Main Menu

হবিগঞ্জে ২০ কোটি টাকার মাছ জলে ভেসে গেল লন্ডন প্রবাসীর

নিউজ ডেস্ক:
হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার কাটখাল গ্রামের লন্ডন প্রবাসী উদ্যোক্তা খান ডেইরি ফার্ম অ্যান্ড ফিসারির মালিক মাওলানা লুৎফুর রহমান। প্রবাসের আরাম জীবন ছেড়ে এলাকার মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য গড়ে তুলেন বিশাল খামার। করোনার শুরুতে লোকসানের মুখে পড়ে পুঁজি হারান তিনি। পরে ব্যাংক থেকে প্রণোদনার ঋণ নিয়ে নতুন আশায় খামারটি সাজান।

কিন্তু বানের জলে ভেসে গেছে তার ফিসারির প্রায় ৫ লাখ টাকার মাছ। গরু রাখার শেডেও পানি। সবকিছু মিলে হতাশার মাঝে সময় কাটছে তার।
মঙ্গলবার সরেজমিন তার খামারে গিয়ে দেখা যায়, ফিসারির মাছ হাওরে বেরিয়ে গেছে। গরুগুলো শেড থেকে বের করে উঁচু স্থানে রাখা হয়েছে। খামারের আশপাশের সব পুকুর ডুবে গেছে। লুৎফুর রহমানে মতো সবার মুখ মলিন। কিভাবে এই লোকসান কাটিয়ে উঠবেন এ নিয়ে তাদের চিন্তার শেষ নেই।

লুৎফুর রহমান জানান, যারা মাছ চাষ করেছে এমন কারো পুকুর অক্ষত নেই। গবাদিপশুর দেখা দিয়েছে খাদ্য সমস্যা। গ্রামের সবাই দেশি ষাঁড় ও গাভী পালন করেন প্রাকৃতিক খাবার দিয়ে। কিন্তু তৃণভূমি ও ধানের খড়ের স্তুপ পানির নিচে চলে যাওয়ায় খাবার সমস্যায় সবাই দিশেহারা।

মিন্নত আলী জানান, গরু রাখার স্থানে পানি আসায় কম দামেই ৪টি গরু বিক্রি করে দিয়েছেন। অথচ কোরবানির বাজারে এই গরু অনেক দামে বিক্রি হবে ভেবে সেগুলো লালন-পালন করছিলেন তিনি।

মঙ্গলবার সকালে হবিগঞ্জ শহরের শায়েস্তানগর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, অনেক লোকজন তাদের হাঁস-মুরগি নিয়ে এসেছেন বিক্রি করতে। বিক্রেতা বেশি থাকায় অন্য সময়ের চেয়ে কম দামেই বিক্রি হচ্ছিল। বহুলা গ্রামের আব্দুর রহিম জানান, তার ঘরের ভিতর পানি চলে আসায় ঘরে থাকা ১০টি দেশি মোরগ নিয়ে আসেন বিক্রির জন্য। অন্যসময় সেগুলো ৪ হাজার টাকা বিক্রি হলেও তিনি কম দামে ২৫০০ টাকায় বিক্রি করেছেন।

মঙ্গলবার বিকেলে হবিগঞ্জ শহরের গরু বাজারে ছিল সাপ্তাহিক হাট। শহরতলীর রিচি, লুকড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের পানিবন্দি লোকজন গরু নিয়ে আসেন বিক্রি করার জন্য। তবে সেখানে ক্রেতার সংখ্যা কম থাকায় তেমন বেচা-কেনা হয়নি।

হবিগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, বন্যায় জেলার ২ হাজার ৫৫৩টি পুকুর ডুবে মাছ হাওরে ভেসে গেছে। এসকল পুকুরের আয়তন ৫০১ হেক্টর। পুকুর মালিকদের ক্ষতির পরিমাণ ১৯ কোটি ৯৫ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা।

জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. প্রকাশ রঞ্জন বিশ্বাস জানান, বন্যার কারণে জেলার ৫ হাজার গরুর খামার মালিকের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। একদিকে গো খাদ্য সংকটে পশুর ওজন হ্রাস হওয়া অন্যদিকে বন্যায় মানুষের ক্রয়-ক্ষমতা কমে গেলে কোরবারির হাটে ভালো দাম না পাওয়ার শঙ্কা বিরাজ করছে। বন্যায় জেলায় ৫২ লাখ টাকা মূল্যের ১৩০ টন ধানের খড় এবং ৩৬ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা মূল্যের তৃণ নষ্ট হয়েছে। বন্যায় প্রচুর গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগির মৃত্যু হয়েছে।

মাধবপুর উপজেলার আন্দিউড়া গ্রামে অবস্থিত জেলার সবছেয়ে বড় গবাদি পশুর খামাড়ের মালিক মোন্তাকিম চৌধুরী বলেন, করোনার পর বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে এই বন্যা। এবার বোরো মৌসুমে ভালো ফসল হওয়ায় সবাই আশায় ছিলেন কোরবানির বাজারে ভালো দামে পশু বিক্রি হবে। এখান দাম কমার পাশাপাশি গবাদী পশুর খাদ্য সংকটের মুখোমুখি হতে হচ্ছে আমাদের।

এদিতে টানা বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জেলার আক্রান্ত এলাকা বেড়ে হয়েছে ৬টি উপজেলার ৪৫টি ইউনিয়ন। জেলার ১৭৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ১৩ হাজার ২৮৯ পরিবার। সরকারিভাবে পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা ১৬ হাজার ৮৫টি। বাস্তবে জেলার অর্ধেকের বেশি এলাকা বন্যায় আক্রান্ত।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার পৌরসভাসহ সকল ইউনিয়ন, নবীগঞ্জ উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন, বানিয়াচং উপজেলার সকল ইউনিয়ন, লাখাই উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন, হবিগঞ্জ সদর উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন এবং বাহুবল উপজেলার ১টি ইউনিয়ন বণ্যাকবলিত হয়েছে। সরকারিভাবে মঙ্গলবার পর্যন্ত ১০ লক্ষ টাকা, ১৪৫ মেট্রিক টন চাল এবং ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্ধ করা হয়েছে দুর্গতদের জন্য। এ ছাড়া বন্যাদুর্গতদের জন্য ২৯টি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে।

কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী বন্যার পানিতে ১৫ হাজার ৭১০ হেক্টর আউশ, ১৪ হাজার ৬৩০ হেক্টর বোনা আমন, ১ হাজার ৫৯৭ হেক্টর জমির শাকসবজি এবং অন্যান্য ফসল ৫০ হেক্টর বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মিনহাজ আহমেদ শোভন জানান, কুশিয়ারা নদীর পানি মঙ্গলবারও ৮.৩৩ মিটারে স্থির আছে। কখনও এক সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেলে আবার এক সেন্টিমিটার কমে যাচ্ছে। তবে এই পানিতেই নবীগঞ্জ ও আজমিরীগঞ্জ উপজেলার লোকালয়ে বন্যার পানি আরো বাড়বে। সোমবার রাত পর্যন্ত হবিগঞ্জ শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত খোয়াই নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলেও মঙ্গলবার তা বিপদসীমার নিচে চলে গেছে।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *