Main Menu

সিলেট নগরীর প্রধান সড়কগুলোর বেহাল দশা

অতিথি প্রতিবেদক:
দুই দফা বন্যা ও প্রবল বর্ষণে সিলেট নগরীর প্রধান প্রধান সড়কগুলোর বেহাল দশা। ফলে সড়কগুলো এখন চরমভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। প্রতিটি সড়কে সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দের। এ অবস্থায় সড়কগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এসব সড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন।

গত ১৫ জুন সিলেটে দ্বিতীয় দফা বন্যা দেখা দেয়। এ বন্যার প্রভাব এখনো কাটেনি। দুর্যোগব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা: এনামুর রহমানের মতে, সিলেটে ১২২ বছরের ইতিহাসে এমন বন্যা হয়নি। বন্যার ভয়াবহতা থেকে রেহাই পায়নি নগরীর প্রধান সড়কগুলো। অধিকাংশ সড়কে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়ে-সেগুলো মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। একটু বৃষ্টিতে সেই গর্ত কাদাপানিতে হয়ে যাচ্ছে একাকার। ভরা বৃষ্টি মৌসুমের আগে সেগুলো মেরামত না হলে দুর্ঘটনা বেড়ে যাবার আশংকা করছেন সচেতন মহল।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নাইওরপুল থেকে মিরাবাজার পর্যন্ত কিছু স্থান ভালো থাকলেও দাদাপীরের মাজার এবং ফরহাদ খা’র পুল পর্যন্ত সড়কের অবস্থা বেহাল। জনবহুল এ সড়কের বিভিন্ন স্থানে ছোট বড় অনেক গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে প্রতিনিয়িত ঘটছে একের পর এক ছোট বড় দুর্ঘটনা। খাদিমপাড়ার সিএনজি অটোরিকসার চালক সুজন মিয়া, ফিরোজসহ কয়েকজন চালক বলেন, বন্যার আগ থেকেই এই সড়কের বেহাল দশা। আর বন্যার সময় এই সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল করায় বর্তমানে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সংস্কার না হওয়ায় সড়কটি শুষ্ক মৌসুমে ধুলায়, বৃষ্টি হলে কাদায় একাকার হয়ে যায়। সড়কটি স্থানে স্থানে ইট, সুরকি, পিচ উঠে মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মেরাজ হোসেন বলেন, প্রতিদিনই গর্তে ছোট ছোট যানবাহন পড়ে গিয়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। আর নষ্ট হচ্ছে সিএনজি অটোরিকসা এবং লেগুনা। শুধু রাতে নয়, দিনের বেলাতেও সব ধরণের যানবাহনকে সতর্কতার সাথে চলাচল করতে হয়।

আরো নাজুক অবস্থা টিলাগড় সড়কের। টিলাগড় মূল পয়েন্টে দেখা গেছে, অনেকগুলো বড় গর্ত। গর্ত মাড়িয়ে এমসি কলেজ পর্যন্ত কিছুটা স্থান ভালো হলেও সরকারি কলেজ থেকে নূরপুর পর্যন্ত পুরোটা সড়কই বিপর্যন্ত। অথচ জনগুরুত্বপুর্ণ এ সড়ক দিয়ে যেতে হয় পর্যটন কেন্দ্র জাফলং এবং সারিনদী এলাকায়।

এমসি কলেজের সেজুতি, সুমি, মালিহাসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, ‘বন্যার পর থেকে সড়কটি আরো বেশী খারাপ হয়ে পড়েছে। মেরামত না করায় গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি বড় বড় খানা খন্দে পরিণত হয়েছে। বৃষ্টির আগে রীতিমত পায়ে হাঁটাও কঠিন হয়ে পড়েছে। আর বৃষ্টি হলে তো দুর্ভোগের সীমা থাকবে না।’

নগরীর ভেতর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক আম্বরখানা থেকে টিলাগড়। এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কয়েকশ’ সিএনজি অটোরিকসা এবং রাতের বেলা মালবাহী ট্রাক চলাচল করে। সড়কটির আম্বরখানা থেকে শাহী ঈদগাহ পর্যন্ত অংশের অবস্থা ভালো হলেও ঈদগাহ থেকে টিলাগড় পর্যন্ত অংশের অবস্থা নাজুক। ভাঙ্গা রাস্তায় লোকজনকে অনেকটা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়।

এছাড়া, নয়াসড়ক-কাজীটুলা সড়কেরও স্থানে স্থানে দেখা দিয়েছে বড় ভাঙ্গন।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ফটকের সম্মুখ সড়কেরও বেহাল দশা। বন্যার পর এই সড়ক ধরে তালতলা পর্যন্ত অনেকগুলো গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। একই অবস্থা জল্লারপাড় থেকে জিন্দাবাজার সড়কের। দিনেরবেলা রিক্সা নিয়ে চলাচল করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। হাছান মার্কেটের ৫ নম্বর গেইট থেকে উসমানী উদ্যান পর্যন্ত সড়কের অবস্থাও করুণ। দুই মিনিটের এই সড়কে বড় বড় অনেকগুলো গর্ত মাড়াতে হয়। রাতের বেলা প্রায়সময় এ সড়কে ঘটছে দুর্ঘটনা।

মিরের ময়দান বেতারের মূল ফটকের প্রাঙ্গণেও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সেই ভাঙ্গন মাড়িয়ে সুবিদবাজার, পাঠানটুলা, মদিনা মার্কেট, টুকেরবাজার অভিমুখে একইভাবে রয়েছে অনেকগুলো গর্ত। এছাড়া, হকার মার্কেট, লালদীঘি ও কালিঘাট সড়কেরও অবস্থাও খারাপ। এক কথায়, বন্যার পর পুরো সিলেটের অধিকাংশ সড়কের চিত্রই নাজুক।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেট চ্যাপ্টারের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বেশ কিছুদিন হয়ে গেলো নগরী থেকে পানি নেমেছে। এরপর পুরো নগরীর সবগুলো সড়কের চিত্র পাল্টে গেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সিটি কর্পোরেশন কিংবা সড়ক বিভাগ গর্ত ভরাট করতে তাৎক্ষণিক কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।’

যোগাযোগ করা সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বন্যায় সিলেট জেলায় ১৭টি সড়কের ১৬৬ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা খারাপ। ইতোমধ্যে চলাচলাচলের উপযোগী করে তোলার জন্য এসব সড়কে গর্ত ভরাটেরও কাজ চলছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পানি নেমে যাবার পর আমরা একটি প্রাক্কলন তৈরী করেছি। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করতে পারবো।

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানান, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইতিমধ্যে সিলেটের বিভিন্ন দপ্তরের প্রকৌশলীদের নিয়ে তারা বৈঠক করেছেন। বন্যার পর সড়কসহ অনেকগুলো সমস্যা আমাদের সামনে দাঁড়িয়েছে। সেই সমস্যাগুলোর টেকসই সমাধানের জন্য বৃষ্টি শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

মেয়র বলেন, দিনে কাজ শুরু করলে রাতে আবার বৃষ্টি হবে না, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। রোববার রাতের উদাহরণ দিয়ে মেয়র বলেন, প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন ওই রাতে কয়েক দফায় ১৬৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছেএ অবস্থায় সড়কের কাজে হাত দেয়া মুশকিল বলে মন্তব্য করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, গত জুন মাসে সিলেটে ১৪৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। সিলেটে বৃষ্টিপাতের ক্ষেত্রে এটা ছিল ৬২ বছরের মধ্যে রেকর্ড।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *