Main Menu

ফ্রান্সে ‘উবার ইটস’ একাউন্ট বন্ধ, বিপাকে হাজারো অনথিভুক্ত অভিবাসী

নিউজ ডেস্ক:
আন্তর্জাতিক রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান উবারের ফুড ডেলিভারি সেবা ‘উবার ইটস’ ফ্রান্সে ভুয়া নথি ব্যবহার করছেন এমন অভিযোগে প্রায় আড়াই হাজার একাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে। ভুক্তভোগী অনিয়মিত অভিবাসীরা ইনফোমাইগ্রেন্টসকে জানিয়েছেন, তাদের কাছে অন্য কোন কাজের সুযোগ না থাকায় তারা অত্যধিক পরিশ্রমের এ কাজ করতেন।

গত সপ্তাহে, ফুড ডেলিভারি সেবা ‘উবার ইটস’ এর ফ্রান্স শাখা ঘোষণা করেছে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে জাল নথি ব্যবহার করে একাউন্ট তৈরী করা চিহ্নিত কর্মীদের প্রায় আড়াই হাজার অ্যাকাউন্ট প্লাটফর্মটি থেকে বাতিল করা হয়েছে ।

এ ঘটনায় ফ্রান্সজুড়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। উবার ইটসের বিরুদ্ধে বাড়তে থাকে অনিয়মিত অভিবাসীদের ক্ষোভ। চলতি সপ্তাহের সোমবার ভুক্তভোগী প্রায় ৫০০ সাবেক চালক প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ক্ষোভ দেখাতে প্যারিসের ১১ তম অ্যারোন্ডিসমেন্টের প্লাস-দ্যো-লা-রিপাবলিকে জড়ো হয়েছিল

অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়ায় বর্তমানে সমস্যা পড়েছেন হাজারো অভিবাসী। যারা শুধুমাত্র এই প্লাটফর্মে খাবার ডেলিবারি দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এমনই কিছু ভুক্তভোগীর সাথে বুধবার ১৪ সেপ্টেম্বর, প্যারিসের প্লাস-দ্যো-ক্লিসি এলাকার কাছে অবস্থিত একটি ক্যাফেতে কথা বলেছে ইনফোমাইগ্রেন্টস।

৯৩ শতাংশ গ্রাহক সন্তুষ্টির পরেও বাতিল অ্যাকাউন্ট

২৫ বছর বয়সি আবুবাকার সিজে’র ডাক নাম আদামা। উবার ইটসে কাজ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ৬ হাজার খাবার মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছেন সাবেক এই চালক বা ডেলিভারি ম্যান।

প্লাটফর্মটিতে ৯৩ শতাংশ গ্রাহক তার সেবায় সন্তুষ্ট হয়ে রিভিউ বা মতামত দিয়েছেন। কিন্তু এসব সফলতার পরেও, গত ১৯ আগস্ট থেকে আর কাজ করতে পারছেন না আদামা। তিনি ইনফোমাইগ্রেন্টসকে বলেন, “আমি আগস্ট মাসের মাঝখানে হঠাৎ একদিন উবার এপ থেকে একটি বার্তা পাই। সেখানে বলা হয় প্রতারণামূলক নথির কারণে আমার অ্যাকাউন্টটি নিষ্ক্রিয় বা বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।”

তিনি আরও জানান, “আমাকে বলা হয়েছে আমার প্রোফাইল ছবি আমার নিবন্ধিত আইডির সাথে মেলে না। অথচ এটি দিয়ে আমি দুই বছর ধরে কাজ করছি এবং তখন পর্যন্ত তারা কিছু বলেনি।”

আবুবাকারের মতো প্রায় ২,৫০০ অনিয়মিত অভিবাসীরা মূলত বেঁচে থাকার তাগিদে আরেকজনের রেসিডেন্স পারমিট দিয়ে উবার ইটসে কাজ করছিলেন। এখন, রাতারাতি অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় এবং প্ল্যাটফর্ম থেকে বাদ দেওয়ার ঘটনায় হতাশায় ভেঙে পড়েছেন এসব ব্যক্তিরা।

মূলত, বাতিল হওয়া অ্যাকাউন্টগুলোর নথি আসলে জাল না। অভিবাসীরা অনিয়মিত অবস্থায় থাকা আত্নীয় ও বন্ধুদেরকে তাদের অ্যাকাউন্ট ধার দিত।

উবার ইটস সংশ্লিষ্টদের মতে, এত বিশাল সংখ্যক মানুষ যে আরেকজনের পরিচয়পত্র দিয়ে কাজ করছিলে সেটি কোম্পানি বুঝতে পারেনি। আইনি বাধ্যবাধকতা কারণেই এসব ব্যক্তিদের কাজ করার সুযোগ বাতিল করা হয়েছে।

অনথিভুক্ত অভিবাসীদের নিয়ে আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র আমিদু কোনে ইনফোমাইগ্রেন্টসকে বলেন, “অবশ্যই উবার ইটস কর্তৃপক্ষ আরেকজনের নথি ব্যবহার করে কাজ করার সব তথ্য অনেক আগে থেকেই জানত। করোনা মহামারি চলাকালীন সময়ে ব্যবসার রমরমা অবস্থায় তারা অনিয়মিত অভিবাসীদের ব্যবহার করে বিপুল মুনাফা অর্জন করেছে। কিন্তু এখন সু্যোগ বুঝে আমাদের জীবনকে কঠিন করে তুলতে প্রয়োজনীয় সব কাজ তারা করছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি, এটি অমানবিক।”

“আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি”

বহু অভিবাসী ফ্রান্সে আসার আগে সাহারা মরুভূমি, লিবিয়া, ভূমধ্যসাগর থেকে বেঁচে ইটালির মধ্যে দিয়ে এখানে পৌঁছান।

বৈধতা প্রাপ্তির আগে অনেক অনিয়মিত অভিবাসী ফ্রান্সে নির্মাণ খাতে কাজ খোঁজার চেষ্টা করেন। কিন্তু অত্যধিক শারীরিক পরিশ্রম ও কঠিন হওয়ায় বহু ব্যক্তির কাছে উবার ইটসে খাবার ডেলিভারির কাজকে বিকল্প হিসেবে বেঁচে নিয়েছিলেন।

এমনই একজন, ৩২ বছর বয়সিব নামোলি মেইতে। বর্তমানে তিনি স্ত্রী এবং নয় মাস বয়সি শিশুকে নিয়ে ফরাসি সরকারের জরুরি আবাসন ব্যবস্থা ১১৫ নামক প্লাটফর্মের একটি হোটেলে বসবাস করছেন।

তিনি ইনফোমাইগ্রেন্টসকে হতাশা নিয়ে বলেন, আমি হয়ত খুব ‘খারাপ’ তাই বারবার জীবিকা অর্জনের পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তার পাশে বসে ছিলেন ৪২ বছর বয়সি আদামা উত্তারা। তিনিও চার বছরের বেশি সময় ধরে উবার ইটসে কাজ করার পরে ছয় মাস আগে তার অ্যাকাউন্ট বাতিল করা হয়।

তিনি ইনফোমাইগ্রেন্টসকে বলেন, “আমি কি করব বুঝতে পারছি না, আমি এখন সবার কাছে টাকা ধার নিচ্ছি। আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি।” সূত্র: ইনফোমাইগ্রান্টস।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *