Main Menu

বানিয়াচংয়ে প্রকোপ বাড়ছে সর্দি-জ্বরের

নিজস্ব প্রতিবেদক:
হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার ঘরে ঘরে সব বয়সী মানুষ সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন শত শত রোগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিক ও বাজারের ফার্মেসীতে গিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করছেন। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়ার পাশাপাশি করোনা পরীক্ষার পরামর্শ দিলেও পরীক্ষা করতে অনেকেই অনাগ্রহী বলে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে জানতে বানিয়াচং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইউএইচ এন্ড এফপিও ডাক্তার শামীমা আক্তারের মোবাইল ফোনে কল দিয়ে সাড়া না পেয়ে সিএইচসিপি দেলোয়ার হোসেন নিশাতের মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি জানান, ঈদের আগের দিন থেকে ম্যাডামও সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত। নিশাত নিজেও সর্দি-জ্বরে ভোগে বাড়ীতে অবস্থান করছেন বলে জানান।

পরে বানিয়াচং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডাক্তার প্লটো চক্রবর্তী জয়’র মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি জানান, সর্দি-জ্বর-কাশি এসব রোগে আক্রান্ত শত শত রোগী আসছেন হাসপাতালে।

তিনি জানান, বৃহস্পতিবার বহির্বিভাগের পুরুষ সেকশনে তিনি একাই দেড়শত রোগী দেখছেন যাদের দুই তৃতীয়াংশই সর্দি-জ্বর-কাশিতে আক্রান্ত। বহির্বিভাগের মহিলা সেকশন এবং ইর্মাজেন্সি বিভাগে প্রচুর সর্দি-জ্বরের রোগী আসার কথা জানান তিনি।

রোগীদের মধ্যে যাদেরকে ভর্তি করার উপযোগী তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে বাকীদেরকে প্রেসক্রিপশন দিয়ে বাড়ীতে থেকে ঔষধ সেবন করতে বলা হচ্ছে বলেও তিনি জানান। এসব রোগীদেরকে করোনার টেস্ট করার পরামর্শ দেয়া হলেও অনেকেই টেস্ট করাতে আগ্রহী নন বলে জানান ডাক্তার প্লটো চক্রবর্তী।

এ পরিস্থিতিতে তিনি বানিয়াচং উপজেলাবাসীকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহবান জানিয়েছেন। বানিয়াচং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন ইয়াছিন ফার্মেসীর মালিক ইলিয়াছ আলী জানান, ঈদের দু/একদিন আগ থেকে প্রতিদিন জ্বর এবং শরীর ব্যাথা নিয়ে শত শত রোগী হাসপাতালে আসছেন। তিনি ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সবাইকে সতর্ক হওয়ার আহবানও জানিয়েছেন।

বানিয়াচং উপজেলার সুবিদপুর ইউনিয়নের আতুকুড়া গ্রামের বাসিন্দা সাংবাদিক এসএম সুরুজ আলীর একটি ফেসবুক পোস্ট থেকে জানা গেছে, তিনি ঈদের আগেরদিন থেকে জ্বর-সর্দি-কাশিতে ভোগে বাড়ীতে অবস্থান করে চিকিৎসা নিচ্ছেন। করোনা পরীক্ষার স্যাম্পল দেয়ার পর টেস্টে তার করোনা পজেটিভ রিপোর্ট এসেছে।

এদিকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘরে ঘরে সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার খবর পেয়ে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইমেরিটাস অধ্যাপক ডাক্তার এবিএম আব্দুল্লাহ গণমাধ্যমে পরামর্শমূলক লিখা লিখেছেন।

“ঘরে ঘরে সর্দি-জ্বর, প্রয়োজন ছাড়া রোদে বের হবেন না” শিরোনামে লেখায় তিনি উল্লেখ করেন, “আমরা খবর পাচ্ছি, এখন রাজধানীসহ সারা দেশে ঘরে ঘরে সর্দি-জ্বর ও কাশিতে ভুগছে প্রায় সব বয়সী মানুষ। এটা মৌসুমি জ্বর ও ইনফ্লুয়েঞ্জা হতে পারে।

ডেঙ্গু ও করোনা হওয়াও অস্বাভাবিক কিছু নয়। টাইফয়েডের আশঙ্কাও রয়েছে। এটা এখন স্বাভাবিক ও সাধারণ সমস্যা। তার পরও আমি বলব, জ্বর যদি চার-পাঁচ দিন স্থায়ী হয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। চিকিৎসক পরামর্শ দিলে করোনা অথবা ডেঙ্গু পরীক্ষা করান।

সতর্ক থাকার কোনো বিকল্প নেই। সাধারণ সর্দি-জ্বরের পাশাপাশি দেশে এখন করোনা সংক্রমণও চলছে। গত মঙ্গলবার ৯ জনের এবং বুধবার পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ পরিস্থিতিতে যাদের বয়স বেশি, হার্ট, কিডনি, লিভার ও রক্তচাপের সমস্যা আছে; ডায়াবেটিস আছে, তাদের ঝুঁকি বেশি। তাদের কোনোভাবেই স্বাস্থ্যবিধি অবহেলা করা চলবে না।

জটিল পরিস্থিতি নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার আগেই সতর্ক থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, হাসপাতালে যাওয়া মানেই বিড়ম্বনা ও কষ্ট রোগীর স্বজনদের; আর্থিক বিষয়টি তো রয়েছেই। এ জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে কেউ খামখেয়ালি বা ড্যামকেয়ার আচরণ করবেন না।

সর্দি-জ্বর ও কাশি হলে প্রথমে প্যারাসিটামল খেতে পারেন। হালকা গরম পানি দিয়ে কুলি করা যেতে পারে। আদা, এলাচ, জিংক এগুলো ব্যবহারে উপকার পাওয়া যেতে পারে। এন্টি হিস্টামিনজাতীয় ওষুধও খেতে পারেন। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক নেবেন না। সর্দি-জ্বর ঘরে ঘরে হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এটি মারাত্মক কিছু নয়।

কিন্তু সাধারণ সর্দি-জ্বর না হয়ে করোনাও হতে পারে। অনেকে সাধারণ সর্দি-জ্বর মনে করে করোনা পরীক্ষা করাতে চান না। করোনা হলেও অঘটন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ঘটে না। ঘরে থেকে চিকিৎসা নিয়ে বেশির ভাগ রোগীই সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। তার পরও অবহেলা বিপদ ডেকে আনতে পারে।

সর্দি-জ্বরের অস্বস্তিকর অবস্থা থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখতে হলে বাইরে বের হওয়া কমাতে হবে। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাইরে রোদের মধ্যে বের হওয়া চলবে না। এখন আবহাওয়াও অনুকূল নয়। প্রচণ্ড গরম। অনেকে এই গরমে রাস্তাঘাট থেকে শরবত, আইসক্রিম ও নানা ধরনের ঠাণ্ডা পানীয় পান করেন। এটা করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

বাচ্চারা যেন বাইরে রোদের মধ্যে ঘোরাঘুরি, দৌড়াদৌড়ি, লাফালাফি না করে সে বিষয়ে নজর রাখতে হবে। আবারও বলছি, স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে শুধু করোনা থেকে রক্ষা নয়, সর্দি-জ্বরসহ নানা ধরনের রোগ-ব্যাধি থেকেও নিরাপদ থাকা সম্ভব। মাস্ক ব্যবহার আমাদের অনেক রোগ-ব্যাধি থেকে রক্ষা করতে পারে। বিশেষ করে সর্দি-কাশি, অ্যাজমা—এসব রোগ থেকে মাস্ক আমাদের নিরাপদ রাখতে পারে।”






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *