Main Menu

বেলজিয়ামে আধুনিক দাসত্বের শিকার বাংলাদেশ, ফিলিপাইনের ৫৫ নাগরিক

নিউজ ডেস্ক:
বেলজিয়ামের আন্টভের্পেন বা অঁভের্স (ফরাসি) বন্দরের পাশে নির্মাণাধীন একটি স্থাপনায় শ্রমশোষণের শিকার ৫৫ জন ফিলিপিনো এবং বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকের সন্ধান মিলেছে। মঙ্গলবার স্থানীয় প্রসিকিউটর কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, এই ঘটনায় আইনি তদন্ত শুরু করেছে বিচার বিভাগ৷

গত ২৬ জুলাই,বেলজিয়ামের আন্টভের্পেন শহরের বন্দর এলাকার নিকটস্থ একটি নির্মাণাধীন এলাকা থেকে নজিরবিহীন শ্রমশোষণের শিকার ৫৫ জন বাংলাদেশি ও ফিলিপিনো অভিবাসীকে উদ্ধার করেছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।

অভিবাসীদের উদ্ধারের পর এ সংক্রান্ত তদন্তের দায়িত্ব বেলজিয়ামের শ্রম বিষয়ক অডিটরের কাছে ন্যস্ত করা হয়েছে৷ শ্রম বিষয়ক অডিটর সাধারণত বেলজিয়ামের বিচার বিভাগেরই একটি অংশ যা কাজের পরিপ্রেক্ষিতে সংঘটিত অপরাধের বিষয় দেখভাল করে৷

শ্রম বিষয়ক অডিটরের কার্যালয় বার্তা সংস্থা এএফপিকে নিশ্চিত করেছে, আধুনিক শ্রম দাসত্বের শিকার সম্ভাব্য ৫৫ জন ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং তাদেরকে অবশ্যই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে৷

বেলজিয়ামে মানব পাচারের শিকার ব্যক্তিদের আশ্রয়ের জন্য বিশেষায়িত সংস্থা পেওক সেন্টারের মতে, “বেলজিয়ামে একটি কর্মক্ষেত্রে এত সংখ্যক লোককে শোষণ করার ঘটনা নজিরবিহীন৷’’

সংশ্লিষ্ট কোম্পানির নাম উল্লেখ না করেই শ্রম অডিটর কার্যালয়ের একজন মুখপাত্র জানান, “এই ব্যক্তিরা আন্টভের্পেন বন্দরের একটি স্থাপনায় ঢালাই এবং পাইপ ফিটিংসের মিস্ত্রী হিসাবে কাজ করত৷’’

বেশ কিছু স্থানীয় গণমাধ্যমের মতে, সংশ্লিষ্ট অভিবাসীদের ইন্ডাস্ট্রিয়াল পাইপিং-এ বিশেষায়িত একটি কোম্পানির অধীনে রাখা হয়েছিল৷ কোম্পানিটি মূলত বন্দরের কাছে অবস্থিত বেভারেনে বোরিয়ালিস নামে রাসায়নিক পণ্য উৎপাদনকারী একটি ফার্মের নির্মাণ সাইটের পরোক্ষ ঠিকাদার হিসাবে কাজ করে৷

বেতন মাত্র ৬০০ ইউরো

পেওক সেন্টারের পরিচালক এএফপিকে বলেন, “ অভিবাসীদের উদ্ধারের প্রায় দুই সপ্তাহ আগে নির্মাণাধীন স্থাপনাটিতে শ্রমশোষণের বিষয়ে ফিলিপাইন্সের কনস্যুলেটরের মাধ্যমে জানানো হয়েছিল৷ কারণ ফিলিপাইন্স কনস্যুলেটে গিয়ে বেশ কয়েকজন অভিবাসী সেখানকার নির্মম পরিস্থিতি নিয়ে অভিযোগ করেছিলেন৷’’

আন্টভের্পেনে অবস্থিত আধুনিক দাসত্বের শিকার ব্যক্তিদের সুরক্ষায় কাজ করা পিওক সেন্টারের একটি শাখার পরিচালক ক্লাউস ভ্যানহাউটে বলেন, ‘‘শোষণের শিকার শ্রমিকেরা প্রতি ঘণ্টায় কাজের বিপরীতে মাত্র দুই থেকে চার ইউরো এবং মাসে ৬০০ ইউরোর কাছাকাছি বেতন পেত৷ এটা স্পষ্ট যে তারা অত্যন্ত শোচনীয় অবস্থায় ছিল৷’’

তার মতে, ‘‘এশীয় অভিবাসী কর্মীদের শোষণকারী নেটওয়ার্কটি মূলত হাঙ্গেরি এবং পোল্যান্ডের ওয়ার্ক পারমিট থাকা অভিবাসীদের ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাচার করে শোষণ করে৷ অভিবাসীদের মধ্যে নেটওয়ার্কটির নির্যাতনের শিকার অনেক অভিবাসী এরই মধ্যে জার্মানিতে কাজ করছিল এবং অন্য একটি দল গ্রিসে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।

এ বিষয়ে বেলজিয়ামের বিচার মন্ত্রী ভিনসেন্ট ভ্যান কুইকেনবোরনের উদ্ধৃতি দিয়ে বেলগা প্রেস জানিয়েছে, ‘‘এই ফাইলটি বিশাল একটি বরফ খণ্ডের ছোট্ট একটি টুকরোর মতো৷ এরকম বহু ঘটনা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে৷’’

মন্ত্রী এনজিও ওয়াক ফ্রি ফাউন্ডেশন প্রদত্ত গ্লোবাল স্লেভারি ইনডেক্সের একটি পরিসংখ্যান উল্লেখ করে জানান, “বেলজিয়ামে ২৩ হাজার মানুষ রয়েছে যারা শ্রমশোষণ বা আধুনিক দাসত্বের শিকার। অভিবাসীসহ ভুক্তভোগীদের এরকম পরিস্থিতি থেকে রক্ষার্থে বেলজিয়াম সরকার সোমবার এই www.stoptraite.be ওয়েবসাইটটি খোলার ঘোষণা দিয়েছে৷

এই ওয়েবসাইটি সব ধরনের শোষণের বিরুদ্ধে যোগাযোগের জন্য একক প্লাটফর্ম হিসাবে কাজ করবে৷ বিভিন্ন পরিস্থিতিতে নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিরা (যৌন শোষণ, শ্রম শোষণ, জোরপূর্বক মানব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংগ্রহ ইত্যাদি) আইনি সাহায্য পেতে এখানে তথ্য দিয়ে যোগাযগোগ করতে পারবেন। সূত্র: ইনফোমাইগ্রান্টস।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *