Main Menu

বিদ্যুৎ সরবরাহ অপ্রতুল, বিপর্যস্ত লোডশেডিং শিডিউল

নিউজ ডেস্ক:
এলাকা বিত্তিক সিডিউল অনুযায়ী বিদ্যুতের লোডশেডিং ব্যবস্থা চালু করার শুরুতেই সিলেটে শুরুতেই বিপর্যয় দেখা দিয়েছে লোডশেডিংয়ের সিডিউলে। দিনের অর্ধেক সময়ই বিদ্যুৎ থাকছে না সিলেট নগরী সহ জেলার বিভিন্ন এলাকায়। এতে করে বিদ্যুৎ নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন সিলেটবাসী। তবে সংশ্লিস্টরা দাবী করেছেন, বিদ্যুতের চাহিদার তুলনায় অর্ধেক সরবরাহ পাওয়ায় লোডশেডিংয়ের সিডিউলে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।

সিডিউল মানতে না পারার কথা স্বীকার করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিব) সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদির বলেন, আমাদেরকে চাহিদার ৭০ শতাংশ সরবরাহ ধরে সিডিউল করতে বলা হয়েছিলো। সে অনুযায়ী আমরা এলাকাভেদে ৩ থেকে ৪ ঘন্টা লোডশেডিং রেখে সিডিউল করেছিলাম। কিন্তু এখন অর্ধেক সরবরাহই পাচ্ছি না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সিডিউল মানতে পারছি না।

তিনি বলেন, বুধবার দুপুরে সিলেট জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিলো ১৫৬ মেগাওয়াট, কিন্তু পেয়েছি ৭৮ মেঘাওয়াট। অপরদিকে। আর বিভাগে চাহিদা ২২৬ মেঘাওয়াটের বিপরীতে পেয়েছি ১১৪ মেঘাওয়াট। ফলে ৫০ শতাংশ লোডশেডিং করতে হচ্ছে। একারণে সিডিউলে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।

সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী দিলীপ চন্দ্র চৌধুরী সিডিউল মানতে না পারার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, বুধবার সকালে আমাদের চাহিদা ছিলো ৭২ মেঘাওয়াট। সরবরাহ পেয়েছি ৩৮ মেগাওয়াটের মতো। ফলে অর্ধেকের মতো সরবরাহ পাচ্ছি। এমন হলে তো ১২ ঘন্টা লোডশেডিং করতেই হবে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অনেক কম পাওয়ায় সিডিউলও হেরফের করতে হচ্ছে। সিডিউল মানা মানা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। একারনেই দিনে ৮/৯ ঘন্টা লোডশেডিং করতে হচ্ছে বলে।

তিনি বলেন, লোড একটু বেশি হয়ে গেলেই গ্রিড লাইন থেকে ফোন করে লোড কমাতে বলে। তাদের কথামতো সাথে সাথে না কমালে আমাদের পুরো সরবরাহ বন্ধ করে দেবে। ফলে আমরাও অসহায়। জনগনের দুর্ভোগ হচ্ছে বুঝতে পারছি, কিন্তু কিছু করতে পারছি না।

কেবল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর আওতাধিন এলাকা নয়, এই চিত্র পুরো সিলেটের। প্রথম দিন থেকেই মানা হচ্ছে না এলাকা ভিত্তিক লোডশেডিংয়ের সিডিউল। বরং সিডিউলে নির্ধারিত সময়ের চাইতে ৩ থেকে ৪ গুণ বেশি লোডশেডিং করা হচ্ছে। ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন গ্রাহকরা।

বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে উৎপাদন স্থগিত রেখেছে সরকার। ১৮ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।ওই সভায় মঙ্গলবার থেকে দেশে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং শুরুরু সিদ্ধান্ত হয়।

বৈঠক শেষে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, প্রথমে একঘন্টা করে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং করা হবে। তাকে সঙ্কট না মিলবে ঘন্টা করে লোডশেডিং শুরু হবে।

সরকারের এমন সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও সিলেটে প্রথমদিনেই এলাকাভদে ৩/৪ ঘন্টা করে লোডশেডিংয়ের সময় নির্ধারণ করে সিডিউল তৈরি করে বিদ্যুৎ বিভাগ। তবে প্রথমদিন থেকে নিজেদের তৈরি এই সিডিউল মানতে পারছে না তারা।

সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার অষ্ট্রগ্রাম এলাকার সায়মা আক্রার নামে এক এসএসসি পরীক্ষার্থী আক্ষেপ করে বলে, সন্ধ্যা হলেই বিদ্যুৎ চলে যায়। গভীর রাত পর্যন্ত থাকে না। একে তো বিদ্যুৎহীনতা তার উপর তীব্র গরমের কারণে রাতে একেবারে পরাশোনা করা যায় না।

সায়মা নামে অপর শিক্ষার্থী বলেন, বন্যার কারণে অনেকদিন পড়ালেখা করতে পারিনি। এখন পানি কমলেও লোডশেডিংয়ের কারণে পড়ালেখা ব্যাহত হচ্ছে।

নগরের উপশহর এলাকার গৃহিনী নাজমা বেগম বলেন, আমাদের এখন তিন ধরণের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পানি, গরম আর বিদ্যুৎ। বৃষ্টি হলেই ঘরে পানি ঢুকে যায়। গরম তো সবসময় আছেই। আর দিনের বেশিরভাগ সময় বিদ্যুৎ থাকছে না। ফলে ঘরে টেকাও দায়।

তবে শহরের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং বেশি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গ্রাহকরা। এসব এলাকায় পিক আওয়ারে বিশেষত রাতে বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুতের দাবিতে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভও করছেন গ্রাহকরা। সোমবার রাতে সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে ওসমানীনগর এলাকার পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকরা।

ওসমানীনগরের গোয়ালাবাজার এলাকার জাকির হোসেন বলেন, বিদ্যুতের দুর্ভোগ অসহনীয় পর্যায়ে পৌচেছে। দিনের বেকশিরভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। কোন সিডিউলই মানা হচ্ছে না।

চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ না পাওয়ার কথা জানিয়ে সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর মহাব্যাবস্থাপক সঞ্জীব কুমার রায় বলেন, আমরা চাহিদার ৬০ % বিদ্যুৎ পাচ্ছি। বিশেষত পিক আওয়ারে সরবরাহ সবচেয়ে কম মিলছে। মঙ্গলবার রাতে আমাদের চাহিদা ছিলো ৮৮ মেগাওয়াট। সরবরাহ পেয়েছি মাত্র ৩০ মেঘাওয়াট। বুধবার সকালে চাহিদা ছিলো ২৫ মেঘাওয়াট। পেয়েছি ১৫/১৬ মেঘাওয়াট।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *