Main Menu

নির্মমতার বর্ণনা দিলেন সৌদি ফেরত ২ নারী

ডেস্ক রিপোর্ট:
স্বপ্ন দেখেছিলেন একটু স্বচ্ছল জীবন-যাপনের। সেই আশা নিয়ে বৈধভাবেই মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়েছিলেন দিবা ও নিশী (ছদ্মনাম)। একজন ছয় মাস এবং একজন ৯ মাস দেশটিতে অবস্থান করেছেন। এসময় তারা সহ্য করেছেন অমানুষিক নির্যাতন। অবশেষে দেশে ফিরে এসেছেন তারা, জানিয়েছেন দেশটিতে কাটানো নির্মমতার দুঃসহ জীবনের গল্প।

এই দুই নারী রাজধানীর পল্টনে মেসার্স কনকর্ড অ্যাপেক্স রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে বিদেশে গিয়েছিলেন। শনিবার (১৩ আগস্ট) রাতে এয়ার এরাবিয়ার একটি ফ্লাইটে করে তারা দেশে ফিরে আসেন।

র‌্যাব বলছে, রিক্রুটিং এজেন্সির রেজিস্ট্রেশন এবং বৈধতা থাকলেও তারা জেনেশুনেই আর্থিকভাবে অসচ্ছল নারীদের টার্গেট করে সৌদি আরব পাঠাতো। আর্থিক প্রলোভনের পাশাপাশি বিদেশে উন্নত জীবনযাপনের আশ্বাস দিয়ে সৌদি পাঠাতো তারা। তবে সেখানে গিয়ে সেই নারীরা নির্যাতনের শিকার হয়।

ওই দুই নারী জানান, দিবাকে ছয় মাস আগে এবং নিশীকে ৯ মাস আগে সৌদি আরব পাঠায় কনকর্ড অ্যাপেক্স রিক্রুটিং এজেন্সি। ৯ মাস আগে পাঠানো হলেও মাত্র তিন মাসের বেতন দেওয়া হয়েছে নিশীকে। আর দিবা পেয়েছেন দুই মাসের বেতন।

বিদেশে নেওয়ার আগে তাদের উন্নত জীবনযাপনের আশ্বাস দেওয়া হলেও সেখানে নিয়ে গাদাগাদি করে রাখা হতো একটি বদ্ধ ঘরে। সেখানকার লোকজনদের বিষয়ে কিংবা কোনও বিষয়ে অভিযোগ জানালে তাদের উপর নেমে আসতো মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতন।

তবে দিবা ও নিশীই নন; তাদের মতো নির্যাতিত আরও অনেকেই সেখানে আছেন বলে জানিয়েছেন তারা। তারা আরও জানান, দেশে আসার আগে আগে ভয়-ভীতি দেখিয়ে তাদের বয়ান নিয়ে ভিডিও করে রাখা হয়। ভিডিওতে তাদের বলানো হয়, ‘তাদের কোনও মারধর করা হয়নি। সব বেতন পরিশোধ করা হয়েছে।’

নির্যাতিত দিবা বলেন, ‘জোর করে এমন ভিডিও করিয়ে তারা রেখে দিয়েছে। এটা নাকি পরে তাদের কাজে আসবে। সৌদিতে আমাদের যেখানে রাখা হয়েছিল সেখানে বাংলাদেশের লোকজন রয়েছে এবং সৌদি লোকজন মিলে আমাদের উপর নির্যাতন চালাতো। বিভিন্ন জায়গায় কাজ করার জন্য পাঠানো হলেও মাস গেলেও বেতন দিতো না।’

এ ঘটনায় ভিকটিমে দিবার স্বামী রাজধানীর পল্টন থানায় কনকর্ড অ্যাপেক্স রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন। এ বিষয়টি তদন্ত করতে গিয়ে বেশ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে র‌্যাব। বাহিনীটি বলছে, এই চক্রটি প্রায় এক হাজারের বেশি নারীদের বিদেশ পাঠিয়েছে।

এর আগে গত ৭ আগস্ট নয়া পল্টনের সিটি হাট শপিং কমপ্লেক্সের ছয় তলায় কনকর্ড অ্যাপেক্স রিক্রুটিং এজেন্সিতে অভিযান চালায় র‌্যাব। অভিযানে চক্রটির মূল হোতা মো. আবুল হোসেন (৫৪) ও তার সহযোগী আলেয়া বেগমকে (৫০) গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৩১টি পাসপোর্ট বিভিন্ন ডকুমেন্ট এবং তিন নারীকে উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাব জানায়, যারা এই কনকর্ড এপেক্স রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে বিদেশ গিয়েছেন, তারা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর করেন। পরবর্তী সময়ে এজেন্সির লোকজন নিজেদের মতো করে বিভিন্ন শর্ত সেখানে যুক্ত করে। সেই চুক্তিনামাটিই র‌্যাবের সন্দেহ হয়। কারণ চুক্তিনামায় বেশ কিছু শর্ত দেখা গেছে, যেগুলো আইনগত কোনও ভিত্তি নেই। চুক্তিনামায় বলা হয়, ‘কোনও অবস্থাতেই উক্ত অফিস ব্যতীত কারও সাথে আলোচনা করবো না এবং কোথাও কোনও অভিযোগ করবো না।’

এটি কী ধরনের চুক্তিনামা হতে পারে, প্রশ্ন র‌্যাব কর্মকর্তাদের। র‌্যাব ১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, ‘এটি তো এক প্রকার মানুষকে জিম্মি করা। এক প্রকার জিম্মি করেই টার্গেটকৃত নারীদের বিদেশ পাঠানো হচ্ছে। আরেকটি শর্ত, যদি স্বেচ্ছায় অথবা অন্যভাবে কেউ সেখান থেকে ফিরে আসে বা নিয়োগকর্তার কাছ থেকে পালিয়ে চলে আসে; তাহলে কোনোভাবেই কনকর্ড অ্যাপেক্স রিক্রুটিং এজেন্সি দায়ী থাকবে না।’

সেখানে আরও লেখা রয়েছে, ‘এজন্য আমি বা আমার পক্ষে কেউ কনকর্ড এপেক্স এর বিরুদ্ধে কোথাও কোনও প্রকার অভিযোগ দাখিল করবো না। কোনও ক্ষতিপূরণ দাবি করবো না বা করতে পারবো না। ভবিষ্যতে কোনও ধরনের আপত্তি বা অভিযোগ উত্থাপন করব না। করলে তা সর্বোচ্চ আদালতে অগ্রাহ্য বা বাতিল বলে বিবেচিত হবে।’

আদালতে অগ্রাহ্য এবং বাতিল হতে পারে এ ধরনের কোন চুক্তি হতে পারে কিনা এ বিষয়ে প্রশ্ন রাখেন র‌্যাবের এই কর্মকর্তা।

আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, রিক্রুটিং এজেন্সির বৈধ লাইসেন্স রয়েছে। তাদের এগ্রিমেন্ট ঠিক আছে। তাদের সমস্ত কাগজপত্র আপটুডেট রয়েছে। এমনকি তারা যে প্রসেসে মানুষকে বিদেশে পাঠাচ্ছে সেটাও ঠিক আছে। কিন্তু তারা জানে, ওখানে গিয়ে তারা কী ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়। সৌদি আরব গিয়ে কোনও ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তার পরিপ্রেক্ষিতে সেই এজেন্সি কোনও দায়ভার নেয় না।

তিনি বলেন, ‘তারা এমন নারীদের টার্গেট করে, যাদের পরিবারের তেমন কোনও সদস্য নেই, বা তাদের খোঁজ খবর নেওয়ার মতো কেউ নেই।’

বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির আড়ালে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে, হজ করানোর কথা বলে এবং অতিরিক্ত বেতন, বিদেশে আরাম-আয়েশে জীবনযাপনের কথা বলে চক্রটি নারীদের বিদেশে পাঠাতো বলেও উল্লেখ করেন এই র‌্যাব কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘যাদের বিদেশে পাঠানো হচ্ছে সেসব হতদরিদ্র নারী, তারা সেখানে গিয়ে বিভিন্ন হয়রানি এবং নির্যাতনের শিকার হন।’

তিনি বলেন, ‘এখনও এমন অনেক ভুক্তভোগী রয়েছেন, যাদের পরিবারের খোঁজ-খবর রাখার মতো কেউ নেই। তারা যখন দেশের বাইরে এসব প্রলোভনে গিয়েছেন, পরবর্তী সময়ে তাদের বিষয়ে আর কোনও খোঁজ-খবর নেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে তাদের উদ্ধারের জন্য জোর তৎপরতা চালানো হচ্ছে।’






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *