Main Menu

গ্রিসে জনশক্তি রপ্তানি: সম্ভাবনা কতটুকু, চ্যালেঞ্জ কী কী?

ডেস্ক রিপোর্ট:
বৈধ অভিবাসন প্রক্রিয়া চালু করতে গত ফেব্রুয়ারিতে করা গ্রিস-বাংলাদেশ সমঝোতা চুক্তি এখন বাংলাদেশের মন্ত্রিসভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায়৷ এরপরই ইউরোপের দেশটিতে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়৷ তবে এক্ষেত্রে গ্রিসের চাওয়াই প্রাধান্য পাবে বলে জানিয়েছেন সচিব৷

গত ফেব্রুয়ারিতে গ্রিসের অভিবাসনমন্ত্রী নোতিস মিতারাচির বাংলাদেশ সফরকালে দুই দেশের মন্ত্রণালয় একটি সমঝোতা চুক্তি করে৷ সেই চুক্তির ভিত্তিতে প্রতিবছর চার হাজার করে পাঁচ বছরে মোট ২০ হাজার বাংলাদেশিকে মৌসুমি কাজের ভিসা দেবে গ্রিস৷ পাশাপাশি অনুমতি ছাড়া দেশটিতে অবস্থানরত ১৫ হাজার বাংলাদেশিকেও দেয়া হবে সাময়িক বসবাস ও মৌসুমি কাজের অনুমতি৷

২১ জুলাই দুই দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের এই চুক্তির অনুমোদন দিয়েছে গ্রিক পার্লামেন্ট৷ দেশটির দিক থেকে এই প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পথে তাই প্রক্রিয়াগত আর কোনো বাধা থাকলো না৷

কবে থেকে শুরু?

গ্রিস অনুমোদন দিলেও বাংলাদেশে সমঝোতা চুক্তিটির অনুমোদন প্রক্রিয়া এখনও শেষ হয়নি৷ বাংলাদেশে এর চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে মন্ত্রিসভা৷ প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন জানিয়েছেন প্রক্রিয়াটি এখন শেষ পর্যায়ে রয়েছে৷ বৃহস্পতিবার ইনফোমাইগ্রেন্টসকে তিনি বলেন, ‘‘গ্রিস হচ্ছে প্রথম ইউরোপীয় দেশ, যাদের সঙ্গে আমাদের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সংক্রান্ত একটি চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে৷ এটা আমাদের মন্ত্রিপরিষদে পেশ করার জন্য উপস্থাপন করেছি৷ আমরা আশা করছি, দ্রুতই এর অনুমোদন পেয়ে যাবো৷ দুই দেশেই যখন অনুমোদন শেষ হবে, তখন আবার বসে দূতাবাসের সহযোগিতায় আমরা কাজটা শুরু করতে পারবো৷’’

গ্রিসের অভিবাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী প্রতি বছর দেশটিতে এক লাখ এক হাজার মৌসুমি শ্রমিকের চাহিদা রয়েছে৷ এই খাতে তারা বৈধভাবে বিদেশি কর্মী নিয়োগ দেয়ার মাধ্যমে অনিয়মিত অভিবাসন বন্ধ করতে চায়৷

চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে নিয়োগ পাওয়া কর্মীরা মূলত দেশটির কৃষিখাতে মৌসুমি শ্রমিক হিসেবে কাজ পাবেন৷ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে গ্রিস আমাদের বলেছে, তারা কৃষিতে মৌসুমি শ্রমিকসহ আরো কয়েকটি ক্ষেত্রে লোক নেবেন৷ এছাড়া কেয়ার গিভিং আছে, বয়স্কদের সেবা দেয়ার জন্য৷ তবে কৃষি খাতের উপরই তারা বিশেষ জোর দিয়েছেন৷ এই খাতে মৌসুমি কর্মীর সংখ্যা তাদের অনেক প্রয়োজন হয়৷’’

প্রক্রিয়া নির্ভর করছে গ্রিসের উপর

গত ফেব্রুয়ারিতে গ্রিসের মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এই চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের নাগরিকদের মৌসুমি কাজের ভিসা পেতে গ্রিসের চাকরিদাতার নিয়োগপত্র থাকতে হবে৷ একবারে সর্বোচ্চ একটানা নয় মাস থাকার সুযোগ পাবেন তারা৷ চুক্তিপত্রের উপর নির্ভর করে তিনমাস পর আবারও আসার সুযোগ পাবেন৷ পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষে তারা বাধ্যতামূলকভাবে বাংলাদেশে ফিরে যাবেন৷ এই অভিবাসীরা দেশটির নাগরিকত্বের আবেদন বা পারিবারিক পুনর্মিলন ভিসার সুযোগ পাবেন না৷

এই বিষয়ে ইনফোমাইগ্রেন্টসকে ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, ‘‘কেউ যাতে সেখানে গিয়ে থেকে না যান, তারা যাতে তাদের নির্দিষ্ট সময়ে পরে ফেরত আসেন, এইজন্যই তারা বছরে নয় মাস সেখানে থাকবেন, তিনমাস দেশে থাকবেন এবং আবার যাবেন৷’’

তবে যাওয়ার এই প্রক্রিয়াটি কী হবে বা কাদের মাধ্যমে যাবেন তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি৷ তিনি জানান, ‘‘গ্রিস কতগুলো সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি বলেছে, কীভাবে ওখানে অবস্থিত বাংলাদেশিরা বৈধ হবেন এবং বাংলাদেশের থেকে কিভাবে নতুন কর্মী ঐ দেশে একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঐ দেশে যাবেন৷ …কীভাবে তারা এখান থেকে যাবেন কিংবা যারা অবৈধভাবে যাবেন, তারা কীভাবে বৈধ হবেন- এগুলোও আমরা নির্ধারণ করবো৷ এটা অধিকাংশই হবে গ্রিস যেভাবে নিতে স্বচ্ছন্দ বোধ করে৷’’

তবে গ্রিসে অবস্থানরত ১৫ হাজার অনিয়মিত বাংলাদেশি যেসব শর্তে বৈধতা পাবেন, সে বিষয়ে এরইমধ্যে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে এথেন্সে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস (এই বিষয়ে বিস্তারিত পড়তে ক্লিক করুন)৷

ফেরত আনার প্রক্রিয়ায় চ্যালেঞ্জও

বাংলাদেশ থেকে অনিয়মিত উপায়ে ইউরোপে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের অন্যতম গন্তব্য গ্রিস৷ ব্র্যাকের অভিবাসন বিভাগের প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, ‘‘গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে যাওয়ার উদ্বেগজনক যে চেষ্টা, তার মূল টার্গেট হয় ইটালি, নয়তো গ্রিস৷ কারণ লিবিয়া পার হলেই এই দুই দেশে যাওয়া যায়৷ এবং তারা কোনো না কোনোভাবে আনডকুমেন্টেড পথে গিয়ে কাজও পেয়ে যান৷ আমি মনে করি, মানুষ যখন জানবে যে, বৈধভাবে গ্রিসে যাওয়া যায় তখন হয়ত এই অবৈধ পথটা নিরুৎসাহিত হবে৷ এটা আমার কাছে প্রথম ইতিবাচক দিক মনে হয়৷’’

কিন্তু তার মতে, এই চুক্তি বাস্তবায়নে কিছু চ্যালেঞ্চও রয়েছে৷ বিশেষ করে চুক্তি শেষে বাংলাদেশিদের ফেরত আনার প্রক্রিয়া নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে বলে মনে করেন তিনি৷ বলেন, ‘‘কেউ চুক্তি শেষে গ্রিস থেকে চলে গেলে আমরা ট্র্যাক করবো কিভাবে? কারণ, আমাদের বেশিরভাগই মনে করেন, ইউরোপে একবার গেলে তিনি আজীবন থাকবেন৷ এই বিষয়গুলোর জন্য নানা ধরনের আলোচনা চলছে যে, তাদের কাছ থেকে জামানতের টাকা রাখা হবে বা অন্য কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে৷ এই প্রক্রিয়াটি করা এবং বাস্তবায়নই সামনের দিনের মূল চ্যালেঞ্জ হবে৷’’

এক্ষেত্রে একটি ডিজিটালাইজড সিস্টেম করে পুরো প্রক্রিয়াটি মনিটরিং এবং সব অংশীদারকে দায়িত্বশীল করার উপর জোর দিচ্ছেন তিনি৷ তিনি বলেন, ‘‘যা আমরা কাগজে কলমে লিখবো, তা যদি বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলে বৈধভাবে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় এটি বড় ধরনের ইতিবাচক পদক্ষেপ হতে পারে৷’’

ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, ‘‘মূল বিষয়টা হচ্ছে, অবৈধ অভিবাসনকে নিরুৎসাহিত করার জন্য বৈধ পথটা খুলে দেয়া৷ আমরা মনে করি, এটা অবৈধ গমনাগমনকে নিরুৎসাহিত করবে৷ কারণ, মানুষ যখন দেখবে গ্রিসের মতো ইউরোপের একটি দেশে বৈধভাবেই যাওয়া যায় তাহলে আমি কেন মৃত্যুঝুঁকি বা অন্য কোনো ধরনের ঝুঁকি নেবো৷ যেকারণে এটা আমাদের কাছে অন্য যেকোনো এমওইউ-এর চেয়ে বেশি গুরুত্ব বহন করে৷’’ সূত্র: ইনফোমাইগ্রান্টস।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *