Main Menu

গ্রিসে বাংলাদেশিদের পারিবারিক ভিসা: অপেক্ষা ফুরোয় না

নিউজ ডেস্ক:
গ্রিসে দীর্ঘদিন বসবাসের পরও অনেক বাংলাদেশি নিজের পরিবারকে আনতে পারেন না। অভিযোগ রয়েছে সব শর্ত পূরণ করে আবেদনের পরও বছরের পর বছর অপেক্ষায় থাকতে হয়। ইনফোমাইগ্রেন্টসের কাছে এ নিয়ে হতাশা ও ক্ষোভের কথা তুলে ধরেছেন তারা।

গ্রিসের অভিবাসন ও আশ্রয় বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সূত্র অনুযায়ী, একজন বৈধ অভিবাসী বেশ কিছু শর্ত পূরণ করে তার স্ত্রী এবং সন্তানদের পারিবারিক পুনর্মিলন ভিসায় দেশটিতে আনতে পারেন। মূল শর্তগুলো হচ্ছে:

একটি বৈধ রেসিডেন্স পারমিট থাকা।
গ্রিসের শ্রম আইন অনুযায়ী ন্যূনতম মাসিক বেতনে বৈধভাবে কাজ করা।
সংশ্লিষ্ট অভিবাসীর নিজের নামে একটি বাসা থাকা। এক্ষেত্রে পরিবারের সদস্য সংখ্যার উপর ভিত্তি করে বাসায় আয়তন নির্ভর করবে।
প্রতি বছর আয়কর পরিশোধের প্রমাণপত্র থাকা।

এই শর্তগুলোর সবকটিই পূরণ করেছেন আনাম মোহাম্মদ। পারিবারিক পুনর্মিলন ভিসার জন্য তিনি প্রক্রিয়া শুরু করেছেন চার বছর হলো। কিন্তু ২০০৬ সাল থেকে গ্রিসে বসবাসরত এই বাংলাদেশির অপেক্ষার পালা তাতে ফুরোচ্ছে না।

আনাম মোহাম্মদ ইনফোমাইগ্রেন্টসকে বলেন, ‘আমি দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে গ্রিসে আছি। আমার বৈধ রেসিডেন্স পারমিট আছে, পরিবার আনার সব শর্তগুলোও পূরণ করেছি। আমি ২০১৮ সালের জুন মাসে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। কিন্তু দীর্ঘ চার বছর ধরে অক্লান্ত চেষ্টার পরেও আমার স্ত্রীকে নিয়ে আসতে পারিনি।’

তার মতে, ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো গ্রিসেও শরণার্থী ও অভিবাসীদের শর্ত পূরণ করে পরিবার আনার আইনি সুযোগ রয়েছে। কিন্তু গ্রিসের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত জটিল এবং দীর্ঘমেয়াদি। একজন অভিবাসীর পরিবারকে পুনর্মিলন ভিসার আবেদনের কোন তথ্য না দিয়েই বছরের পর বছর তা ফেলে রাখা হয়।

শুধু আনাম মোহাম্মদই নন পাঁচদিন গ্রিসের বিভিন্ন শহরে ঘুরে অনেক বাংলাদেশির কাছ থেকেই এমন অভিযোগ পেয়েছেন ইনফোমাইগ্রেন্টসের সংবাদকর্মী।

দীর্ঘসূত্রিতা ও হয়রানি

বাংলাদেশে গ্রিক দূতাবাস না থাকাকে দীর্ঘসূত্রিতার অন্যতম কারণ বলে মনে করেন অনেকে। বর্তমানে ঢাকায় পারিবারিক পুনর্মিলন ভিসার পুরো প্রক্রিয়াটি দেখভাল করছে গ্লোবাল ভিএফএস নামের একটি প্রতিষ্ঠান। গ্রিসের অভিবাসন মন্ত্রণালয় এবং ভারতের নয়াদিল্লিতে অবস্থিত গ্রিক দূতাবাসের মাধ্যমে তারা এই কার্যক্রম পরিচালনা করে। ত্রিমুখী ফাইল চালাচালির জটিল প্রক্রিয়ার কারণে অনেক অভিবাসীকে পরিবার আনতে দিনের পর দিন অপেক্ষায় থাকতে হয়।

নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে আনাম মোহাম্মদ জানান, “গ্রিসে বসবাসরত একজন বৈধ অভিবাসীকে পরিবার আনতে হলে প্রথমে সব নথি সত্যায়িত করে গুলশানের গ্লোবাল ভিএফএস অফিসে জমা দিতে হয়। ভিএফএস যাবতীয় অনুসন্ধান করে এই আবেদন ভারতের নয়াদিল্লিতে অবস্থিত গ্রিক দূতাবাসে পাঠায়। গ্রিক দূতাবাস সব নথি ও আবেদন সত্যায়িত করতে অনেকক্ষেত্রে এক থেকে দুই বছর পর্যন্ত সময় নেয়। আমার ক্ষেত্রে আমি আট মাস পরে পেয়েছিলাম।”

তিনি আরও যোগ করেন, “নয়াদিল্লির গ্রিক দূতাবাস সত্যায়িত করার পর সব নথি গ্রিক ভাষায় অনুবাদ করে আমি এথেন্সের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠাই। কিন্তু এই পর্যায়ে এসে আমার ফাইল দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকে। কোনো সংবাদ না পেয়ে একজন আইনজীবীর শরণাপন্ন হয়ে আমার আবেদন সম্পর্কে জানতে পারি। মূলত এই দপ্তর থেকে সবুজ সংকেত দেয়া হলে আবেদনটি দিল্লির গ্রিক দূতাবাসে পাঠায় তারা। কিন্তু সেখানে ভিসা আবেদন জমা দেয়ার অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতে অনেক সময় বছরের পর বছর ধরে অপেক্ষা করতে হয়।”

উল্লেখ্য, গ্রিক সরকারের একটি অনলাইন পোর্টালে এই আবেদনের সবশেষ অবস্থা যাচাইয়ের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও অভিবাসীদের অভিযোগ দীর্ঘদিন পার হলেও তারা কোনো হালনাগাদ তথ্য সেখান থেকে পান না।

পরিস্থিতি এমন যে অনেক বাংলাদেশি হতাশায় গ্রিস ছেড়ে ইউরোপের অন্য কোনো দেশে চলে যাওয়ার অপেক্ষায় আছেন। তেমনই একজন আবদুল জব্বার অপু। তিনি ২০০০ সাল থেকে গ্রিসে আছেন। স্ত্রী ও পরিবার আনার জন্য গত ১০ বছর ধরে অপেক্ষায় আছে। সব প্রক্রিয়া শেষের পরও তার আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

ইনফোমাইগ্রেন্টসকে আবদুল জব্বার বলেন, “আমি এখন আবার আবেদন করে শেষ বারের মতে চেষ্টা করছি। হয়ত পরিবার আনতে না পারলে আমি পর্তুগাল, স্পেন কিংবা ইটালিতে চলে যাব। কারণ আমার পরিচিত অনেকেই আমার অনেক পরে ইউরোপে এসে এখন পরিবার নিয়ে বসবাস করছে। এর ফলে অনেক সময় আমি বিব্রতকর অবস্থায় পড়ি। বর্তমানে গ্রিক সরকার অভিবাসীদের পারিবারিক পুনর্মিলন ভিসা না দিয়ে আমাদের জীবনকে বিষিয়ে তুলছে।”

মানসিক চাপে অভিবাসীরা

পারিবারিক পুনর্মিলন ভিসার জটিল প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার কারণে অভিবাসীদের অনেকেই মানসিক সমস্যায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন।

আবদুল জব্বার অপু বলেন, “আমার এক বন্ধু দীর্ঘদিন ধরে পরিবার আনতে না পেরে কিছুদিন আগে স্ট্রোক করেছেন। আমার স্ত্রীর সাথে আমার প্রতিনিয়ত সমস্যা হচ্ছে। সে আমাকে প্রতিদিন জিজ্ঞাসা করে কখন এখানে আসতে পারবে। পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবেও আমি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। প্রতিবছর আমাকে দেশে যেতে হয়। নিজের ব্যবসা রেখে দেশে যাওয়া খুব কঠিন।”

অপরদিকে আনাম মোহাম্মদ বলেন, “আমি প্রতিদিন কাজ থেকে ফিরে আমার স্ত্রীকে আশ্বাস দিতে হয় কখন সে আমার সাথে এখানে থাকতে পারবে। গ্রিক সরকার যদি আমাদের পরিবার আনার ভিসা নাই দেয় তাহলে প্রক্রিয়াই বন্ধ ঘোষণা করা উচিৎ। কারণ এভাবে অপেক্ষা করাটাও এক প্রকার মানসিক অত্যাচার আমাদের জন্য।”

এভাবে অভিবাসীদের নিজ পরিবার আনতে না দিয়ে প্রক্রিয়া জটিল করে দেয়া সম্পূর্ণ মানবাধিকার ও আশ্রয় আইন বিরোধী। “আমি জানিনা আর কয়দিন গ্রিসে থাকতে পারব। শেষ পর্যন্ত যদি পরিবার আনতে না পারি অন্য অভিবাসীদের মতো আমাকেও ইউরোপের অন্য কোনো দেশে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হবে,” বলেন আনাম মোহাম্মদ। সূত্র: ইনফোমাইগ্রান্টস।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *