বিশ্বনবী (সা.)-এর বিজয়ী ভাষণ
অতিথি লেখক, মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা:
বিজয় মহান আল্লাহর দান। পবিত্র কোরআনে বিজয় শিরোনামে নাসর ও ফাতহ নামে দুটি সুরাও রয়েছে। আল্লাহ না চাইলে কোনো ক্ষেত্রেই বিজয় অর্জন সম্ভব নয়। বিজয় উদযাপন করা উচিত আল্লাহর নির্দেশিত পদ্ধতিতে।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বিজয় উদযাপনে দুটি করণীয় বাতলে দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন আল্লাহর সাহায্যে বিজয় আসবে, তখন মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবে। তখন তোমার প্রতিপালকের পবিত্রতা বর্ণনা করো। আর তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল। ’ (নাসর, আয়াত : ১-৩)
এ সুরায় বিজয় উদযাপনের দুই দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। ১. আল্লাহর প্রশংসাগাথায় তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করা। ২. যুদ্ধকালীন অজান্তে যেসব ভুলত্রুটি হয়েছে, তার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।
আমাদের নবীজি (সা.)-ও তাঁর উম্মতদের আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা ও শুকরিয়ার মাধ্যমে বিজয় উদযাপন করে দেখিয়েছিলেন। তিনি মক্কা বিজয়ের দিন কালো পাগড়ি মাথায় নিজ মাতৃভূমিতে প্রবেশ করেছিলেন। প্রবেশকালে তাঁর উষ্ট্রীতে আরোহিত অবস্থায় তিনি সুরা ফাতহ পাঠ করছিলেন। (নাসায়ি, হাদিস : ৫৩৪৪, আবু দাউদ, হাদিস : ১৪৬৭)
মক্কা বিজয়ের পর তিন মহান আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপনে গোসল করে শুকরিয়ার নামাজ আদায় করেছিলেন। (নাসায়ি, হাদিস : ২২৫)। এ ছাড়া পবিত্র কাবাঘরের চত্তরে গিয়ে তিনি হাজরে আসওয়াদে চুম্বন করেন। কাবাঘর তাওয়াফ করেন। কাবাপ্রাঙ্গণ থেকে শিরকের উপকরণগুলো অপসারণ করেন এবং কাবাঘরের ভেতরেও নামাজ আদায় করেন। (আর রাহিকুল মাখতুম)
মক্কা বিজয়ের পর মহানবী (সা.) একটি বিজয়ী ভাষণ দিয়েছিলেন, বিজয়ের দ্বিতীয় দিবসে ভাষণ দেওয়ার জন্য আল্লাহর নবী (সা.) জনতার সম্মুখে দণ্ডায়মান হলেন। ভাষণের প্রারম্ভে আল্লাহর প্রশংসা ও স্তব-স্তুতি বর্ণনার পর রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ওহে লোক সকল, আল্লাহ যেদিন আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন সে দিন মক্কাকে হারাম (নিষিদ্ধ শহর) করে দিয়েছেন। এ কারণে কিয়ামত পর্যন্ত তা হারাম বা পবিত্র থাকবে। যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং পরকালে বিশ্বাসী হবে তার এটা বৈধ হবে না যে সে এখানে রক্তপাত ঘটাবে অথবা এখানকার কোনো বৃক্ষ কর্তন করবে। কেউ যদি এ কারণে জায়েজ মনে করে যে রাসুলুল্লাহ (সা.) এখানে যুদ্ধ করেছেন, তবে তাকে বলে দাও যে আল্লাহ স্বয়ং তাঁর রাসুল (সা.)-কে অনুমতি প্রদান করেছিলেন। কিন্তু তোমাদের অনুমতি দেননি এবং আমার জন্যও শুধু দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তা বৈধ করেছিলেন। অতঃপর আজ তার পবিত্রতা অনুরূপ ফিরে এসেছে গতকাল তার পবিত্রতা অতঃপর যারা উপস্থিত আছে তারা অনুপস্থিতদের কাছে এ বাণী পৌঁছে দেবে।
অন্য এক বর্ণনায় এতটুকু অতিরিক্ত রয়েছে যে এখানে কোনো কাঁটা কাটা বৈধ নয়, শিকার তাড়ান ঠিক নয় এবং পড়ে থাকা কোনো জিনিস উঠানোও ঠিক নয়। তবে সে ব্যক্তি নিতে পারবে যে সে সম্পর্কে প্রচার করবে। তা ছাড়া কোনো প্রকার ঘাসও উপড়ানো যাবে না। আব্বাস (রা.) বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল (সা.), কিন্তু ইযখির ঘাসের অনুমতি দিন (আরবের প্রসিদ্ধ ঘাস যা উর্মির ন্যায় হয় এবং চা ও ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কারণ এটা কর্মকার এবং বাড়ির নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস) নবী (সা.) বলেন, ‘বেশ, ইযখিরের অনুমতি রইল। ’ (বুখারি, হাদিস : ৩১৮৯, আর রাহিখুল মাখতুম)
এ ছাড়া মক্কা বিজয়ের পর নবীজি (সা.) সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিলেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩০২১)
Related News
মজার ছলে কাউকে গালি দেওয়া কি ঠিক?
মজার ছলে কাউকে গালি দেওয়া কি ঠিক? আড্ডার সময়ে বন্ধুরা একে অপরের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনেরRead More
যৌবনকালের ইবাদতের গুরুত্ব নিয়ে যা বললেন আজহারী
যৌবনকালের ইবাদতের গুরুত্ব নিয়ে যা বললেন আজহারী যৌবনকালের ইবাদত একটি লাভজনক ইনভেস্টমেন্ট বলে মন্তব্য করেছেনRead More