সবুজ ধানের চারায় দুলছে কৃষকের স্বপ্ন
নিউজ ডেস্ক:
গোয়াইনঘাট উপজেলায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় বোরোর ফসলহানি। যে পানির সঙ্গে কৃষকের মিতালি, সেই পানি গেল বন্যায় এলাকার মানুষের টিকে থাকার পথকে কঠিন করে তুলেছে। এপ্রিল থেকে শুরু করে দফায় দফায় বন্যায় এক এক করে হাওরের ফসল মাঠের ফসল এমন কি সর্বশেষ অনেক কৃষকের গুলার ধান বানের জলে ভাসিয়ে নিয়ে যায়।তবুও দুর্যোগের কাছে হার মানতে রাজি নয় তারা।
উপজেলা কৃষককুল আবার তৈরি হয়েছে চাষাবাদের জন্য। আমন রোপনের বীজতলা (হালি) চারার মাঠগুলো সবুজ হয়ে উঠেছে। আর সেই চারা রোপণের জন্য নিজেদের তৈরি করছেন কৃষক।মাঠে মাঠে চলছে জমি তৈরি, বীজ বপনসহ কোথাও কোথাও চারা উত্তোলন করে রোপণের ধূম পড়েছে।
ভয়াবহ বন্যার আক্রমণে নেতিয়ে পড়েছিল উপজেলার সাধারণ মানুষ। হার না মানা কৃষক বন্যার পানি থেকে বীজ তলা উদ্ধার হতে না হতেই নেমে পড়েছে তারা মাঠে। মাত্র ২০ দিনের ব্যবধানে লালচে আর বাদামী রঙের দোআঁশ মাটি পরিণত হয়েছে সবুজে। কচি ধানের চারা হাতছানি দিয়ে ডাকছে কৃষককে । যে দিকে চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। মাঠের পর মাঠ সবুজের সমারোহ। কৃষকের সোনালী স্বপ্ন লুকিয়ে আছে সবুজ ধানের কচি চারায়। মৃদু বাতাসে দোল খাচ্ছে মাথা নাড়াচ্ছে ধানের চারা। অনেকে বোরো ধান চাষের লোকসান পুষিয়ে নিতে চান আলু, পটল,শিম চাষ করে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সবুজ ধানের কচি চারা জানান দিচ্ছে তার মাঝে কৃষকের স্বপ্ন দোল খাচ্ছে। এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মাঠজুড়ে শুধু সবুজ আর সবুজ ধানের চারা। মাত্র ২০/২৫ দিন আগে আমন চারা বপণ করেছেন এ অঞ্চলের কৃষক। ১৫ দিনের ব্যবধানে বেড়ে উঠেছে আমন চারা। বর্তমানে কোন সংকটে পড়তে হচ্ছে না কৃষকদেরকে। পর্যাপ্ত বৃষ্টি হওয়ায় পানির সংকট ও থাকছে না তাদের। সার, বীজ, কীটনাশক সংকট না থাকার পাশাপাশি কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ কৃষকের আমন চাষে গতি বাড়িয়েছে আরো এক ধাপ।
প্রসঙ্গত, গত এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া দফায় দফায় বন্যায় মাঠে কৃষকের আধা পাকা কাঁচা বোরো ধান তলিয়ে যায়। সর্বশেষ ১৭ জুনের ভয়াবহ বন্যায় শুধু মাঠের ধান নয়, অনেক কৃষকের গোলার ধানও বানের জলে ভেসে গেছে। সেই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে কৃষকরা তপ্ত দুপুরে প্রখর রৌদ্রে আমন ধানের জমি তৈরিতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলছেন। তীব্র তাপদাহ, বারী বর্ষণ, আর বজ্রবৃষ্টির বৈরি আচরণকে উপেক্ষা করে জমি তৈরি করতে কৃষকরা নানা কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। কেউবা পাওয়ার টিলার ও ট্রাক্টরের সাহায্যে হালচাষ করছেন। বৃষ্টির জমানো পানি যেন কোনোভাবে নিষ্কাশন হতে না পারে, এ জন্য জমির চতুর্থ দিকে মাটির শক্ত আইল তৈরি করা হচ্ছে, আবার কোনো জমি থেকে অতিরিক্ত পানি সরিয়ে দেওয়ায় ব্যস্ত কৃষকরা।
কৃষক আলাউদ্দিন বলেন, এ পর্যন্ত তিন বিঘা জমিতে ৫১ জাতের ধান রোপন করে নিয়েছেন। কৃষির উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। তিনি বলেন এ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কোন সমস্যা হচ্ছে না।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবারে আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫২৭০ হেক্টর।আমনের বীজ তলা ৭৬৪ হেক্টর।
এদিকে, বন্যা পরবর্তী উপজেলার ৮৫০ জন কৃষককে সার ও বীজ এবং বাংলাদেশ ফিড এসোসিয়েশন এর পক্ষ থেকে তিন কেজি করে ৩০০ জন কৃষককে বীজ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। পাশাপাশি ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় কর্তৃক উপজেলা প্রকল্প অফিসের মাধ্যমে জি আর খাত হতে উপজেলার ১৪০০ জন কৃষক পরিবারকে ৫ কেজি করে বীজ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও কৃষকেরা কৃষিতে উৎসাহী হতে ঘুরে দাঁড়াতে উপজেলার ১৮৫০ জন কৃষক পরিবারকে লামলা নাভী জাতের ৫ কেজি বীজ বি আর ২২-২৩, ১০ কেজি করে ডিএপি ও এমওপি সার সহায়তা প্রদান করা হয়ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার রায়হান পারভেজ রনি জানান, উপজেলার পশ্চিম আলীরগাঁও,পূর্ব আলীরগাঁও, পূর্ব জাফলং, পশ্চিম জাফলং, ফতেপুর,ডৌবাড়ী, রুস্তমপুর, তোয়াকুল ও নন্দীরগাঁও ইউনিয়ন মিলে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির আমন রোপন হয়ে গেছে। এ পর্যন্ত হালির চারায় কোন ধরনের রোগ বালাই নেই। তাই কৃষকরা স্বস্তিতে আছেন। তিনি জানান এ বছর ও আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
Related News
কানাইঘাটে বজ্রপাতে ওমান প্রবাসীর মৃত্যু
কানাইঘাটে বজ্রপাতে ওমান প্রবাসীর মৃত্যু সিলেটে মাঠে গরু চরাতে গিয়ে বজ্রপাতে একজনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবারRead More
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ভৌতিক হোল্ডিং ট্যাক্স, ক্ষুব্ধ নগরবাসী
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ভৌতিক হোল্ডিং ট্যাক্স, ক্ষুব্ধ নগরবাসী সিলেট সিটিকর্পোরেশন নতুন এসেসমেন্টের উপর ভিত্তি করেRead More