Main Menu

জাকাতের টাকায় হাসপাতাল নির্মাণ করা যাবে?

জাকাতের টাকায় হাসপাতাল নির্মাণ করা যাবে?
ধর্ম ডেস্ক:
জাকাত ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের একটি। সম্পদের পরিশুদ্ধি ও অসহায়দের মাঝে স্বচ্ছলতা ফেরানো, দারিদ্র বিমোচন জাকাতের অন্যতম উদ্দেশ্য। গরিব-দুঃখীর স্বার্থের প্রতি খেয়াল রেখেই জাকাতের খাতগুলো নির্ধারণ করা হয়েছে।

খোদাভীরু মুসলমানরা সবসময় জাকাতের মাধ্যমে গরিবের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। অনেকে জানতে চান- জাকাতের টাকায় অসহায় গরীবদের জন্য হাসপাতাল নির্মাণ করতে চাইলে কি বৈধ হবে?
এই প্রশ্নের প্রেক্ষিতে ইসলামী আইন ও ফেকাহশাস্ত্রবিদেরা বলেন, সমাজের অসহায়-গরীব, দুঃখীদের মধ্যে যদি কেউ এমন অসুস্থ হয় যে সে অর্থোপার্জনে অক্ষম, এবং তার কাছে এ পরিমাণ সম্পদও নেই যে, তিনি নিজের চিকিসৎসার খরচ বহন করবেন- এমন ব্যক্তি অবশ্যই জাকাতের হকদার। এমন ব্যক্তির চিকিৎসার জন্য জাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে।

তবে এমন ব্যক্তিকে জাকাতের টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে, জাকাতের টাকা গরীবকে দিয়ে তাকে মালিক বানিয়ে দিয়ে দিতে হবে। অথবা জাকাতের টাকা দিয়ে ওষুধ কিনে গরীবদের দিতে হবে।

কিন্তু জাকাতের টাকায় গরিবদের জন্য হাসপাতালের জমি কেনা বা হাসপাতাল ভবন নির্মাণ করা জায়েজ হবে না। কারণ, এতে গরীব ব্যক্তি এই টাকার মালিক হয় না। আর জাকাত প্রদান শুদ্ধ হওয়ার জন্য টাকা অবশ্যই গরীবকে মালিক বানিয়ে দিতে হয়।
-(মাবসূত, সারাখসী ২/১৫৬; বাদায়েউস সানায়ে ২/১৪৬; ফাতহুল কাদীর ২/১৪৪; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/৫৮; আলবাহরুর রায়েক ২/২২১; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৫৭, ২৮৫, ২৯৭, ৩৪৪, দেওবন্দ ফতোয়া, ১৭৩৬৮০)

ইসলামে জাকাতের বিধান

দ্বিতীয় হিজরিতে মুসলমানদের ওপর জাকাত ফরজ হয়। জাকাতের সঠিকভাবে আদায়ে বিশেষ পুরস্কার ঘোষণা করেছেন আল্লাহ তায়ালা। এ সর্ম্পকে বর্ণিত হয়েছে, ‘এবং তোমরা আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য জাকাত আদায় করো। অত:পর তিনি তা দ্বীগুণ করে দেবেন। (সুরা: আর-রুম,আয়াত : ৩৯)

অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, ‘মুত্তাকিরা জান্নাতে ফোয়ারার নিকটে থাকবে। তারা গ্রহণ করবে, যা তাদের পালনকর্তা তাদেরকে দেবেন। নিশ্চয় ইতিপূর্বে তারা ছিল সত্কর্মপরায়ণ, তারা রাত্রির সামান্য অংশেই নিদ্রা যেত, রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করত এবং তাদের ধনসম্পদে ছিল প্রার্থী ও বঞ্চিতের হক বা ন্যায্য অধিকার।’ (সুরা-৫১ জারিয়াত, আয়াত: ১৫-১৯)

জাকাত আদায়ে গরিমসি করলে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। বর্ণিত হয়েছে, ‘আর যারা সোনা ও রূপা পুঞ্জীভূত করে রাখে, আর তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে না, তুমি তাদের বেদনাদায়ক আজাবের সুসংবাদ দাও। যেদিন জাহান্নামের আগুনে তা গরম করা হবে, অতঃপর তা দ্বারা তাদের কপালে, পার্শ্বে এবং পিঠে সেঁক দেওয়া হবে। (আর বলা হবে) ‘এটা তা-ই যা তোমরা নিজদের জন্য জমা করে রেখেছিলে। সুতরাং তোমরা যা জমা করেছিলে তার স্বাদ উপভোগ কর।’ -(সূরা তাওবাহ, আয়াত: ৩৫, ৩৬)

 

পবিত্র কোরআনে জাকাতের সম্পদ ব্যয়ের মোট আটটি খাত নির্ধারণ করা হয়েছে। খাতগুলো হলো-

এক. গরিব-ফকির— যাদের নেসাব পরিমাণ সম্পদ নেই। দুই. মিসকিন— যাদের কোনো সম্পদ নেই। তিন. ইসলামি রাষ্ট্রের সরকারকর্তৃক জাকাত, সদকা, ওশর ইত্যাদি উসুল করার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি। চার. ইসলামের দিকে ধাবিত করার জন্য জাকাত দেওয়া। তবে এ খাতটি বর্তমানে আর প্রযোজ্য নয়। পাঁচ. নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদের বিনিময়ে স্বাধীন হওয়ার চুক্তিতে আবদ্ধ দাস-দাসী। ছয়. পর্যাপ্ত পরিমাণ মাল না থাকার দরুণ ঋণ পরিশোধে অক্ষম ঋণী ব্যক্তি। সাত. যোদ্ধা, যারা যুদ্ধের অস্ত্র যোগাতে অক্ষম অথবা টাকার কারণে হজের কাজ পূর্ণ করতে অক্ষম বা ইলম হাসিল ও দ্বীনি দাওয়াতের কাজে নিয়োজিত গরিব মানুষ। আট. সফর অবস্থায় অভাবগ্রস্ত মানুষ।

ফুকাহায়ে কেরাম বলেন, কোরআনে জাকাতের খাতগুলো স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এর বাইরে জনকল্যাণমূলক কোনো কাজ, তা যতই গুরুত্বপূর্ণ বা ফজিলতপূর্ণ হোক, সেটা জাকাতের খাত নয়।






Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *