Main Menu

ফের আলোচনায় টিলাগড় কেন্দ্রিক রাজনীতি

নিউজ ডেস্ক:
সিলেট নগরের উপকণ্ঠে অবস্থান টিলাগড়ের। এই এলাকাতেই সিলেটের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমসি কলেজ, সিলেট সরকারি কলেজ, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ঘিরে অন্তত ৪০ থেকে ৪৫ হাজার শিক্ষার্থীর বসবাস ওই এলাকাজুড়ে। ছাত্রসংগঠনগুলোর আধিপত্য বিস্তারের ঘটনা ওই এলাকায় নতুন কিছু নয়।

ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ১০ বছরে ওই এলাকায় খুন হয়েছেন পাঁচ ছাত্রলীগ কর্মী। সংঘাতের ও অস্ত্রবাজির ঘটনা ঘটেছে অসংখ্যবার। এবার নতুন বছরে আবার সংঘাতে জড়িয়েছেন টিলাগড়কেন্দ্রিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এতে আলোচনায় এসেছে টিলাগড়কেন্দ্রিক ছাত্রলীগের রাজনীতি।

ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, টিলাগড়কেন্দ্রিক ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধের জেরে ২০১০ সাল থেকে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১০ বছরে খুন হন ছাত্রলীগের পাঁচ কর্মী।

২০১০ সালের ১২ জুলাই উদয়েন্দু সিংহ পলাশ, ২০১৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর জাকারিয়া মোহাম্মদ মাসুম, একই বছরের ১৬ অক্টোবর ওমর মিয়াদ, ২০১৮ সালের ৯ জানুয়ারি তানিম খান এবং সর্বশেষ গত ৬ ফেব্রুয়ারি রাতে খুন হন অভিষেক দে। একের পর এক সংঘাত ও খুনের ঘটনায় ২০১৭ সালে ওমর মিয়াদ হত্যার পর ১৮ অক্টোবর সিলেট জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্তি ঘোষণা করা হয়েছিল।

এর আগে খুন ছাড়া অস্ত্রবাজি ও দুর্বৃত্তপনার একাধিক ঘটনা ঘটেছে টিলাগড় এলাকায়। ২০১৩ সালের ১৯ মে এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মহড়া হয়। ২০১৬ সালের ৭ মার্চ আরেক দফা অস্ত্রবাজি হয়। এমসি কলেজ ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২০১২ সালের ৮ জুলাই ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে আগুন দিয়ে পোড়ানো হয় ঐতিহ্যবাহী ছাত্রাবাস কক্ষ।

এ ছাড়া ২০১৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে এক তরুণীকে (২০) দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মামলার পর ২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের আট নেতা-কর্মীকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা। গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর উচ্চ আদালত মামলাটির বিচারপ্রক্রিয়া দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বদলি করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।

এদিকে গত বছরের ১৫ মার্চ সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীনবরণ অনুষ্ঠান শেষে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তবে সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্রলীগের কমিটি ছিল না। কিন্তু এর ১০ মাসের মাথায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে আবার সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। গত শুক্রবার বেলা পৌনে তিনটার দিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আশিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মো. এমাদুল হোসেনের নেতৃত্বাধীন পক্ষের সঙ্গে সহসভাপতি শরিফ হোসেন, সাব্বির মোল্লা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রান্ত ইসলাম সাংগঠনিক সম্পাদক আরমান হোসেন, মোশাররফ হোসেন ও আকাশ ভূঁইয়ার নেতৃত্বাধীন পক্ষের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দফায় দফায় সংঘর্ষে আহত হয়েছেন উভয় পক্ষের ১০ নেতা-কর্মী। সংঘর্ষ নিয়ে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটিতে থাকা দুটি পক্ষই পাল্টাপাল্টি দোষারোপ করছেন।

কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একাধিক নেতা-কর্মীর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের রাজনীতির নেতৃত্বে যারা রয়েছেন, তারা টিলাগড়কেন্দ্রিক আওয়ামী লীগ নেতার বলয়ের রাজনীতিতে জড়িত। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে বলয়ের রাজনীতি অনুসরণ করা হলে আবার টিলাগড় এলাকায় সংঘাতের আশঙ্কা রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আশিকুর রহমান সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজাদুর রহমানের বলয়ের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, আবার সাধারণ সম্পাদক মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদের বলয়ের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। কমিটির সহসভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক পদে বর্তমানে যাঁরা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে বিরোধিতায় জড়িয়েছেন, তারা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রণজিত সরকার এবং জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হিরণ মাহমুদ বলয়ের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ দুই নেতাই টিলাগড়কেন্দ্রিক রাজনীতির আলাদা বলয় নিয়ন্ত্রণ করেন।

সিলেট ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, একসময় টিলাগড়কেন্দ্রিক ছাত্ররাজনীতির দাপটে মানুষ ভীত থাকত। প্রায় দুই-তিন বছর ধরে সেটা কিছুটা কমেছে। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা দুই পক্ষের পুরোনো সংঘাতকে উসকে দেয় কি না, সে শঙ্কা আছে।

যদিও সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক সংঘাত টিলাগড়ের ছাত্রলীগের রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে না। টিলাগড়ে আগের রাজনৈতিক পরিবেশ এখন আর নেই। জেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের পর সবাই মিলেমিশে ছাত্রলীগের রাজনীতি করছেন।’

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রান্ত ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিজেদের কমিটি পূর্ণাঙ্গ না করে এবং হলের কমিটি গঠন না করে অনুষদের কমিটি গঠনের জন্য কর্মিসভার আয়োজন করেছি। এতে সাধারণ শিক্ষার্থী এবং তৃণমূলের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিরোধ করেছিলেন। পূর্ণাঙ্গ কমিটি না করা এবং হল কমিটি না করায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে।’

তবে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আশিকুর রহমান শুক্রবারের ঘটনার পেছনে প্রশাসনের দিকে অভিযোগ তুলে বলেন, ‘আমরা সংঘাত বিষয়টি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করি। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের উপস্থিতিতে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। তার সামনেই হলের কক্ষগুলো ভাঙা হয়েছে। তিনি সেগুলো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছেন।’

সভাপতির অভিযোগের ব্যাপারে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. মনিরুল ইসলামকে কল করা হলে তিনি তা ধরেননি।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *