Main Menu

সিলেটে ভারী বৃষ্টি, ফের বন্যার অবনতির শঙ্কা!

নিউজ ডেস্ক:
গত ১৫ জুন থেকে উজানের ঢল আর ভারী বর্ষণে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত পুরো সিলেট বিভাগ। বিশেষ করে সিলেট জেলার ৮০ ভাগ এবং সুনামগঞ্জের ৯০ ভাগের বেশি এলাকা প্লাবিত হয় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায়।এরপর গত কয়েকদিন ধরে পানি ধীর গতিতে নামলেও প্লাবিত রয়েছে বেশিরভাগ এলাকা। ফলে অনেকে এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে দিনাতিপাত করছেন।

এ অবস্থায় বন্যা কবলিত সিলেটবাসীর মনে আবারও ভয় ধরাচ্ছে ভারী বৃষ্টি। মঙ্গলবার (২৮ জুন) দিনভর সিলেটে হালকা বৃষ্টিপাত হলেও রাত ১০টার পর থেকে ভারী বৃষ্টিতে নগরের অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে।ফলে আবারও বন্যার শঙ্কায় আছেন সিলেটবাসী।

বিশেষ করে মঙ্গলবার রাত ১০টা থেকে ১টা টানা তিন ঘণ্টার ভারী বৃষ্টিতে নগরের অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা বলছেন, আরও কয়েকদিন বৃষ্টিপাত হবে। দিনের তুলনায় রাতে বেশি বৃষ্টি হবে। নদ-নদীর পানিও কিছুটা বাড়বে। এ অবস্থায় উজানে ভারী বৃষ্টি হলে বন্যার পানি ফের বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, রাতের বৃষ্টিতে নগরের অনেক এলাকায় রাস্তাঘাটে পানি জমেছে। ছড়াখালগুলো সুরমার পানির সঙ্গে একাকার হওয়াতে নগরের কিছু এলাকায় আবারও পানি উঠেছে। নগরের তালতলা, উপশহর এলাকার বিভিন্ন ব্লক, তেররতন, যতরপুরসহ নিচু এলাকাগুলো বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে।

নগরের উপশহরের বাসিন্দা সরকারি কর্মকর্তা সাইদুর রহমান বলেন, বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও উপশহরের পানি যেন আটকে আছে। কয়েকদিন যাবত দুর্গন্ধযুক্ত পানি মাড়িয়ে রিকশা যোগে চলাচল করলেও মঙ্গলবার রাতের বৃষ্টিতে ফের পানি বেড়েছে। ফলে তার মতো এই এলাকার বাসিন্দারা ভোগান্তিতে পড়েছেন।

নগরের তালতলার বাসিন্দা জামাল আহমদ বলেন, ৩/৪ দিন বৃষ্টি না হওয়ায় রাস্তার পানি শুকিয়েছিল। বন্যায় বাসা-বাড়ি নিমজ্জিত হওয়ায় অনেকে আসবাবপত্র রোদে শুকিয়েছেন। মঙ্গলবার রাতে আবারও বৃষ্টিতে বাসা-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি উঠেছে। তাই ভোগান্তি পিছু ছাড়ছে না।

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার রনিখাই এলাকার জমির হোসেন বলেন, ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে বাড়িঘর ছেড়ে নগরীর একটি আবাসিক হোটেলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলাম। মঙ্গলবার রাত থেকে ফের বৃষ্টি হওয়ায় ফিরতি বন্যার আতঙ্কে আছি। কেননা, ঘর থেকে পানি নামলেও বাড়ির চারদিকে বন্যার পানি থৈ থৈ করছে।

তিনি বলেন, বাড়ি ফিরেও আয়-রোজগার নেই। অনেকের ঘরে খাবার নেই। অনাহারে-অর্ধাহারে কাটছে। ফের বন্যা হলে কীভাবে কী করব, বুঝতে পারছি না।

গত ১২ মে থেকে সিলেটে দ্বিতীয় দফা বন্যা দেখা দেয়। এর আগে প্রথমদফা বন্যায় সুনামগঞ্জের হাওর ডুবিয়েছে। আর এবার তৃতীয় দফা বন্যায় সবকিছু হারিয়ে অস্তিস্ব সংকটে পড়েছে মানুষজন।

এদিকে, গত কয়েক দিনে সুরমার পানি যখন কিছুটা কমে আসছিল, তখন চোখ রাঙাচ্ছে কুশিয়ারা নদী। এ নদীর পানি বেড়ে গিয়ে সিলেটের আরও ৬টি উপজেলা এবং মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা প্লাবিত হয়েছে।

সিলেট পাউবো সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার (২৮ জুন) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহমান ছিল। আমলশীদে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ১২৪ সেন্টিমিটার ওপরে, কুশিয়ারার পানি বিয়ানীবাজারের শেওলা পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার এবং ফেঞ্চুগঞ্জে কুশিয়ারার পানি বিপৎসীমার ১০৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। যে কারণ ওইসব এলাকায় ফের বন্যার পানি বাড়তে শুরু করেছে।

সিলেট পাউবোর উপ-প্রকৌশলী নিলয় পাশা বলেন, আগামী কয়েকদিন বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে। এতে পানি বাড়বে কি না, আগেই বলা যাচ্ছে না। আর উজানে ভারী বৃষ্টি হলে সিলেটে পাহাড়ি ঢল নামতে পারে।

এদিকে, সিলেট ও সুনামগঞ্জের বিস্তুীর্ণ এলাকা প্লাবিত থাকায় অনেকে আশ্রয় কেন্দ্রে থাকছেন। যাদের আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই হয়নি তারা বিভিন্ন উঁচু সড়কের পাশে ত্রিপল, পলিথিন আর বাঁশ দিয়ে তাবু বানিয়ে গবাদিপশু নিয়ে বসবাস করছেন।

এবারের বন্যায় সিলেট নগরের অর্ধেকাংশ, ৫টি পৌরসভা, জেলার ১৩ উপজেলার ১০৫টি ইউনিয়নের মধ্যে ৯৯টিই বন্যা কবলিত হয়। বিশেষ করে বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর, ফেঞ্চুগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ, জকিগঞ্জ, জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাটের অসংখ্য গ্রাম এখনো পানিতে তলিয়ে আছে। রাস্তাঘাট নিমজ্জিত হয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। অনেক এলাকার পানি অল্প কমলেও অন্তহীন দুর্ভোগে পড়েছেন লোকজন।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, সিলেট বিভাগে এবার প্রায় অর্ধকোটির বেশি মানুষ বন্যা কবলিত হয়েছেন। এর মধ্যে সিলেট জেলায় বন্যায় চার লাখ ১৬ হাজার ৯৬৬টি পরিবারের ২১ লাখ ৯৬ হাজার ৯৬৫ জন মানুষ বন্যাক্রান্ত হয়েছেন। তাদেরমধ্যে ৩০ হাজার ৯৪০টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিভাগজুড়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *