্নামের আগুনের ওপরে প্রতিষ্ঠিত পুলসিরাত সে বিদ্যুৎ বেগে পার হয়ে যাবে। কেয়ামতের কঠিন দিনে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বীনদার ব্যক্তিকে নিজ হাতে পানি পান করাবেন।

শুধু তা-ই নয়, সে জাহান্নাম থেকে নিরাপদ হয়ে চির সুখের জায়গা জান্নাতে চলে যাবে। সবচেয়ে সফল ব্যক্তি তিনিই, যিনি জাহান্নাম থেকে নিরাপদ হয়ে জান্নাতে যেতে পারবেন। আর দুনিয়া তো কেবল ধোঁকা ও প্রতারণার জায়গা।

আরও বলা হয়, ইজতিমায়ি (সম্মিলিম) আমল যেমন বয়ান তালিম, এগুলো শেষ হওয়ার সাথে সাথে আমরা ইনফিরাদি বা ব্যক্তিগত আমল শুরু করে দিব। তিন তাসবীহ আদায় করব। বেশি বেশি দুরুদ শরীফ পড়ব। দুরুদ পড়ার সময় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এহসান বা অনুগ্রহের কথা মনে করব। আর আল্লাহর কাছে তাঁর শান অনুযায়ী নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য প্রতিদান চাইবো। যারা এভাবে বেশি বেশি দুরুদ পড়বে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জন্যই শাফায়াত করবেন।

ইনফিরাদি আমলের সময়, মাসনূন দুআগুলো শিখবো। খাবার খাওয়ার আগে-পরে দুআ আছে, ঘুমের দুআ আছে, ইস্তিঞ্জার দুআ আছে, উজুর দুআ আছে, মোটকথা প্রত্যহ কাজের আগে-পরে যেসব মাসনূন দুআ আছে ইনফিরাদি আমলের সময় সেগুলো শেখার চেষ্টা করব। কারণ, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেসব দুআ পড়ে দুআ করতেন, সেগুলো পড়ে দুআ করলে আল্লাহ তায়ালা সেই দুআ কবুল করেন।

বয়ানে আরও বলা হয়, আরেকটা বিষয় খুব ভালোভাবে খেয়াল করব। এখানে অনেক মানুষের সমাগম। কেউ কাউকে কষ্ট দিবো না। সবাই সবার প্রতি একরাম করব। সবাই সবার খেদমত করব। একে অন্যের কাজে সহযোগিতা করব। এতে পরস্পরে মোহাব্বত বৃদ্ধি পাবে। একে অন্যের খেদমত করলে নিজের ভেতরে নম্রতা আসবে। আর আল্লাহ তায়ালা নম্রতাকে পছন্দ করেন।

 

আমরা যখন ইস্তিঞ্জার জন্য বাথরুমে যাব, তখন যার প্রয়োজন বেশি তাকে আগে দিব। বয়স্ক মানুষদের আগে সুযোগ করে দিব। ঘুমানোর সময় জায়গার সংকুলান না হলে নিজে কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে উঠে যাবো এবং অন্য ভাইকে ঘুমানোর সুযোগ করে দিয়ে আমি দুআদুরুদে পড়তে থাকব। এভাবে পর্যায়ক্রমে ঘুমাবো। কারো যেন কষ্ট না হয় সে দিকে খুব খেয়াল করব।

এখানে আমরা এসেছি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। তাই এখানে যেই কষ্ট হবে তা কষ্ট নয়; বরং তা কোরবানি হিসাবে গণ্য হবে। আর যে আল্লাহর কোরবানি দেয় সে আল্লাহর নৈকট্য প্রাপ্ত হয়।

বয়ানে হাদিসে কুদসিকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমার ভালোবাসা ওই ব্যক্তির জন্য ওয়াজিব হয়ে যায়, যে আমার জন্য একত্রিত হয়। আমরা এই তিন দিন ইজতিমায়ি এবং ইনফিরাদি আমলগুলো এমনভাবে করব, আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদের আমাদের আমলগুলো পছন্দ করেন। আল্লাহ যখন আমাদের আমল পছন্দ করবেন, তখন মৃত্যু পর্যন্ত তিনি আমাদেরকে তাবলিগের কাজে লেগে থাকার তাওফিক দিবেন। শুধু তা-ই নয় এই কাজ করতে গিয়ে যত প্রয়োজন সামনে আসবে, সব প্রয়োজন আল্লাহ নিজের খাজানা থেকে পূর্ণ করে দিবেন।

 

বয়ানে আরও বলা হয়, এখানে যারা এলাকার জিম্মাদার আছেন, তারা লোকজনকে দাওয়াত দিয়ে ইজতিমায় এনেছেন। এখন ইনফিরাদি আমলের সময় তাদেরকে তাবলীগে বের করার জন্য তাশকীল করবেন। তাদেরকে তৈরি করবেন। মনে রাখবেন, আপনার দাওয়াতের কারণে একজন মানুষও যদি তৈরি হয়, সে সারাজীবন যত আমল করবে তার সমপরিমাণ আমিও সওয়াব পাবো। এই জন্য উপস্থিত সবাই নিয়ত করি–হয়তো আমি নিজে তাবলীগে বের হব, আর নিজে না পারলে অন্যকে তাশকীল করে বের করব।

সাহাবায়ে কেরাম আমাদের মতই হায়াত পেয়েছেন। কিন্তু তাদের মাধ্যমে তাদের মাধ্যমে কোটি কোটি মানুষ হেদায়েত পেয়েছেন। এখন তারা দুনিয়ায় নেই। তবুও এসব মানুষের আমলের সওয়াব তারা এখনও পাচ্ছেন।

উর্দু থেকে বয়ানটির অনুবাদ করেছেন আলেম সাংবাদিক মুহাম্মদুল্লাহ বিন ওয়াহিদ






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *