Main Menu

ফের উত্তাল শাবি, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ-মিছিল

নিউজ ডেস্ক:
‘ক্যাম্পাসে লাশ কেন- প্রশাসন জবাব চাই’/ ‘বিচার বিচার বিচার চাই, বুলবুল হত্যার বিচার চাই’, ‘আমার ভাই মরলো কেন- প্রশাসন জবাব চাই’ ইত্যাদি স্লোগানে ফের উত্তাল হয়েছে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। শাবিপ্রবির এক ছাত্র ছুরিকাঘাতে খুন হওয়ার ঘটনায় উত্তপ্ত হয়েছে ক্যাম্পাস।

সোমবার (২৫ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী গাজিকালুর টিলায় বুলবুল আহমেদ (২২) নামের এক ছাত্রকে ছুরিকাঘাতে খুন করে দুর্বৃত্তরা। তার রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকতে দেখে অন্য শিক্ষার্থীরা শাবি প্রশাসনকে খবর দেন।

পরে বুলবুলের দেহ উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

বুলবুলের বাড়ি নরসিংদী জেলায়। সে শাবি’র লোকপ্রশাসন বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা খান।

এদিকে আহত অবস্থায় বুলবুলকে প্রথমে উদ্ধার করেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম জয়। তিনি সিলেটভিউ’র শাবি প্রতিনিধি নোমান আহমদকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের সামনের টিলায় এক ছাত্রী প্রথমে তাকে আহত অবস্থায় দেখতে পায়। পরে সেদিক দিয়ে ফাহিম নামের এক শিক্ষার্থী যাওয়ার সময় তাকে ওই ছাত্রী জানান। পরে ফাহিম আমাকে ফোন দিলে আমরা এসে তাকে উদ্ধার করি। তখনও বুলবুল বেঁচে ছিল। কিন্তু ছাত্রী হলের কাছাকাছি আসলে সে নিস্তেজ হয়ে যায়। প্রথমে তাকে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে নিয়ে যাই। সেখান থেকে এমএজি ওসমানী মেডিকলে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’

এর আগে চলতি বছরের শুরুতে পুরো এক মাস উত্তাল ছিলো শাবিপ্রবি। বিশ্ববিদ্যালয়টির বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্টের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ এনে গত ১৩ জানুয়ারি দিনগত মধ্যরাতে ওই হলের ছাত্রীরা রাস্তায় নামেন। সেই থেকে আন্দোলনের সূচনা। একদিন পর (১৫ জানুয়ারি) আন্দোলনরতদের ওপর ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ ওঠে। এতে নতুন মাত্রা পায় আন্দোলন। হলের পুরো প্রভোস্ট কমিটির অপসারণ, অব্যবস্থপনা দূর, ছাত্রলীগের হামলার বিচার চেয়ে ১৬ জানুয়ারি শাবির আরও শিক্ষার্থী আন্দোলনে শামিল হন। সেদিন উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা। তাকে মুক্ত করতে গেলে পুলিশকে বাধা দেন আন্দোলনকারীরা। তখন শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে উপাচার্যকে মুক্ত করে পুলিশ। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। পুলিশ সে সময় সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট ছুঁড়ে। শিক্ষার্থীরাও ছুঁড়ে ইট-পাটকেল। সংঘর্ষকালে পুলিশ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীসহ অর্ধশতাধিক লোক আহত হন। এ সংঘর্ষের ঘটনায় তিন শ’ অজ্ঞাত শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ১৭ জানুয়ারি রাতে মামলা করে পুলিশ।

মামলার এজাহারে পুলিশ লিখেছে, সেদিন শিক্ষার্থীরা পুলিশের ওপর গুলিও ছুঁড়েছিল। এ মামলা প্রত্যাহারে ১৮ জানুয়ারি রাত ১০টা পর্যন্ত আলটিমেটাম দেন শিক্ষার্থীরা। তবে মামলা প্রত্যাহার না হওয়ায় ১৮ জানুয়ারি আরও উত্তপ্ত হয় শাবি ক্যাম্পাস। ওইদিন ক্যাম্পাসের গোলচত্বরে অবস্থান নিয়ে দফায় দফায় বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের অপসারণ, প্রক্টর ও ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে বিভিন্ন ধরনের স্লোগানে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস। ওইদিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শিক্ষামন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বার্তা নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা ক্যাম্পাসে যান। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেলের সঙ্গে ছিলেন জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। তবে আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছ থেকে ভিসি অপসারণের আশ্বাস না পেয়ে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন শিক্ষার্থীরা। তারা উপাচার্যের অপসারণ চেয়ে গণসাক্ষর সংগ্রহ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ বরাবরে চিঠি পাঠান।

আন্দোলনের একপর্যায়ে ১৯ জানুয়ারি দুপুর ১২টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন শিক্ষার্থীরা। এ সময়ের মধ্যে ভিসি পদত্যাগ না করায় পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ওইদিন বিকেল ৩টা থেকে আমরণ অনশন শুরু করেন ২৪ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে একজনের বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ায় তিনি বাড়ি চলে যান। বাকি ২৩ জনের সাথে ২২ জানুয়ারি আরও ৫ শিক্ষার্থী যোগ দেন।

২১ জানুয়ারি দুই দফায় শাবি ক্যাম্পাসে যান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নাদেল। তিনি শিক্ষার্থীদের সাথে মুঠোফোনে কথা বলিয়ে দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে। শিক্ষামন্ত্রী অনশন ভাঙতে ও আলোচনায় বসতে আহবান জানান শিক্ষার্থীদের। আলোচনার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দলকে ঢাকায় আমন্ত্রণ জানান শিক্ষামন্ত্রী। প্রথমে সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করলেও দুই ঘণ্টা পর শিক্ষার্থীরা মত বদলে ফেলেন।

তবে ২১ জানুয়ারি রাতে শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় যায়। পরদিন (২২ জানুয়ারি) তাঁরা শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বাসায় বৈঠক করেন। বৈঠকের পর ২২ জানুয়ারি দিবাগত মধ্যরাতে শাবির আন্দোলনরতদের সঙ্গে ভার্চুয়াল মাধ্যমে কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি আন্দোলন থেকে সরে এসে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের অনুরোধ জানান শিক্ষার্থীদের। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রীর সেই অনুরোধও প্রত্যাখ্যান করেন শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ২৪ জানুয়ারি রাত পৌনে ৮টার দিকে শাবি উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের বাসভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে বিকাল থেকে তাঁর বাসা ঘেরাও করা হয়। পরদিন (২৫ জানুয়ারি) রাতে বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরায় প্রদান করলেও আন্দোলনের অংশ হিসেবে অনশন চালিয়ে যেতে থাকেন ২৮ শিক্ষার্থী। তাদের অবস্থা সময় সময় খারাপের দিকে যেতে থাকলে ঢাকা থেকে ছুটে আসেন শাবির সাবেক অধ্যাপক ড. মু. জাফর ইকবাল ও তাঁর স্ত্রী ড. ইয়াসমিন হক। তাদের অনুরোধে ১৬৩ ঘণ্টা পর ২৫ জানুয়ারি সকাল ১০টা ২০ মিনিটে পানি পানের মাধ্যমে অনশন ভঙ্গ করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় আন্দোলনকারী ছাত্র-ছাত্রীরা জাফর ইকবাল ও ইয়াসমিন হককে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রত্যাহারের পর স্বাভাবিক হয় শাবিপ্রবি। তবে সোমবার ছাত্র খুনের ঘটনায় ফের উত্তাল হলো এ বিশ্ববিদ্যালয়।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *